ভিউ বেশি হলেই এখন বড় অভিনেতা, কোয়ালিটি বিষয় না: মনি
মনিরুজ্জামান মনি
সময়ের আলোচিত অভিনেতা মনিরুজ্জামান মনি। মঞ্চে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন বাংলাদেশের প্রথম সারির নাটকের দল আরণ্যকের হয়ে। বর্তমানে ছোটপর্দায় নানামুখী কাজ নিয়ে ব্যস্ত মনি। অভিনয়ের নেশা ও সাধনা, নিজের ক্যারিয়ার ভাবনাসহ নানা বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন মনিরুজ্জামান মনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মইনুল ইসলাম।
জাগো নিউজ: বর্তমানে কী নিয়ে ব্যস্ত?
মনি: এ মুহূর্তে একক নাটক, ওয়েব সিরিজ ও ধারাবাহিক নাটক নিয়ে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। একাধিক ধারাবাহিক নাটক বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচার হচ্ছে। সেগুলোর শুটিংও করছি। সময়ের আলোচিত উদীয়মান ডিরেক্টরদের সঙ্গে আমার কাজের সুযোগ হচ্ছে। তারা প্রত্যেকেই ট্যালেন্টেড। তাদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা দারুণ। গত চার মাসে আমার ৫টি সিরিয়াল অনএয়ার (প্রচার) হয়েছে। এগুলো হলো- ‘পথের ধারাপাত’, ‘মান অভিমান’, ‘আহাম্মক’, ‘মক্কেলবাড়ি’ ও ‘জিন্দাবাহার’।
এছাড়া প্রচারের অপেক্ষায় একটি মেগা সিরিয়াল। নাম ‘কাজলরেখা’। এখানে আমি পুরোই নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছি। আশা করছি দর্শকরা অন্য এক মনিকে দেখবে।
জাগো নিউজ: কাজলরেখায় শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা যদি বলতেন
মনি: কাজলরেখার শুটিংয়ের সময় আমাকে সবাই বলতো, তোমাকে সত্যিকারের একজন শয়তান মনে হয়। যখন অভিনয়ের সময় সহকর্মীরাই আগে ওই চরিত্রটাকে বিশ্বাস করতে শুরু করে, একজন অভিনেতার জীবনে এটাই বড় প্রাপ্তি। একটি চরিত্র চরিত্রায়নের ক্ষেত্রে মেক বিলিভের জায়গাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দারুণ শুটিং সময় কেটেছে এ নাটকের বেলায়।
জাগো নিউজ: আপনি তো থিয়েটার থেকে উঠে এসেছেন। থিয়েটারে কীভাবে যুক্ত হলেন?
মনি: মঞ্চনাটক হলো আমার প্রাণের জায়গা। আমি আমার ঢাকার জীবনের শুরু থেকেই আরণ্যক নাট্যদলের সঙ্গে আছি। এর আগে আমি নিজ জেলা গাইবান্ধায় পদক্ষেপ নাট্যদলে কাজ করতাম। আমার নাট্যগুরু মামুনুর রশিদের হাত ধরে ঢাকার মঞ্চে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। এ যাবৎকালে ‘এবং বিদ্যাসাগর’, ‘স্বপ্ন পথিক’, ‘ভঙ্গবঙ্গ’, ‘জুবলি হোটেল’, ‘আগুনের জবানবন্দী’, ‘খেঁকশিয়াল’সহ বেশ কিছু মঞ্চ ও পথনাটকে কাজ করেছি। মেথড অ্যাক্টিংটা হাতে-কলমে রপ্ত করার জায়গা হচ্ছে মঞ্চ।
জাগো নিউজ: মিডিয়া ও মঞ্চে আসার পেছনে আপনার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় অবদান কার বেশি ছিল?
