বেসিকের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। শিগগিরই এই মামলা করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের সবুজ সংকেতও মিলেছে বলে সূত্রের দাবি।
সূত্র বলছে, ঋণ অনিয়মের কারণে সমস্যাকবলিত বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর নিয়ম বহির্ভূত নন-ব্যাংকিং কার্যক্রমের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে আর কোনো সমস্যা হবে না। একই সঙ্গে অর্থ আদায়ে ভুয়া ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।
জানা গেছে, সরকার মনে করছে, বেসিক ব্যাংকে হরিলুট হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতরা যত প্রভাবশালীই হোক, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা, শান্তিনগরসহ কয়েকটি শাখা থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ অনিয়মের তথ্য উঠে আসে। ঋণের নামে এ অর্থ মূলত ব্যাংক থেকে লোপাট হয়ে যায়। ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত এ অনিয়ম হয়। অনিয়মের কারণে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি অনেক বেড়ে গেছে। ব্যাংকটির বিদায়ী চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর কারণে এমনটি হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে।
সূত্র বলছে, প্রাথমিকভাবে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তদন্তে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাবেক চেয়ারম্যান প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি বলেন, শুধু আবদুল হাই বাচ্চু কেন, যত ক্ষমতাশালী ব্যক্তিই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। এরই মধ্যে নতুন পরিচালনা পর্ষদ কোথায় কীভাবে দুর্নীতি হয়েছে, তার একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।
সূত্রে জানা গেছে, বেসিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর নির্দেশে বেনামে ঋণ বিতরণ ছাড়াও বাড়ি ভাড়া, আমানত সংগ্রহ, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ-বদলির ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করেছে বলে তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিভিন্ন খাতে ব্যাপক দুর্নীতির হালনাগাদ সরকারের কাছে পাঠিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা মঙ্গলবার জাগো নিউজকে বলেন, সংগত কারণে বেসিক ব্যাংকের অনিয়মের তথ্য উদ্ঘাটনের শুরুর দিকে দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। তবে খুব শিগগিরই মামলা হবে। সরকারের সবুজ সংকেত কিছুটা মিলেছে। এখন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
অনুসন্ধানের তথ্যের বরাত দিয়ে বেসিক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় ৭০০ জনবল বেশি নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিন থেকে সাত লাখ টাকা নিয়ে এসব কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত তারা ৩৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৪ জনকে চাকরিচ্যুত ও ১৮ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বাকি সাতজনের বিরুদ্ধে অন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এসএ/বিএ/এমএস