ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

ভর্তিতে স্কুল পায়নি সাড়ে ৭ লাখ শিক্ষার্থী, শূন্য থাকছে পৌনে ৯ লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:১২ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশের সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪ জন শিক্ষার্থী। ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৫ হাজার ৪৯৯ জন। আর আবেদন করেও ভর্তির জন্য পছন্দের স্কুল পায়নি ৭ লাখ ৫০ হাজার ৫৫৫ জন।

অন্যদিকে, বিদ্যালয়গুলোতে থাকা ভর্তিযোগ্য ১১ লাখ ৯৩ হাজার ২৮১টি আসনের মধ্যে শূন্যই থেকে যাচ্ছে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮২টি।

ভর্তি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক স্কুলে কোনো আবেদনই জমা পড়েনি। স্বল্পসংখ্যক স্কুলে ভর্তিতে আগ্রহ বেশি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের। ফলে আসন শূন্য থাকলেও সেসব স্কুলের নাম পছন্দের তালিকায় নেই। ফলে সেসব স্কুলে আসন শূন্যই থেকে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ডিজিটাল লটারির কার্যক্রম শুরু হয়। সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থী বাছাই করা হয়। লটারির টেকনিক্যাল বা কারিগরি কাজ চলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। এরপর দুপুর ২টার কিছুক্ষণ পর আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করা হয়।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, প্রথম প্রকাশিত তালিকায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার ৪৯৯ জন। এরমধ্যে সরকারি স্কুলে প্রথম তালিকায় স্থান পেয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৫২১ জন। আর বেসরকারি স্কুলে প্রথম তালিকায় নির্বাচিত হয়েছে বেসরকারি স্কুলে শূন্য আসন ছিল ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৫১টি। এর বিপরীতে আবেদন করে তিন লাখ ৩৬ হাজার ১৯৬ জন। তবে লটারিতে স্কুলে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৯৭ হাজার ৯৭৮ জন। ফলে বেসরকারি স্কুলে আসন শূন্য থেকে যাবে ৮ লাখ ৭৪ হাজার ২৭৩টি আসন।

ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ বছর ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিল ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪ জন শিক্ষার্থী। ভর্তির সুযোগ পেয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার ৪৯৯ জন। আবেদন করেও পছন্দের স্কুল পায়নি ৭ লাখ ৫০ হাজার ৫৫৫ জন।

এদিকে, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট শূন্য আসন ছিল ১১ লাখ ৯৩ হাজার ২৮১টি। সেখানে ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮২টি আসন।

সরকারি স্কুলে শূন্য আসন ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৩০টি। বিপরীতে আবেদন করে ৭ লাখ ১৯ হাজার ৮৫৪ জন। নির্বাচিত হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৫২১ জন। ফলে সরকারি স্কুলে আসন শূন্য থেকে যাবে ১৩ হাজার ৫০৯টি।

অন্যদিকে বেসরকারি স্কুলে শূন্য আসন ছিল ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৫১টি। এর বিপরীতে আবেদন করে তিন লাখ ৩৬ হাজার ১৯৬ জন। তবে লটারিতে স্কুলে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৯৭ হাজার ৯৭৮ জন। ফলে বেসরকারি স্কুলে আসন শূন্য থেকে যাবে ৮ লাখ ৭৪ হাজার ২৭৩টি আসন।

আসনশূন্য থাকলেও ভর্তির সুযোগ মেলেনি যে কারণে
আসন শূন্য থাকলেও পৌনে ৯ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়নি। তারা কোনো স্কুল পায়নি। আসন ফাঁকা থাকলেও শিক্ষার্থীরা কেন স্কুল পায়নি— এমন প্রশ্ন অনেকের।

মাউশির কর্মকর্তারা জানান, আবেদনের সময় শিক্ষার্থীদের একটি আবেদনে পাঁচটি স্কুল পছন্দ দেওয়ার সুযোগ ছিল। অধিকাংশ শিক্ষার্থী একটি বা দুটি করে পছন্দ দিয়েছে। কারণ তারা ওই দুটি স্কুলে ভর্তি হতে চায়। যদি সেখানে না হয়, তাহলে যে স্কুলে বর্তমানে আছে, সেখানেই থেকে যাবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটা ঘটেছে বলে মনে করেন ভর্তি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মাউশির মাধ্যমিক উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, অল্প কিছু স্কুলে সবার ঝোঁক। সরকারির ক্ষেত্রে অনেকগুলো স্কুলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। আর বেসরকারির ক্ষেত্রে একেবারে সীমিত কিছু বিদ্যালয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে— ঢাকার ভিকারুননিসা বা মতিঝিল আইডিয়ালে একটি শ্রেণিতে শূন্য আসন ৫৫টি। সেখানে আবেদন পড়ছে ২০ হাজার এবং অধিকাংশই পছন্দের তালিকায় শুধু ওই একটি স্কুলই দিয়ে রাখছে। ফলে সেখানে ৫৫ জনের সুযোগ মিলছে। বাকি ১৯ হাজার ৪৫ জন আর কোনো স্কুলই পাচ্ছে না। এজন্য স্কুল না পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি।

তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এসব শিক্ষার্থীরা কোনো না কোনো স্কুলে ভর্তি আছে। এজন্য তারা পছন্দের একটি স্কুল দিয়ে আবেদন করছে। ফলে এখানে ভর্তির সুযোগ না পেলে সে যে একেবারে স্কুলই পাবে না, বিষয়টি তেমন নয়। এছাড়া আসনশূন্য থাকা সাপেক্ষে দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করা হবে। সেখানেও নতুন অনেকে সুযোগ পাবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী প্রধান রাশেদা কে চৌধূরী। দীর্ঘদিন তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন। রাশেদা কে চৌধূরী জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষায় পদে পদে বৈষম্য। লটারিতে ভর্তির কারণে সেটা কিছুটা হ্রাস হয়েছে। দেখবেন— আগে নামি স্কুলে আর্থিকভাবে অসচ্ছল বাবা-মা সন্তানকে ভর্তির সাহসই পেতো না। এখন লটারিতে চান্স পেলে সাহস করে সন্তানকে বড় বড় স্কুলেও দিচ্ছে।

‘আবার যেসব শিশুরা প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে, তাদের পরীক্ষা নেওয়া হতো। তারা কী পরীক্ষা দেবে? তাদের ভর্তির জন্য কী মেধা মূল্যায়ন করা হবে? এ কথিত পরীক্ষার নামে তুলনামূলক পড়ালেখায় পিছিয়ে থাকাদের বাদ দিয়ে শুধু মেধাবীদের ভর্তি নেওয়া হতো। এতে একটি স্কুলে শুধুই ভালো শিক্ষার্থী পড়তো, আরেকটিতে শুধুই পিছিয়ে পড়ারা থাকতো। সেদিকে সরকার থেকে শুরু করে সবার নজর কম থাকতো। এ ধরনের কিছু সমস্যা লটারির কারণে দূর হয়েছে’ যোগ করেন রাশেদা কে চৌধূরী।

বর্তমান লটারি পদ্ধতিতেও কিছু ত্রুটি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে লটারি পদ্ধতিকে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ করা যেতে পারে। এতে ভর্তিপরীক্ষার নামে বাণিজ্য বন্ধ হবে। নার্সারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত ভর্তিতে যে টাকার খেলা চলেছে এতদিন, সেটাও কমবে।’

এএএইচ/এমএএইচ/