মনি: আমার বাবা-মা আমাকে মানসিকভাবে, আর্থিকভাবে সবসময় আমাকে সহযোগিতা করেছেন এ কাজগুলো করার জন্য। তারা কোনোকিছু নিয়ে আমাকে কখনো প্রেসার করেনি। তারা চেয়েছেন আমি যেন সবসময় ভালো অবস্থানে থাকতে পারি।

বিশেষ করে বাবা আমাকে আমার পছন্দের পেশা বেছে নিতে সমর্থন দিয়েছেন। কখনো তার পছন্দ চাপিয়ে দেননি। যখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের বেশ ভালো জোয়ার তখন আমি ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে নিতে চেয়েছিলাম। এরপর হঠাৎ ইনজুরিতে পড়লে ডাক্তার আমাকে খেলা ছাড়ার পরামর্শ দেন। ক্রিকেটে ফোকাস থাকলেও আমি উপস্থাপনা, আবৃত্তি এবং টুকটাক মঞ্চের সঙ্গে জড়িত ছিলাম ছোটবেলা থেকেই। তাই ক্রিকেট থেকে সরে এদিকে মন দিতে বেগ পেতে হয়নি।
জাগো নিউজ: শোবিজের চলমান সময়টাকে আপনি কীভাবে উপলব্ধি করেন?
মনি: চ্যালেঞ্জে ভরপুর, কঠিন প্রতিযোগিতা এখন। তার ভিড়েও প্রত্যেক অভিনেতা চায় ভালো কাজ করে নিজের জায়গাটা পোক্ত করতে। চায় অভিনয়টাকে প্রফেশন হিসেবে নিতে। কাজ অনেক হলেও সবাই ভিউয়ের দিকে ছুটছে। কার এলোপাথাড়ি ভিউ হচ্ছে সেটাই এখন মুখ্য। তাকে দিয়েই অভিনয় করাতে চান সবাই। কোয়ালিটি আছে কি না এটা বিবেচ্য বিষয় নয়। ভিউ বেশি যার সেই এখন সবচেয়ে বড় অভিনেতা।
জাগো নিউজ: কোন ধরনের গল্পের সঙ্গে আপনি কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
মনি: গ্রামে এবং শহরের যেকোনো গল্প যদি মানসম্মত হয় তাহলে কাজ করতে আমার কোনো সমস্যা হয় না। তবে চাইলেও সবসময় সবকিছু মনমতো হবে না, এটাই স্বাভাবিক। দর্শক মানসম্মত গল্প বা পারিবারিক গল্প দেখতে পছন্দ করে। আমারও এমন গল্পে কাজ করতে বেশি ভালো লাগে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমরা নানান আজগুবি নাম আর গল্পে দর্শক ধরার প্রতিযোগিতায় নেমেছি। যার ফলে মনের মতো কাজের সুযোগটা কম। আমরা যা-তা নাটক বানাচ্ছি আর বলছি যে, দর্শক এসবই চায়। যদি তাই হতো তবে ভালো কন্টেন্ট ফোকাস হতো না। দিনশেষে বলতে চাই দর্শকের রুচি আমরাই তৈরি করি, তার উদাহরণ আছে ভুরি ভুরি। একজন ভালো অভিনেতাকে গুরুত্ব সহকারে কাস্টিং করতে হবে। একটি ছোট চরিত্র হলেও সেখানে শখের বা অদক্ষ পরিচিত মুখকে বাদ দিয়ে একজন সত্যিকারের জানা অভিনেতাকেই কাস্টিং করা উচিত।
জাগো নিউজ: যেকোনো চরিত্র চিত্রায়নের ক্ষেত্রে আপনি কীভাবে নিজেকে তৈরি করেন?
মনি: এটাকে বলে অ্যাক্টরস প্রিপারেশন। একজন অভিনেতাকে বিজ্ঞানী বা দার্শনিকের মতো ওই চরিত্রের বিশ্লেষক হতে হয়। ওই চরিত্রটি কীভাবে হাঁটে, খায়, কথা বলে, কোন বিষয়ে তার দুর্বলতা, কী তার শক্তি, কোন স্বভাবের মানুষ সে- এরকম হাজারো ভাবনা ভাবতে হয়। অন্য একটি চরিত্রকে মনস্তাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিকভাবে পরিবর্তন করে নিজের ভেতর ধারণ করতে হয়। মানে আরেকটি জীবনকে নিজের মননে নিয়ে নিতে হয়। এক কথায় অ্যাক্টরকে মাল্টি টাস্কিং হতে হয়। পৃথিবীর কঠিন কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। আর আমি কঠিনেরেই ভালোবাসিলাম। চরিত্র অনুযায়ী নিজেকে তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা সবসময়ই করি, করে যেতে চাই। কারণ, আমি কিছু ভালো কাজ করে যেতে চাই। যেগুলো দর্শকের অন্তরে আমাকে অমরত্ব দেবে।
এমআই/ইএ/এএসএম