কর্মসংস্থান হবে ১ হাজার মানুষের
হবিগঞ্জে প্রাণ-আরএফএলের দ্বিতীয় শিল্পপার্ক
#বিনিয়োগ ৭০০ কোটি
#ওপাল গ্লাসওয়্যার জগতে প্রাণ-আরএফএল
হবিগঞ্জে দ্বিতীয় শিল্পপার্ক স্থাপন করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ-আরএফএল। ওপাল গ্লাসওয়্যার ও কর্কশিট উৎপাদন হবে নতুন এ শিল্পপার্কে। ওপাল গ্লাসওয়্যারের বার্ষিক আনুমানিক ১২শ কোটি টাকার বাজার ধরতে প্রাণ-আরএফএলের বিনিয়োগ প্রায় ৭শ কোটি টাকা। ৪০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় শিল্পপার্কে কর্মসংস্থান হবে প্রায় এক হাজার মানুষের। নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে থাকা শিল্পপার্কটি ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি, রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ, নতুন পণ্য বাজারে আনা, পণ্যের বৈচিত্র্যকরণসহ নানাবিধ কারণে উৎপাদন ফ্যাসিলিটিজ বাড়াচ্ছে প্রাণ-আরএফএল। এরই অংশ হিসেবে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় গড়ে তোলা হচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সবশেষ শিল্পপার্ক হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক-২।

আরও পড়ুন>> রপ্তানিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চায় প্রাণ-আরএফএল
এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক-২ এ ওপাল গ্লাসওয়্যার ও কর্কশিট উৎপাদন করা হবে। ওপাল গ্লাসওয়্যারের জন্য তিনটি ও কর্কশিটের জন্য থাকবে একটি উৎপাদন লাইন। এর মাধ্যমে ওপাল গ্লাসওয়্যারের বাজারে নাম লেখাবে প্রাণ-আরএফএল। বাংলাদেশের বাজারে দিন দিন ওপাল গ্লাসওয়্যারের চাহিদা বাড়ছে। ক্রমাগত বড় হচ্ছে এর বাজার। এ প্রেক্ষাপটে এ খাতে বিনিয়োগ করছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।’
আমাদের অর্থনীতিতে যুবকরাই প্রধান। নতুন কর্মসংস্থান মানেই যুবকরা চাকরি পাবে। নবম-পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় কর্মসংস্থানকে বেশি জোর দেওয়া হবে। ওপাল গ্লাসওয়্যার-কর্কশিট উৎপাদন করবে প্রাণ-আরএফএল। এটা আমাদের গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ভালো।- ড. শামসুল আলম
তিনি আরও বলেন, ‘শিল্পপার্কের কাজ শেষ পর্যায়ে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিত আমরা লঞ্চ করবো। এখানে হাজারখানেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ওপাল গ্লাসওয়্যার-কর্কশিট দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হবে। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও এ পণ্যের চাহিদা আছে।’
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি থেকে পাওয়া তথ্যমতে, প্রাণ-আরএফএল কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিক, ইলেকট্রনিক্স, হালকা প্রকৌশল পণ্য, টয়লেট্রিজ, ফার্নিচার, নন-লেদার আইটেম, মেডিকেল অ্যাপ্লায়েন্সসহ নানা ধরনের পণ্য উৎপাদনের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্পপার্ক ও কারখানা গড়ে তুলেছে। হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক-২ পুরোপুরি চালু হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ওই এলাকার সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে।

