ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

জন্মদিনের শুভেচ্ছায় আপ্লুত শিমুল ইউসূফ

প্রকাশিত: ০৮:৪৬ এএম, ২২ মার্চ ২০১৬

দেশের নাট্যাঙ্গনের অন্যতম প্রিয়মুখ শিমূল ইউসুফ। বাংলা অভিনয়রীতি বিকাশে এবং শুদ্ধ সঙ্গীতচর্চায় তার অবদানের জন্য কবি বেগম সুফিয়া কামাল ও নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন কর্তৃক তিনি ‘মঞ্চকুসুম’ উপাধিতে ভূষিত হন।

তার জন্মদিন ছিলো গতকাল সোমবার, ২১ মার্চ। প্রিয়জনদের ভালোবাসা আর শুভেচ্ছায় সিক্ত নন্দিত এই নাট্যকর্মী। ভেসে গেছে তার ফেসবুক ওয়াল। কেই শিমুল ইউসূফের দীর্ঘায়ূ কামনা করেছেন, কেউ তাতকে অভিনন্দিত করেছেন নতুন বছরে, কেউ বা আবার প্রশংসা পঞ্চমুখ ছিলেন তার অভিনয়ের।

এই শুভেচ্ছায় আপ্লুত শিমুল ইউসূফ। সেই অনুভূতি তিনি মঙ্গলবার, ২২ মার্চ প্রকাশ করেছেন ফেসবুকে। তিনি লিখেছেন, ‘এত ভালবাসা, এত আদর-স্নেহ-শ্রদ্ধা, সব যেন এক একটি ময়ূরের পালক, সুগন্ধ মাখা ফুলের ঘ্রাণ, নক্ষত্র খচিত মাথার মুকুট!!!’

তিনি আরো লেখেন, ‘গতকাল এক একটি লিখা পড়েছি আর বার বার মনে হয়েছে আছে;  গন্ধ আছে, সুখ আছে, রং আছে, ভালবাসবার মানুষ আছে স্নেহে বুকে আগলে রাখার। দুঃখের দিনে পাশে দাঁড়াবার, আদর দিয়ে মাথায় হাত বুলাবার, আশীর্বাদ করবার মত স্বজন আছে...’

মঞ্চকুসুম আরো লেখেন, ‘মঞ্চের প্রতিটি ঘামের ফোঁটাকে সাক্ষী রেখে বলছি- তোমাদের আশা, ভালবাসার প্রতিফলন দেখতে পাবে মঞ্চের নির্ধারিত আমার সেই প্রার্থনার জায়গায়।
যেখানে ঈশ্বরের সান্নিধ্যের আশায় প্রতিদিন দু’ হাত তুলি আমি....’

প্রসঙ্গত, ১৯৫৭ সালের ২১ মার্চ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সাত ভাই বোনদের মধ্যে শিমুল সবার ছোট। বয়স যখন পাঁচ বছর তখন থেকেই গান শুরু করেন। তিনি ওস্তাদ হেলাল উদ্দিন, পি সি গোমেজ, আলতাফ মাহমুদ এবং আব্দুল লতিফের কাছ থেকে শাস্ত্রীয় এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত গানের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

১৯৬২ সালে মাত্র ৫ বছর বয়সে তিনি শিশুশিল্পী হিসাবে মঞ্চে অভিনয় ও সংগীত জীবন শুরু করেন। শৈশব থেকে শিমূল ইউসুফ উচ্চাঙ্গ সংগীত, নজরুল সংগীত এবং গণসংগীতে ওস্তাদ হেলাল উদ্দিন, পিসি গোমেজ, ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ, শহীদ আলতাফ মাহমুদ, শেখ লুৎফর রহমান, আব্দুল লতিফ, ওস্তাদ ইমামউদ্দীন এবং সুধীন দাসের কাছে দীর্ঘদিন তালিম নেন। তিনি আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যানিকেতন থেকে সংগীতে ডিপ্লোমা লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক বিজ্ঞানে ডিগ্রি নিয়েছেন।

১৯৬৩ সালে তিনি তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে শিশুশিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৪ সালে তঃকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনের সম্প্রচারের প্রথম দিন শিশুশিল্পী হিসাবে সংগীত পরিবেশন করেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা থিয়েটারে যোগ দেন। এ পর্যন্ত তিনি ঢাকা থিয়েটারের ৩৪টি নাটকে অভিনয়শিল্পী, সংগীত পরিচালক, নির্দেশক এবং পোশাক পরিকল্পনা, সহযোগী নির্দেশক ও পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার কাজ করেছেন।

রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চের শিল্পী শিমূল ইউসুফ ১৯৭৪ সালে ঢাকা থিয়েটারে যোগদানের পর থেকে পুরোপুরি মঞ্চে নিজেকে নিয়োজিত করেন। পাশাপাশি শুদ্ধ সঙ্গীতচর্চা অব্যাহত রাখেন।

দীর্ঘ পাঁচ দশকের জীবনে শিমূল ইউসুফ দুই সহস্রাধিক নজরুল সংগীত, গণসংগীত রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চে পরিবেশন করেন এবং মঞ্চের ৩৩টি নাটকের ষোল শতাধিক মঞ্চায়নে সফল অভিনয় করেন।

রুবাইয়াৎ আহমেদের অনুবাদ ও রূপান্তরে এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফের নির্দেশনায় ইংল্যান্ডের বিখ্যাত শেক্সপিয়রস গ্লোব থিয়েটারে মঞ্চায়িত বাংলা ভাষার প্রথম নাটক ‘দ্য টেম্পেস্ট’ এ প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় করেছেন শিমূল।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত ১৬টি চলচ্চিত্রে তিনি সংগীত পরিচালনা ও কণ্ঠ দান করেন। উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ‘আগামী’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘ঘুড্ডি’, ‘গেরিলা’ ইত্যাদি। গণসংগীত, নজরুলসংগীত এবং লালনের গান নিয়ে শিমূল ইউসুফের ৫টি একক অ্যালবামও প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৮১ সালে গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনকে সংগঠিত করতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শিমূল ইউসুফ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৯৬৫ সালে পাকিস্কানের শিশুশিল্পী হিসাবে প্রেসিডেন্ট পদক, লোকনাট্যদল পদক, বাচসাস পদক, মোহাম্মদ জাকারিয়া পদক, রুদ্র পদক, নুরুন্নাহার সামাদ পদক, আরণ্যক দীপুস্মৃতি পদক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার পদক, কালচারাল রিপোর্টার্স ইউনিটি পদক, মানবজমিন পাঠকজরিপ এবং কচিকাঁচা মেলার আজীবন সম্মাননা।

তথ্যসূত্র : অনলাইন

এলএ/এমএস