ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

চাঁদপুরে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা একমাত্র হলটিও বন্ধের পথে

জেলা প্রতিনিধি | চাঁদপুর | প্রকাশিত: ০৬:১১ পিএম, ০৩ এপ্রিল ২০২১

এক সময় নতুন ছবির মাইকিংয়ে সরগরম থাকতো পুরো চাঁদপুর জেলা। রাস্তায় বের হলে কোথাও না কোথাও মাইকিংয়ের আওয়াজ কানে আসতো। প্রতিটি রাস্তার মোড়ে অথবা বিদ্যুতের খুঁটিতে কোনো না কোনো ছবির পোস্টার সাঁটানো থাকতো। যা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে।

আশি/নব্বই দশকে খুব দর্শকমুখর ছিল হলগুলো। পরিবার নিয়ে ছবি দেখতে মানুষ সিনেমা হলে যেত। অনেক সময় হলের বাইরে হাউসফুল লেখা দেখা যেত। অনেককে ছবি না দেখেই চলে যেতে হয়েছে এমন ঘটনাও রয়েছে। ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রির জন্য একটি দল থাকতো হলগুলোর সামনে।

jagonews24

তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট অনেকটাই ভিন্ন। দর্শক খরা আর লোকসানে চাঁদপুরের হলগুলো সব বন্ধের পথে। অনেকগুলোতে এখন গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন।

যদিও পুরো জেলায় মাত্র দুটি সিনেমা হলের অস্তিত্ব এখনো রয়েছে। এরমধ্যে একটি চাঁদপুর সদরের পুরান বাজারের ‘কোহিনুর হল’, আরেকটি মতলব দক্ষিণে ‘কাজলী হল’। অস্তিত্ব থাকলেও এই হলগুলোরও নেই কোনো কার্যক্রম। আর এসব হল বন্ধ হওয়ার পেছনে প্রযুক্তির আধুনিকতা, পাইরেসি, সিনেমা স্বল্পতা, ভিনদেশি ছবির কপিরাইট, টিভি চ্যানেল বেড়ে যাওয়া, স্বল্প ছবির রিলিজের কারণে হলগুলোর পরিবেশ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সঙ্কটকে দায়ী করেন হল মালিকসহ অনেক দর্শক।

jagonews24

এছাড়া ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে কালো থাবা, অশ্লীলতা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতার জন্য সিনেমা হল থেকে মুখ সরিয়ে নেন দর্শকরা।

চাঁদপুর জেলায় মোট ৯টি সিনেমা হল ছিল। যার মধ্যে সদরে তিনটি, হাজীগঞ্জে দুটি, মতলব দক্ষিণে দুটি, ফরিদগঞ্জে একটি ও হাইমচরে একটি। সদরের সিনেমা হলগুলো হলো- কোহিনুর, ছায়াবানী, চিত্রলেখা। তিনটির মধ্যে চিত্রলেখা এবং ছায়াবানী হল ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

jagonews24

হল দুটির অস্তিত্ব না থাকলেও রয়েছে সেগুলোর স্মৃতি। কেন না ওই দুটি স্থান এখনো ছায়াবানী মোড় এবং চিত্রলেখার মোড় নামেই চেনে সবাই। হলগুলোর নামেই সবাই এখনো ওই স্থানটিকে মনে রেখেছেন।

পাকিস্তান আমলে চাঁদপুরের বেঁচে থাকার একমাত্র কোহিনুর হলটিও গত এক বছর যাবত বন্ধ রয়েছে। এছাড়া হলের বর্তমান যে অবস্থা, তাতে সেখানে আর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী সম্ভব নয়। সেখানে কাজ করা কয়েকজন জানান, হলের ভেতরে সিটগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে। উপরের টিনগলোও নষ্ট। সামান্য বৃষ্টিতেই পুরো হল ভিজে যায় এখন। এছাড়া চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মতো কোনো পরিবেশই এখন হলটিতে নেই। এছাড়া আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব তো রয়েছেই।

jagonews24

মতলব দক্ষিণের ‘কাজলী’ ও ‘রাজমহল’ সিনেমা হল। ‘কাজলী’ ধুঁকে ধুঁকে চললেও ‘রাজমহল’ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ফরিদগঞ্জের ‘মনিহার’ দর্শক স্বল্পতায় বন্ধ। হাজীগঞ্জের ‘সান্ত্বনা’ ও ‘রাণী’ হল বন্ধ আছে। সেখানেও নির্মাণ হয়ে গেছে বহুতল ভবন। মালিকপক্ষ এখন আর হলের ব্যবসায় লস গুনতে আগ্রহী নন।

সাধারণ দর্শকরা বলছেন, ভালো মানের সিনেমা নির্মাণ ও হলগুলোর পরিবেশ ঠিক করলে আবারও দর্শক হলে এসে ছবি দেখবে। কারণ, ছবি দেখে না এমন মানুষ কোথাও খুঁজেও পাওয়া যাবে না।

হলে দর্শকদের বিমুখ হওয়ার বিষয়ে চাঁদপুর মতলবের কাজলী সিনেমা হলের পরিচালক এবিএম শামস স্বপন বলেন, ‘হলে সিনেমা চলবে কীভাবে? ছবি রিলিজের আগের দিনই পাইরেসি হয়ে যায়। এছাড়া বছরে একটি হল চালানোর জন্য ন্যূনতম পঞ্চাশটি ছবি প্রয়োজন পড়ে। সেখানে ছবি নির্মাণ করা হচ্ছে ৪/৫ টি। এরপর ছবির মান একেবারেই খারাপ হয়ে গেছে এখন। আগে রাজ্জাক শাবানার ছবি দেখে চোখে পানি চলে আসতো। আর এখন যাকে তাকে দিয়ে ছবি নির্মাণ করা হচ্ছে। যার কারণে দর্শকরা এখন আর এসব ছবি দেখতে আগ্রহী না।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে হলে ছবি দেখতে আসলে ন্যূনতম এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। এতটাকা খরচ করে যদি ভালো মানের কোনো ছবি উপহার না পায় তাহলে তারা কেন আসবে হলে।’

হলের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘হলের পরিবেশের চাইতে বেশি দরকার চলচ্চিত্রের মান বৃদ্ধি করা। সরকার হল মালিকদের ও চলচ্চিত্রে যে অনুদান প্রদান করে সেগুলো আসলে সঠিক ব্যবহার হয় না। যার কারণে ওই অনুদান বা সহযোগিতাটুকু চলচ্চিত্র পরিচালক বা আমাদের হাত পর্যন্ত পৌঁছায় না।’

এবিএম শামস স্বপন বলেন, ‘চাঁদপুরের সবগুলো সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। আমারটাও আমি যেকোনো সময় বন্ধ করে দেব। কারণ লস দিতে আমি আর পারছি না।’

একই কথা জানালে কোহিনুর সিনেমা হলের মালিক মো. খোকন মিজিও।

নজরুল ইসলাম আতিক/এসজে/এএসএম