আরও পড়ুন>> শায়েস্তাগঞ্জে প্রাণ-আরএফএল’র সহযোগিতায় ৭ কিলোমিটার খাল খনন
ওপাল গ্লাসওয়্যার জগতে প্রাণ-আরএফএল
বর্তমানে ওপাল গ্লাসওয়্যারের বার্ষিক বাজার আনুমানিক ১২শ কোটি টাকা। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ। আমদানি করা পণ্যের ব্যাপক বাজার রয়েছে। মূলত চীন থেকে আমদানি করা হয়। এ খাতে চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দেশের আরও কিছু শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে আকিজ ও বেঙ্গল অন্যতম। পচনশীল দ্রব্য, বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস দ্রব্য ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইটেমে কর্কশিটের ব্যবহার বাড়ায় এ ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে গ্রুপটি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কুমিল্লা কারখানায় কর্কশিট উৎপাদিত হয়। চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক-২ এ আরেকটি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে।
বিনিয়োগ ৭০০ কোটি
এ শিল্পপার্কে প্রাণ-আরএফএল প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। ইক্যুইটি ও লোনের মাধ্যমে এ অর্থের সংস্থান করা হবে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ওপাল গ্লাসওয়্যারের মাধ্যমে উৎপাদন শুরু হবে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক-২ এর। তবে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কর্মসংস্থান হবে ১ হাজার মানুষের
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অন্যতম উদ্দেশ্য গ্রামীণ এলাকার জনসাধারণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। কোনো কারখানা বা শিল্পপার্ক স্থাপনের সময় এ বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয় জ্বালানির সহজলভ্যতা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। এর আগে প্রায় ৩শ একর জমির ওপর হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অলিপুরে গড়ে তোলা হয় হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, যেটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১১ সালে, উৎপাদন শুরু হয় ২০১৩ সালে এবং আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় ২০১৪ সালে।
আরও পড়ুন>> জাতীয় উৎপাদনশীলতা পুরস্কার পেল প্রাণ-আরএফএলের ৩ প্রতিষ্ঠান
এ শিল্পপার্কে বর্তমানে ২৫ হাজার লোক কাজ করছে। গ্যাস সরবরাহ, ভূমির সহজলভ্যতা ও ঢাকা থেকে বেশি দূরে না হওয়ায় দেশের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান হবিগঞ্জে কারখানা গড়ে তুলছে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রাণ-আরএফএল এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম কারখানা স্থাপন করে। প্রাণ-আরএফএলকে অনুসরণ করে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখানে কারখানা স্থাপন করেছে। দ্বিতীয় শিল্পপার্কটি পুরোপুরি উৎপাদনে গেলে প্রায় এক হাজার মানুষের কর্মস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক সহযোগিতায় এক সময়ের অবহেলিত এলাকাটি একটি শিল্পাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রাণ-আরএফএল এ অঞ্চলে শিল্পপার্ক স্থাপনের আগে তেমন শিল্পায়ন না হওয়ায় বেকারত্ব বেশি ছিল। হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের আনুষ্ঠানিক যাত্রার নয় বছরের মাথায় এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমের হাত ধরে। তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সাবেক সদস্য (সিনিয়র সচিব) ছিলেন। নবম-পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।

প্রাণ-আরএফএলের নতুন কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে ড. শামসুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে যুবকরাই প্রধান। নতুন কর্মসংস্থান মানেই যুবকরা চাকরি পাবে। নবম-পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় কর্মসংস্থানকে বেশি জোর দেওয়া হবে। ওপাল গ্লাসওয়্যার-কর্কশিট উৎপাদন করবে প্রাণ-আরএফএল। এটা আমাদের গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ভালো।’
নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্মসংস্থানের জন্য খুবই সহায়ক। উপজেলাগুলোতে শিল্প বেশি সম্প্রসারণ করা উচিত। শ্রমঘন জায়গায় শিল্প-কারখানা বেশি সম্প্রসারিত করা দরকার। নারীদের কর্মসংস্থান বাড়ানো দরকার।- ড. সায়মা হক বিদিশা
তিনি আরও বলেন, ‘এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা মেটাতে আমরা দক্ষ জনবল তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছি। বাস্তবমুখী বাজারভিত্তিক শিক্ষাকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ‘শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২’ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ১৬ লাখ ৯০ হাজার এবং নারী ৯ লাখ ৪০ হাজার।
জরিপে বলা হয়, ২০১৭ সালে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। সবশেষ জরিপে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। ছয় বছর আগের তুলনায় বেকারত্বের হারও কমেছে। বর্তমানে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০১৭ সালে ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ।

পরিবেশবান্ধব উপায়ে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বারোপ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্মসংস্থানের জন্য খুবই সহায়ক। উপজেলাগুলোতে শিল্প বেশি সম্প্রসারণ করা উচিত। শ্রমঘন জায়গায় শিল্প-কারখানা বেশি সম্প্রসারিত করা দরকার। নারীদের কর্মসংস্থান বাড়ানো দরকার।’
‘তবে কর্মসংস্থান যেন পরিবেশ ও শ্রমিকবান্ধব হয়। কর্মসংস্থান যেন টেকসই হয় এ বিষয় মাথায় রাখতে হবে। শিল্পায়ন হলে ভালো পরিবেশ মেনে করতে হবে।’
এমওএস/এএসএ/জিকেএস