ভিডিও EN
  1. Home/
  2. একুশে বইমেলা

বই যেভাবে আসে পাঠকের হাতে

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:৫১ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২৫

আবির আহমেদ

বই শব্দটি শুনলেই স্মৃতির ক্যানভাসে ভেসে ওঠে শৈশবের বিশেষ মুহূর্ত। জানুয়ারির কনকনে শীতে স্কুল থেকে নতুন শ্রেণির নতুন বইগুলো ঘরে এনেই পাতার ফাঁকে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নেওয়া। বহুল প্রতীক্ষিত নতুন বই হাতে পাওয়ার রহস্য উন্মোচন করার আগ্রহ বহুদিনের। ভাগ্য নিয়ে এলো রহস্যঘেরা শহরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। যার প্রতিটি গলির পরতে পরতে গল্প। সেই রহস্যময়ী গল্পকেই উন্মোচন করতে চলে গেলাম বাংলাবাজার। চিরচেনা বই তৈরির কারখানার গলিতে।

বাংলাবাজার: যেখানে জ্ঞান জন্ম নেয়

পুরোনো থেকে নতুন, ধর্ম থেকে দর্শন, শৈশব থেকে প্রবীণ; সব ধরনের বইয়ের স্তূপ চোখে পড়লো। কিছুটা এগোতেই চোখে পড়লো বিশাল প্রিন্টিং প্রেসের গুঞ্জন। পরিচয় দিয়ে চলে গেলাম প্রেসের ভেতরে। শৈশবের বহুল প্রতীক্ষিত রহস্য উন্মোচন করতে—কীভাবে তৈরি হচ্ছে বই!

এক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল বই তৈরির প্রাথমিক ধাপগুলো। তাদের কাছে কাগজের বিশাল রোল এলে একজন শ্রমিক সেগুলোকে মেশিনে বইয়ের আকার অনুসারে সূক্ষ্মভাবে কেটে নেন। এরপর শুরু হয় রঙের প্রলেপের পালা। অন্য একজন সেই কাটা কাগজগুলো নিয়ে যান অন্য একটি মেশিনে। সেখানে বিভিন্ন রঙের নিপুণ ব্যবহারে ছাপা হতে থাকে। মেশিনটির অন্য এক পাশ থেকে তখন প্রস্তুত হয়ে বের হয়ে আসছে ছাপানো ফর্মাগুলো।

বাইন্ডিং থেকে পাঠকের হাতে

কাজ কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। মূল বাঁধাই বা বাইন্ডিংয়ের জন্য কাজটি বাকি। এর জন্য প্রস্তুত ফর্মাগুলো চলে যাবে অন্য একটি কারখানায়। প্রেসের বাইরেই দেখা মিলল দুজন শ্রমিকের। যারা তাদের ভ্যান আর রশি-সমেত দাঁড়িয়ে। ছাপানো বইগুলো ভ্যানে তুলে দিলেই তা চলে যান বাইন্ডিংয়ের উদ্দেশ্যে।

আরও পড়ুন
অমর একুশে বইমেলা স্থগিত
সিলেটের নীলক্ষেত: রাজা ম্যানশন যেন বইয়ের খনি

সেই বাইন্ডিং কারখানা থেকেই সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে বইগুলো পৌঁছায় প্রকাশনীর হাতে। প্রকাশনী থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাবাজারের অলিগলিতে। এভাবেই জ্ঞান, স্মৃতি আর কিছু মুহূর্তকে সংরক্ষণ করে মাত্র তিনজন শ্রমিকের হাতে তৈরি বইটি সুযোগ করে দেয় আমাদের শৈশবের স্মৃতিতে বিচরণ করার।

ইতিহাসের পাতায় প্রিন্টিং প্রেস

জ্ঞান সংরক্ষণের বিশাল কাজের মূল ভিত্তি কিন্তু প্রিন্টিং প্রেস। এর উদ্ভাবন চীন দেশে হলেও জনক হিসেবে মানা হয় জোহানেস গুটেনবার্গকে। ১৪৪০ সালে তাঁর হাত ধরেই ইউরোপে আসে এ যন্ত্র। মূলত কোনো কাপড় বা কাগজে নকশা বা লেখাকে ছাপ দিতেই এর ব্যবহার শুরু হয়েছিল। এখন যে কোনো প্রচারণা থেকে শুরু করে দলিল, বই থেকে শুরু করে পোস্টার ছাপাতেও ব্যবহার হচ্ছে প্রিন্টিং প্রেস।

সেই প্রিন্টিং প্রেস দেখার সাধ মিটিয়েই ঘরে ফিরলাম। নতুন এক উপলব্ধি আর স্মৃতির ঝাঁপি নিয়ে। নতুন এক আমি আজ বই পড়ছি পুরোনো কামরায়।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন