বন্ধ সিনেমা হলে চলছে ব্যাংক-মার্কেট-কমিউনিটি সেন্টার
একসময় ছিল যখন সিনেমা দেখতে পাহাড়ি জনপদের মানুষও দল বেঁধে ছুটে যেতেন সিনেমা হলে। ঈদ-পূজায় হলের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা যেত। তখন পরিবার নিয়ে দল বেঁধে বাংলা সিনেমা দেখা বিনোদনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এ জনপদে।
সময়ের ব্যবধানে হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও মানুষ টেলিভিশন-মোবাইল-কম্পিউটারসহ নানা মাধ্যমে খুঁজে নিচ্ছে নিজেদের পছন্দের সিনেমা।
এদিকে, হলে দর্শক না থাকায় ব্যবসায় বড় ধরনের ধস নামতে শুরু করে। ফলে পুঁজি হারিয়েছেন খাগড়াছড়ির হল ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে তাই ব্যবসার ধরন পাল্টেছেন তারা। বন্ধ হওয়া হলে চলছে ব্যাংক, মার্কেট ও কমিউনিটি সেন্টার।

আশির দশকের শেষ দিকে সাবেক মহকুমা শহর রামগড়ে স্থানীয় মো. রুহুল আমিন প্রতিষ্ঠা করেন শিল্পী সিনেমা হল। তার কাছাকাছি সময়ে গড়ে তোলা হয় ঝুমুর সিনেমা হল। এই সিনেমা হলগুলোতে নতুন ছবির জন্য মুখিয়ে থাকতো দর্শকরা। তবে তাদের হল বিমুখতায় বন্ধ হয়ে যায় সিনেমা হল দুটি।
সাত-আট বছর আগে শিল্পী সিনেমা হল পরিণত হয়েছে শিল্পী কমিউনিটি হলে। আর মালিকানা বদল করে ঝুমুর সিনেমা হলে ফার্নিচারের শোরুম করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা শহরের আদালত সড়কে একসময় সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের কলরবে মুখরিত ছিল ছবিঘর সিনেমা হল। বর্তমানে এখানে চলছে কৃষি ব্যাংক ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যক্রম।
পানছড়ির মুনমুন সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে ১৫ বছর আগে। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেট। বর্তমানে যা ‘সিনেমা হল মার্কেট’ নামেই পরিচিত।

পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে মাটিরাঙ্গার হাসপাতাল সড়কের ঝুমকা সিনেমা হল। একই অবস্থা মহালছড়ির বিশাখা সিনেমা হলেরও।
পাহাড়ি জনপদ মহালছড়িতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান উলাপ্রু চৌধুরী উপজেলা সদরে প্রতিষ্ঠা করেন বিশাখা সিনেমা হল। প্রতিষ্ঠার এক দশক না পেরুতেই দর্শকের আকালে বন্ধ হয়ে যায় এই সিনেমা হল।
রামগড়ের সাংস্কৃতিক সংগঠক রতন বৈষ্ণব ত্রিপুরা বলেন, একসময় সিনেমা হলগুলো ছিল পারিবারিক বিনোদনের ঠিকানা। মা-বাবা, ভাই-বোন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হলে সিনেমা দেখার প্রবণতা এখন আর চোখে পড়ে না। স্মার্টফোন আর ডিস লাইনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের সিনেমা ঘরে বসেই দেখতে পায় মানুষ।

সিনেমায় ভালো গল্প না থাকাকে দর্শকদের হল বিমুখ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ উল্লেখ করে সংস্কৃতি কর্মী ও মিরাক্কেল তারকা কায়কোবাদ বলেন, টিভি-ডিভিডির দৌরাত্ম্যে মানুষ হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পাশাপাশি ছবিতে অশ্লীলতায় ভরপুর থাকায় পরিবার নিয়ে দেখার সুযোগ নষ্ট হয়ে যায় মানুষের।
খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও খাগড়াছড়ি জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক জীতেন বড়ুয়া বলেন, পরিবার নিয়ে হলে বসে ছবি দেখার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কারণেই নেই দর্শক। এতে লোকসানে পড়ে খাগড়াছড়ির হলগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এক সময় শুধুমাত্র বিটিভিতে বাংলা সিনেমা দেখার সুযোগ থাকায় দর্শকরা সিনেমা দেখতে হলে যেত। বন্ধ হওয়া সিনেমা হলগুলো এখন ব্যাংক, মার্কেট ও কমিউনিটি সেন্টারসহ বিভিন্ন কোম্পানির গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এসএমএম/এমএস