শান্তর দুটি কাব্যগ্রন্থ
মনের গভীরে প্রবেশ করার ক্ষমতা
![মনের গভীরে প্রবেশ করার ক্ষমতা](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/book2-20240420164629.jpg)
খলিলুর রহমান
সমাজের নানা রকম ঘটনা প্রবাহের উৎস খুঁজতে প্রতিদিন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া ছুটে চলা প্রাণচঞ্চল, কর্মঠ ও উদ্যমী এক যুবকের নাম সাজেদুর আবেদীন শান্ত। একাধারে তিনি সফল সংগঠক, সাহিত্যিক, আলোকচিত্রী ও স্বচ্ছ নির্মল হৃদয়ের কবি। সর্বোপরি আগাগোড়া তিনি একজন গণমাধ্যমকর্মী। সম্পাদনা করেন উন্মেষ নামে একটি সাহিত্য সাময়িকী। সমাজের তৃণমূল ও প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সাথে তার চমৎকার সখ্য।
বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে ফিচার লেখার পাশাপাশি সাহিত্যের প্রতি তার অগাধ টান, ঠিক যেন প্রণয় প্রেয়সীর মতোই। অবসরের যেটুকু সময়, তার সবটুকুই যেন কবিতাকে ঘিরে। আর তাই তো তার দক্ষ হাতের আঙুলের ডগা বেয়ে ভূমিষ্ঠ হয় চমৎকার সব কবিতা। বেশ কিছু সময় ধরে আমি তার খণ্ড খণ্ড কবিতা ফেসবুকের বদৌলতে পড়ার সুযোগ পেয়েছি।
কাগজের পাতায় লিপিবদ্ধ তার লেখা কবিতা খুব একটা পড় হয়ে ওঠেনি আমার। আর তাই একটা সুক্ষ অতৃপ্তি মনে দানা বেঁধেছিল বহুদিন ধরে। আর সেই অতৃপ্তির অবসান হলো কিছুদিন আগে তার লেখা দুটি কবিতার বই হাতে পেয়ে।
তার প্রথম কবিতার বই ‘আষাঢ়, তুই এবং মৃত্যু’ যা অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১ প্রকাশিত এবং দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘স্নিগ্ধ ভোর অথবা মৃত্যু’ যা প্রকাশ পেয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩। দুটি বই-ই তিনি এক ফর্মা করে ট্যাবলয়েড সাইজে মলাটবন্দি করেছেন। পড়তে পড়তে যাতে বিরক্তি চলে না আসে, হয়তো সেই দিক বিবেচনা করেই তিনি বই দুটি এক ফর্মা করেছেন।
দুটি বইয়ের সবগুলো কবিতাই পাঠকের মনের গভীরে প্রবেশ করার ক্ষমতা রাখে বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। ভাষার অলংকার, সহজবোধ্যতা, শব্দের নান্দনিকতা সব মিলে ভাষার দারুণ মুন্সিয়ানার পরিচয় মেলে বই দুটি পড়লে। যেমন:
‘আমি হাসি চেপে রাখি
কারণ হাসতে গেলেই
মনে পড়ে তুমি চলে গেছো।
আরও পড়ুন
বেয়ারাদের কাঁধে ভর করে
ওই মন্ডল বড়িতে।
তুমি চলে যাওয়ার পর
আমার হাসতে মানা।
শুধু অপেক্ষা করি,
একটি স্নিগ্ধ ভোর অথবা মৃত্যুর জন্য।’
(স্নিগ্ধ ভোর অথবা মৃত্যু/ স্নিগ্ধ ভোর অথবা মৃত্যু)
কিংবা যখন পড়ি-
‘তোমার কাছে যে আকাশটা উপহার চেয়েছিলাম,
তা কিনতে পারিনি।
বহুত দাম চায়
একটা আকাশের বিনিময়ে, আমার চোখের নদী
বলো তাই কি হয়?’
(উপহার/ স্নিগ্ধ ভোর অথবা মৃত্যু)
এমন অনেক চমৎকার চমৎকার কবিতা দিয়ে সাজানো তার দুটি বইয়ের প্রতিটি পাতা। আমার কাছে তার দুটো কাব্যগ্রন্থের প্রায় প্রতিটি কবিতাই দারুণ লেগেছে, আমার মন কেড়েছে। কবিতাগুলোর শব্দের বিন্যাস ভাষাগত দক্ষতা এবং সহজবোধ্যতার জন্য। কবির ভাষায়-
‘একদিন কোথাও যাবো না,
একদিন সারাদিন তোর কথা ভাববো।
একদিন কোথাও যাবো না,
একদিন তোর সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো।’
(আষাঢ়, তুই এবং মৃত্যু/ আষাঢ়, তুই এবং মৃত্যু)
সাজেদুর আবেদীন শান্ত কবি হিসেবে অনেকদূর যাবেন-এমন প্রত্যাশা রইলো। সর্বোপরি আমি এই লেখকের দুটি বইয়েরই বহুল প্রচার এবং পাঠকপ্রিয়তা কামনা করছি।
আলোচক: কবি ও লেখক।
এসইউ/জেআইএম