দু-তিন বছর আমি পারিশ্রমিক নিইনি: আজম খান
আজম খান। ছবি: সংগৃহীত
ছোটপর্দার অভিনেতা আজম খান। তিনি ব্যাংকের একজন সাবেক কর্মকর্তা। সম্প্রতি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। এখন অভিনয়ে পুরোপুরি সময় দিচ্ছেন। সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে কথা হলো এ অভিনেতার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান মিথুন
জাগো নিউজ: ব্যাংকের চাকরি করেও কীভাবে অভিনয় চালিয়ে গেছেন?
আজম খান: আসলে আমি তো ২০১৫ সাল থেকে শোবিজে কাজ করছি। আমার অভিনয়ের বয়স ১০ বছর। আমি যখন ব্যাংকে চাকরি করেছি বিষয়টা এমন ছিল যে, ছুটির দিনগুলোতে কাজ করতাম। তখন সিরিয়ালে কিংবা ঢাকার বাইরে কোথাও কাজ করতে গেলে আমাকে ব্যাংক থেকে ছুটি নিতে হতো। সাধারণত সন্ধ্যার দিকে উত্তরায় কিংবা তিনশ ফিটে শুটিং থাকলে তাতে কাজ করতে পারতাম। আমি যেসব চরিত্রে অভিনয় করেছি, তাতে একেকটা প্রোডাকশনে চার-পাঁচটির মতো সিকোয়েন্স থাকে। সেগুলো আসলে একটু চেষ্টা করলেই করে নেওয়া যায়। পরিচালকরা এ বিষয়ে একটু সহযোগিতা করলে কোনো সমস্যা হয় না। এ ব্যাপারে নির্মাতাদের কাছে কৃতজ্ঞ। বরাবরই আমি তাদের সবার কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। এভাবেই চাকরি এবং অভিনয় চালিয়ে গিয়েছি।
জাগো নিউজ: চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। এখন তো অভিনয়ের জন্য অফুরন্ত সময়। সময়টা কীভাবে কাজে লাগাচ্ছেন?
আজম খান: চলতি বছরের মার্চ মাসে অবসর গ্রহণ করেছি। এরপর দুটো ঈদ গেছে। ঈদের বেশ কতগুলো কাজ করেছি।
জাগো নিউজ: অভিনয়ে আসার গল্পটা শুনতে চাই-
আজম খান: আমি ছোটবেলা শিশু সংগঠন করতাম। শিশু সংগঠন ‘চাঁদের হাট’র সদস্য ছিলাম। এছাড়া আমি বিতর্ক করতাম। উপস্থিত বক্তৃতায় অংশ নিতাম। অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করতাম। আমি শৈশব থেকেই পড়াশোনার বাইরে এসব সৃজনশীল কাজে জড়িত ছিলাম। আমি আমার চাকরি জীবনে পাবলিক রিলেশনন্সে কাজ করেছি। ফলে গণমাধ্যমের সঙ্গে একটা যোগাযোগ ছিল। এভাবে এটিএন বাংলার সঙ্গে আমার কাজের সম্পর্ক বেশি ছিল। শিল্পী চন্দন সিনহা হাসান শরীফ তখন এটিএন বাংলায় ছিলেন। তারা আমাকে নির্মাতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সূত্রেই ২০১৫ সালে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই।

জাগো নিউজ: সম্প্রতি আমার অভিনয় জীবনের ১০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানও করেছিলেন-
আজম খান: শখ করে আমার বন্ধু, শুভাকাঙক্ষী, সহকর্মীদের নিয়ে এ অনুষ্ঠানটি করেছিলাম রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে। এতে শোবিজের অনেক তারকাও উপস্থিত ছিলেন। অভিনেতাদের মধ্যে জাহিদ হাসান ভাই এসেছিলেন। তিনি এ অনুষ্ঠানে আমাকে নিয়ে কিছু কথাও বলেছেন, যা আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। এছাড়া আরশ খান এসেছিলেন। এছাড়া যেসব নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের অনেকেই আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন।
জাগো নিউজ: আপনার নিজের অভিনয় জীবনের ১০ বছর কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আজম খান: নিজের কাজ নিয়ে নিজে মূল্যায়ন করা বেশ কঠিন। তবে বলবো অভিনয় জীবন নিয়ে আমার প্রাপ্তি অনেক। অভিনয় থেকে যা পেয়েছি তা আমার কল্পনারও বাইরে। সেখানেই যাচ্ছি মানুষের ভালোবাসা, সম্মান পাচ্ছি। অভিনয়ের দশটি বছর অনেকে সময়। যেখানেই যাই সেখানকার মানুষ চেনে, ছবি, সেলফি তুলতে আসে- এটাও বিশাল প্রাপ্তি।
জাগো নিউজ: অভিনয়কে পুরোপুরি পেশা হিসেবে নিতে পারেননি কেন?
আজম খান: অভিনয় অঙ্গনে আমার আসা একটু দেরিতে হয়েছে। আমার বয়স যখন পঞ্চাশ তখন আমি অভিনয়ে এসেছি। এই পঞ্চাশ বছর আগে তো আমার জীবনের একটি ধারা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া আমরা যেসব চরিত্রে অভিনয় করি তাতে যে পারিশ্রমিক দেওয়া হয় সেটা দিয়ে জীবনের ৫০ বছর পর অভিনয়ে আসা একজন অভিনেতার পক্ষে সংসার চালানো সম্ভব নয়। এই হচ্ছে বাস্তবতা। দ্বিতীয় বিষয়টা হচ্ছে, আমি তো প্রথমে শখ করে অভিনয় অঙ্গনে এসেছি। প্রথমদিকে আমি পারিশ্রমিক নিতাম না। পরে দেখলাম অনেকেই আমাকে বলছেন আপনি তো কাজ করছেন, পারিশ্রমিক নিচ্ছে না কেন? তখন আমি নেওয়া শুরু করলাম। আমি আমার ক্যারিয়ারের এই দশ বছরে যত কাজ করেছি প্রথম দিকে দু-তিন বছর পারিশ্রমিক নিইনি। আসল কথা হলো অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগটি আমি পাইনি। জীবনের শুরুতে আমি এই সেক্টরে আসিনি- এটি তার অন্যতম কারণ। তবে এখন আমি পেশাগতভাবেই এ কাজটি করছি।

জাগো নিউজ: কার অনুপ্রেরণায় অভিনয়ে এসেছিলেন?
আজম খান: অভিনয়ে আসার পেছনে আমার নিজের ইচ্ছাটাই বেশি কাজ করেছে। পরিচালক হিসেবে আমি কৃতজ্ঞ চয়নিকা চৌধুরীর কাছে। তার সঙ্গে আমার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ কাজ করা হয়েছে।
জাগো নিউজ: সাম্প্রতিক সময়ে করা কিছু কাজের কথা বলুন-
আজম খান: প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছি। সম্প্রতি একটি নাটকের কাজ শেষ করেছি। দুটি ধারাবাহিকে কাজ করেছি। একটির নাম ‘জলজোসনা’, এটি বিটিভির জন্য নির্মাণ করছেন সোহেল আরমান। অন্যটি বৈশাখী টিভির জন্য ধারাবাহিকে কাজ করেছি। এছাড়া এক ঘণ্টার কয়েকটি নাটকের কাজ করেছি। সম্প্রতি তিনটি সিনেমার কাজও করেছি।
এমএমএফ/এমএফএ/জিকেএস