ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

পরিবারের উন্নয়নে নারীর হাতে টাকা রাখাই উত্তম: অর্থ উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:২১ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নারীরা সবচেয়ে উদ্যোগী ও কর্মঠ। টাকা-পয়সার হিসাব রাখতে পারদর্শী। পুরুষরা টাকা পেলে অনেক কিছুই করে, তাই পরিবারের উন্নয়নে নারীর হাতে টাকা রাখাই উত্তম।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহ্‌রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের দারিদ্র্য হ্রাসের অগ্রগতি গত কয়েক দশক ধরে উল্লেখযোগ্য হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা উল্লেখযোগ্যভাবে মন্থর হয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ এখন লাখ লাখ মানুষকে আবার দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ২০২২ সালের পর থেকে দারিদ্রের পরিমাণ বাড়ছে। প্রায় ৯০ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে।

তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে যথাযথভাবে পৌঁছাতে পারছে না। যাদের পাওয়ার কথা না তারাও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পাচ্ছেন। দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকা ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠী সরকারের কোনো না কোনো ভাতা পাচ্ছে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দরিদ্র একটা কঠিন বিষয়, কমপ্লেক্স। আমাদের দেশে বহু দরিদ্র জনগণকে দেখলেই বোঝা যাবে দরিদ্র। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী বা আমি বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি উত্তরাঞ্চলের, ইভেন বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুরের বহু মানুষ অর্ধেক সময় পানিতেই থাকে। এরকম খারাপ একটা জায়গা আছে যেখানে একেবারে স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা। অতএব দরিদ্র দূর করা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে বাংলাদেশে একটা ভালো রেকর্ড হলো দারিদ্রতা কমে, আমি বলব সাফল্য। ক্রমাগত, বিশেষত ২০১০ থেকে শুরু করে ক্রমাগত কমেছে।

তিনি বলেন, এখন ২০২২ থেকে হঠাৎ করে আবার একটু রিভার্স করেছে। তবে দারিদ্রের দুইটা দিক আছে- একটা আমরা সাধরণতা বলি স্টেট, মানে অবস্থান। আরেকটা হলো প্রসেস। এখন আমাদের যেটা আছে প্রথম স্টেট। এত বেশি দরিদ্র যে এটাকে তো ট্যাকেল করতে হবে প্রথম। আর প্রসেসটা দরিদ্র কিন্তু রোজগার জেনারেট হচ্ছে, দিন দিন বাড়ছে। আমাদের এত বড় একটা সংখ্যা যে জন্য আমাদের চ্যালেঞ্জটা একটু বেশি। অর্থাৎ নিশ্চিত প্রসেসে একটু গলদ আছে। গলদ না থাকলে তো আরেকটু কমতো, আরো বেশি কমতো। মাঝখানে রিভার্স হতো না।

তিনি আরও বলেন, আমি মনেকরি সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা বাস্তবায়নে। আমাদের এখানে বাস্তবায়ন এত খারাপ, এত ভালো ভালো ডিজাইন হয়, কিছু ডিজাইন খুবই ভালো কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। এই জিনসটাকে আমাদের উন্নতি না করলে, আমাদের জন্য ডিফিক্যাল্ট হবে। দুর্নীতি আছে, আমাদের আইনের কিছু গলদ আছে, আমাদের প্রক্রিয়ায় কিছু গলদ আছে। যাই হোক, আমার মনে হয় আমাদের প্রোগ্রেসটা এখনো মোটামুটি ভালো।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এসডিএফ’র প্রজেক্টটা মোটামুটি ভালো। নারীরাই কিন্তু সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী এবং সবচেয়ে বেশি কর্মঠ। আর টাকা-পয়সা হিসাব রাখতে সবচেয়ে বেশি পারদর্শী। পুরুষদের কাছে টাকা গেলে তো অনেক কিছুই করে। ভারতে স্টাডি হয়েছে দক্ষিণের দিকে পুরুষরা টাকা পেলে নাকি মদ্যপান করে, সব টাকা তারা খেয়ে ফেলে। এ জন্য নারীর কাছে টাকা দেওয়াটাই বেটার। কারণ নারীরা ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের দিকে নজর দেয় সব সময়। আর পুরুষরা করে কী নিজেরটা দেখে।

এসময় তিনি একটি গল্পও বলেন। সালেহউদ্দিন বলেন, আমাদের বাড়ি ছিল। আমরা যেখানে থাকতাম দূরে বস্তি ছিল। বস্তিতে থাকা একজনের স্ত্রী আমাদের বাসায় কাজ করতো। আমার আম্মাকে এসে বলতো দেখেন তো আমার হাজবেন্ড বেতন পাওয়ার পরে, সে সকালে নাস্তা খেতে চলে যায় দোকানে। বলে তোমারটা তুমি বুঝো, আমারটা আমি বুঝলাম। স্ত্রী তখন অন্য বাড়িতে কাজ করে, সে ভদ্রলোক চাকরি করতো, খাওয়া-দাওয়া করতো হোটেলে, নাস্তা করতো হোটেলে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, একটা বিষয় উঠে আসছে শহরে দারিদ্র্য বাড়ছে। তবে ফোকাসটা শহরের ওপর দেওয়ার চেয়ে আমি মনে করি সার্বিকভাবে বিকেন্দ্রীকরণ উন্নয়ন করা। শহরের দরিদ্রের ওপর বেশ নজর দিলে পুল ফ্যাক্টর আসবে। শহরের নজর দেওয়ার দরকার আছে, তবে গ্রামের বেশি নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, অনেক সময় যারা দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি থাকে, একটু উপরে উঠে হঠাৎ করে ঝড়-ঝাপটা বা কিছু হয় আবার নিচে নেমে যায়। এমন ওঠা-নামার থেকে বেটার হলো উঠে যেন স্থিতিশীল হয়। সেটাই সরকারের চ্যালেঞ্জ, আমাদের সবার চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জটা যেন আমরা মোকাবিলা করতে পারি। এই প্রত্যয়টা নিয়ে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি।

এমএএস/এমএএইচ/