ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

মাকে সঙ্গে নিয়ে দেখুন সুতপার ঠিকানা

প্রকাশিত: ০৬:৫৯ এএম, ০৮ এপ্রিল ২০১৫

চলচ্চিত্রকার ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে পরিচিত মুখ প্রসূন রহমান। প্রয়াত দেশবরেণ্য চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদের ‘নরসুন্দর’ ও ‘রানওয়ে’ ছবিতে তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। পাশাপাশি নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু পরিচালিত ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রেও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক শেষ করা প্রসূন রহমান দেশে বিদেশে পড়াশোনা করেছেন আইন, মিডিয়া, চলচ্চিত্র নিয়েও। জানালেন, চলচ্চিত্র নিয়ে তার ভাবনা বহুদূরের। আসছে মা দিবসে মুক্তি পেতে যাচ্ছে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সুতপার ঠিকানা’ ছবিটি। এই নির্মাতা জাগোনিউজের কাছে জানালেন চলচ্চিত্র নিয়ে তার ভাবনার কথা-

জাগোনিউজ : প্রথমেই সুতপার ঠিকানা নিয়ে বলুন। এর গল্প-কাহিনী আর চরিত্রেরা কেমন?
প্রসূন রহমান : সুতপার ঠিকানার গল্প খুব বেশি দূরের নয়। প্রতিদিনের দেখা আমাদের প্রিয়-শ্রদ্ধেয় নারীদের জীবনাচার নিয়ে এই ছবির কাহিনী। উপমহাদেশে নারীদের যে অবস্থান তাই এখানে দেখানো হয়েছে। যেমন, আমরা দেখি একজন নারী ছোটবেলায় বাবার কাছে থাকেন। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি যান। শেষ বয়সে তিনি পুত্রের দ্বারস্থ হন। কিন্তু নিজের ঠিকানা বলে কিছু নেই। এখানে এই পরনির্ভরশীলতা থেকে নারীর বেরিয়ে আসার গল্প বলা হয়েছে।

জাগোনিউজ : এটাই কী তবে আপনার ছবির বার্তা?
প্রসূন রহমান : এখানে অনেক বার্তা। যে যেভাবে গ্রহণ করেন। তবে নির্দিষ্ট করে আমি কোনো বার্তা দিতে চাই নি। দর্শক বিনোদন নিতে আসেন, বার্তা নয়। চলচ্চিত্র সমাজ রাতারাতি বদলে দিবে না। আমি কোন বার্তা দিয়ে সেটা পারবো না। সেটা যদি হতো তবে এই পৃথিবী আরো সুন্দর হবার কথা ছিলো। আমার উদ্দেশ্য ছিলো একটা হিউম্যান স্টোরী বলে যাওয়া। বলেছি। এর মাঝেই জীবন আছে, বিনোদন আছে।

জাগোনিউজ : কেমন সাড়া পাবেন বলে মনে হয়?
প্রসূন রহমান : পিতা কখনো বলে না তার সন্তানেরা ভালো নয়। তেমনি আমিও বলবো আমার প্রথম চলচ্চিত্রটি সবার ভালোই লাগবে। অনেক মমতা নিয়ে আমি কাজ করেছি। অনেক সময় আর শ্রম দিয়েছি। দেশে তো বটেই, ইচ্ছে আছে এটি নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রবেশ করবো আমি। অন্তত দক্ষিণ এশিয়ার সবাই ছবিটি দেখুক-আমি চাই। আর দেশে সাড়া পাবো বলেই বিশ্বাস। সুতপার ঠিকানা মূলত নারীর গল্প, আমাদের বোনের গল্প, মা-খালাদের গল্প। আমি চাই দেশের নারীরা ছবিটি হলে গিয়ে দেখবেন। আর ছেলেরা, পুরুষেরা তাদের প্রিয় নারী, মাকে সঙ্গে নিয়ে ছবিটি উপভোগ করবেন। আমার বিশ্বাস, ছবির অপর্ণা ঘোষ হয়ে উঠবেন প্রতিটি নারীর প্রতিনিধি।

জাগোনিউজ : সাধারণত দেখা যায় বিষয়ভিত্তিক ছবিগুলো খুব বেশি হললে মুক্তি দেয়া হয় না। এক্ষেত্রে আপনি কী ভাবছেন?
প্রসূন রহমান : কষ্ট করে ছবি নির্মাণ করেছি অবশ্যেই হলে মুক্তি দেয়ার আশায়। আমি সর্বাধিক হলে মুক্তি দেয়ার জন্য চেষ্টা করবো। আমি চাই দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ সুতপার ঠিকানা জানুক। আর সেজন্যই মা দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিন বেছে নিয়েছি।

জাগোনিউজ : নারী দিবসের আপনার ছবির গানের অ্যালবাম বেরিয়েছে। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
প্রসূন রহমান : খুব বেশিদিন হয়নি অ্যালবামটি বেরিয়েছ। তারপরও যেটুকু সাড়া পেয়েছি তাকে গান না শোনার এ সময়ে ভালো তো বলতেই হবে।

জাগোনিউজ : বিষয়ভিত্তিক ছবির ক্ষেত্রে দেখা যায় গান খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু আপনার ছবিতে পাঁচটির মতো গান আছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য জানতে চাই....
প্রসূন রহমান : প্রতিটি শিল্প-সংস্কৃতি সমাজ থেকে উঠে আসে। আমাদের দেশে গান একটি বিশাল শাখা সংস্কৃতির। গান ভালোবোসে না আমাদের এ ভূ-খন্ডে এমন মানুষ খোঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমাদের সাথে গানের টানটা নাড়ির। দর্শকেরাও সিনেমার সাথে গান দেখে অভ্যস্থ। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে গান পাগল। তাই আমার ছবিতে গান রেখেছি। আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রে গান বিনোদনেরই একটি অংশ। তারেক মাসুদ, হুমায়ূন আহমেদরাও ছবিতে গান ব্যবহার করেছেন। তবে সেসব অহেতুক, বা অযৌক্তিক ছিলো না। আমিও প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোতে গান ব্যবহার করেছি ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে।

জাগোনিউজ : এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। এ প্রজন্মের নির্মাতা হিসেবে চলচ্চিত্র বানাতে গিয়ে কী কী সমস্যা আপনার চোখে পড়েছে?
প্রসূন রহমান : সমস্যা সব জায়গাতেই থাকে। এসব ওভারকাম করেই এগিয়ে যেতে হয়। নির্মানাধীন প্রক্রিয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে তেমন কোনো মেজর সমস্যা দেখিনি। ছোটখাটো যা আছে ওসব মোকাবিলা চাইলেই একজন নির্মাতা করতে পারেন। ঋত্বিক ঘটক বলতেন, চলচ্চিত্র বানাতে আলাদা যোগ্যতা লাগে। আর তারেক মাসুদের উপদেশ ছিলো, শারীরিক পেশির পাশাপাশি মানসিক পেশিও চাই সিনেমা বানাতে। তাই আমি সব সমস্যাই পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি সামর্থ্য দিয়ে। আমার সেন্সরেও কোনো সমস্যা হয়নি। সুতপার ঠিকানা সেন্সরে প্রশংসা পেয়েছে। তবে হ্যাঁ, সমস্যা আছে ড্রিস্ট্রিবিউশনে। এদেশে ছবির প্রচার ও মুক্তি দেয়ার অনেক ঝামেলা। এসব বিষয়ে বিএফডিসি এবং সরকারকে বোধহয় আরেকটু ভাবা উচিত।

জাগোনিউজ : সুতপার ঠিকানাতো ডিজিটাল চলচ্চিত্র। সেক্ষেত্রে ডিজিটাল হল নিয়ে সমস্যা হবে না? আমাদের এখানে তো ডিজিটাল হল বলতে খুব বেশি নেই?
প্রসূন রহমান : এটা খুব বড়ো সমস্যা নয়। গত দুই বছরে প্রায় সব ছবিই ডিজিটাললি মুক্তি পেয়েছে। যদিও মাত্র দু’টি হল আছে যেখানে ডিজিটাল মুভি চালানোর সব সুবিধা পাওয়া যায়। আর বাকিগুলোতে কোনো রকমে চালানো যায়। তবে ডিজিটাল মুভির আসল তৃপ্তি সেগুলোতে আসে না। এক্ষেত্রে জাজ মাল্টিমিডিয়াসহ আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ইতিবাচক কাজ করছে। কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবেও চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে সরকার এবং চলচ্চিত্র নিয়ন্ত্রন সংগঠনগুলোর যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আর সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার অসংখ্য হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যা আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য হুমকি স্বরূপ।

জাগোনিউজ : সম্প্রতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণা হয়েছে। সেখানে ২০১৩ সালের সেরা ছবিসহ ১৭টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতে নিয়েছে গাজী রাকায়াতের ‘মৃত্তিকা মায়া’ চলচ্চিত্রটি। অনেকেই বলছেন, যে ছবি কেউ হলে গিয়ে দেখেননি, যে ছবি ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি সেটা কেন এত পুরস্কার পাবে। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?
প্রসূন রহমান : এ বিষয়ে পুরোনো একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করবো আমি। আগুনের পরশমনি জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন প্রয়াত চিত্র পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ। নিজের বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন-পুরস্কার পেয়ে আমি আনন্দিত তবে গর্বিত নই। কারণ এ দেশে আজেবাজে ছবি হয়। একটি ছবি ভালো হলেই সে পুরস্কার পেয়ে যায়। খুব বেশি প্রতিযোগীতায় যেতে হয় না। হুমায়ূন আহমেদের সাথে সুর মিলিয়ে আমিও বলবো, ২০১৩ সালে মৃত্তিকা মায়ার সাথে তুলনা করার মতো কোনো ছবি তৈরি হয়নি। যোগ্য এবং ভালো চলচ্চিত্র উপহার দিয়েই গাজী রাকায়েত বাজিমাত করেছেন। এটা সবাইকে মানতে হবে।

জাগোনিউজ : চলচ্চিত্র নিয়ে নতুন করে কী ভাবছেন?
প্রসূন রহমান : আমি চলচ্চিত্রেই ব্যস্ত থাকতে চাই। প্রতি বছরই একটি করে চলচ্চিত্র নিয়ে আসতে চাই। এগুলো সবই হবে মৌলিক আর একটু ব্যতিক্রমী গল্পের ছবি। সেই ধারবাহিকতায় এ বছরের শেষদিকে নতুন ছবির কাজ শুরু করার ইচ্ছে রয়েছে। খুবই চমৎকার একটি গল্প পেয়েছি। চিত্রনাট্য লিখছি।

জাগোনিউজ : আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন্য...
প্রসূন রহমান : জাগোনিউজকেও ধন্যবাদ। সেইসাথে জাগোনিউজের মাধ্যমে দর্শকদের আমি আমন্ত্রণ জানাই মা দিবসে সুতপার ঠিকানা হলে গিয়ে দেখবার জন্য। আমার বিশ্বাস কেউ নিরাশ হবেন না। সবাই ভালো থাকুক। ঐতিহ্য আর সাফল্য নিয়ে বেঁচে থাকুক প্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র।

এলএ/এমএস