ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

মুক্তিযোদ্ধাদের যেসব গান আজও প্রেরণা দেয়

বিনোদন প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:৪১ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১

দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। আমরা পেয়েছি স্বাধীন এক দেশ। পরিবার পরিজনদের মায়া ত্যাগ করে দেশের তরুণরা দেশকে বাঁচাতে নিজেদের রক্ত ঝরান। ঝাঁপিয়ে পড়েন পাক হানাদার বাহিনী দমনে।

যুদ্ধের সময় খেয়ে না খেয়ে মাঠে, ঘাটে, জঙ্গলে কিংবা পরিত্যক্ত স্থানে লুকিয়ে থাকতেন মুক্তিযোদ্ধারা। অনেকেই তখন হারিয়েছিলেন মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানসহ অনেক প্রিয়জনদের। আবার কারও কারও পুরো পরিবারই নিঃশেষ করে দিয়েছিল ঘাতক পাক বাহিনীরা।

তখন মুক্তিযোদ্ধাদের মনে শক্তি আর উদ্দীপনা যোগাতে বিভিন্ন গানের সৃষ্টি হয়েছিল। যে গান শুনলেই রক্ত গরম হয়ে যেত মুক্তিবাহিনীদের। এখনো এসব গান শুনলে গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। সেই সংগ্রাম, লাখ লাখ মানুষের রক্তের মিছিল, গোলাগুলির শব্দ, মা-বোনদের উপর নির্যাতনের করুন দৃশ্য মনে করিয়ে দেয়। সে সময় এসব গানই যুদ্ধাদের মনে সাহস জুগিয়েছিল। যা আজও নানাভাবে প্রেরণা দিয়ে চলেছে আমাদের।

তখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্য যে গান রেকর্ড করা হয়েছিল তা এখনো প্রতিবাদী গানগুলোর মধ্যে সেরা বলে মনে করা হয়। ওই সময়ে প্রচার হওয়া দেশাত্মবোধক গানগুলোই ছিলো গনজাগরণের মূল হাতিয়ার ও শক্তি। যে গানগুলো আজো আমাদের মনে গেঁথে আছে। তেমনই কয়েকটি গান ও এর পেছনের গল্প জেনে নিন-

‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’

এ গানটি যেনো সরাসরি যুদ্ধাদের মনের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলো। গানটির গীতিকার গোবিন্দ হালদার। সুর করার পাশাপাশি গানটি গেয়েছেন আপেল মাহমুদ। তার কণ্ঠে বাংলাদেশ বেতারের গানটি প্রচারের পর জনমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। গানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচার হওয়ার পর শুধু বাংলা নয়, পুরো কলকাতাতেও এর বন্দনা শুরু হয়। যুদ্ধ চলাকালে এ গানটি কেবল স্বাধীন বাংলা বেতার নয়, পথে-ঘাটে, রাস্তায় রাস্তায় দলে দলে মুক্তিকামী মানুষেরা গেয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি করেছেন। এ গান যুদ্ধাদের মনে মুক্তির আলোড়ন সৃষ্টি করে।

‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে’

শোনো একটি মুজিবরের থেকে/লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি/আকাশে বাতাসে ওঠে রণি/বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার’র কথায় গানটিতে সুর দেন অংশুমান রায়। এটি ছিল সেই গান, যে গান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হওয়ার আগেই ভারতের কোনো এক বেতার থেকে বাজানো হয়েছিল। পরে স্বাধীন বাংলা বেতারের জন্য নতুন করে কণ্ঠ তোলেন আব্দুল জব্বার।

‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’

বাংলার আকাশে যতদিন সূর্য উঠবে, এই গান ও তার আবেদন ততদিন থাকবে। দেশ বরেণ্য সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমত উল্লাহর কণ্ঠে এই গানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সেরা গান। গানটির কথা লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সুর করেন আনোয়ার পারভেজ।

‘কারার ঐ লৌহকপাট’

এ গান যেনো ছিলো যুদ্ধকালীন সময়ে মানুষের মনে উদ্যম ও শক্তি সঞ্চার করে। গানটির কথা ও সুর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার অনবদ্য এই গানটি কয়েকজন শিল্পীর সমবেত কণ্ঠে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচার করা হয়। গানের কথা আর সুর হাজারো ঘরকোণা যুবককে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে, স্বপ্ন দেখায় পরাধীনতা গ্লানি মুছে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনার।

‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’

আমাদের মুক্তির সংগ্রামে ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’ গানটি জনজাগরণের আরেকটি শক্তি। দেশপ্রেমের চেতনায় জাতিকে এক করার জন্য এ গানের কেনো বিকল্প ছিলো না। এই গানটির কথা ও সুর করেন আপেল মাহমুদ। যৌথভাবে আপেল মাহমুদ ও রথীন্দ্রনাথ রায়’র কন্ঠে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত গানের মধ্যে এটি অন্যতম সেরা।

‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল’

এটি এমন একটি গান, যার কথা, সুর লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধাকে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহি করে তুলে ছিলো। উৎসাহি করে তুলেছিল অস্ত্র হাতে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য।

নোঙর তোল তোল

গানটির কথা নঈম গহর’র। সুর সমর দাস। তার সুরে সমবেত কয়েকজন শিল্পীর কণ্ঠে গানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হয়। এই সমবেত সংগীতটি তখন সংগ্রামী সংগীত এবং যুদ্ধের মন্ত্র হিসেবে কাজ করত।

‘ছোটদের বড়দের সকলের’

গানটির কথা ও সুর খাদেমুল ইসলাম বসুনিয়া’র। এটি জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের কণ্ঠে তৎকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হয়। এই গানটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাঙালির মনে দেশপ্রেম জাগাতে অনবদ্য ভূমিকা রাখে।

যুদ্ধের পরে ও আগে আরও কিছু গান জন্ম নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য -

দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, যদি রাত পোহালে সোনা যেতো, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, সালাম সালাম হাজার সালাম, জনতার সংগ্রাম চলবেই, সব ক’টা জানালা খুলে দাও না ইত্যাদি।

এলএ/এএসএম