ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

নাট্যাঙ্গনের প্রিয়মুখ আ জ ম কামাল

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ | প্রকাশিত: ০৩:৩২ পিএম, ০৯ মার্চ ২০২৪

আ জ ম কামাল নাট্যাঙ্গনের প্রিয়মুখ। তিনি একাধারে নাট্যকার, নির্দেশক, মঞ্চ পরিকল্পক, মেকাপ আর্টিস্ট এবং অভিনেতা। বিশেষ করে মাদারীপুরের নাট্যকর্মীদের অভিভাবক। বহু গুণের অধিকারী এই নাট্যশিল্পী ১৯৫৬ সালের ৯ মার্চ মাদারীপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ এবং রাজবাড়ীতে পড়াশোনা করেছেন। মাদারীপুর পাবলিক ইনস্টিটিউশন থেকে এসএসসি পাস করেন। মাদারীপুর সরকারি কলেজ (তৎকালীন সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজ) থেকে ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। ছাত্রজীবনেই নিয়মিত নাট্যচর্চার মাধ্যমে সংগঠক ও নাট্যকর্মী হিসেবে বাশার মাহমুদের সহযোগিতায় মাদারীপুর নাট্যগোষ্ঠীর হয়ে কাজ শুরু করেন।

আ জ ম কামাল ১৯৭২ সালে মেঘদূত পরিচালিত ‘মহামুক্তি উৎসব’ অনুষ্ঠানে মঞ্চ ডিজাইনের কাজ করেন। ১৯৭৬ সাল থেকে মাদারীপুর নাট্যগোষ্ঠীর নিয়মিত প্রযোজনা ও পরিবেশনায় বাশার মাহমুদ পরিচালিত বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করেন। তার উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে ‘নকশিকাঁথার মাঠ’, ‘ওরা কদম আলী’, ‘সুবচন নির্বাসনে’, ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’, ‘ফাঁস’, ‘চোর চোর’, ‘ফলাফল নিম্নচাপ’, ‘বাসন’, ‘পেজগী’ এবং ‘এখন দুঃসময়’সহ অসংখ্য নাটকে অভিনয় করে সুনাম অর্জন করেন।

নাট্যাঙ্গনের প্রিয়মুখ আ জ ম কামাল

১৯৮১ সালে নাট্য আন্দোলনের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মাদারীপুর নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য হন। বিভিন্ন সময় কার্যকরী পরিষদের বিভিন্ন পদে থেকে দেশব্যাপী নাট্য আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ফলে দেশের বিভিন্ন নাট্যব্যক্তিত্বের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। তারা হলেন—মো. জাকারিয়া, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, আবদুল্লাহ আল মামুন, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সেলিম আল দীন, লিয়াকত আলী লাকী, এস এম সুলাইমান, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শংকর সাজোয়াল, মান্নান হীরা, মামুনুর রশীদ, মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, আরিফ হায়দার, ভারতের হাবিব তানভীর, বাদল সরকার, উৎপল দত্ত, শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র প্রমুখ। তিনি প্রথিতযশা অনেকের কাছ থেকে নাটকের বিভিন্ন রকমের কাজ শেখেন।

আরও পড়ুন
রাবিতে সংস্কৃতায়নের আলোচনা ও সম্মাননা প্রদান

নাট্যাঙ্গনের প্রিয়মুখ আ জ ম কামাল

নাটকে তার নির্দেশনা শুরু হয় প্রসাদ বিশ্বাসের ‘জবাবদিহি’ নাটকের মাধ্যমে। এরপর থেকে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘গ্রাস’, ‘রাক্ষস’, ‘বাসন’, ‘পেজগী’, ‘মহারাজার অনুপ্রবেশ’, ‘একটাই চাওয়া’, ‘বৈচাপাগল’সহ অনেক নাটকে নির্দেশনা দেন তিনি। ১৯৮৯ সালে ফরিদপুরে আন্তঃজেলা নাট্য উৎসবে নিজ জেলার ইতিহাস বিষয়ক রচিত সেলিম আল দীনের ‘বাসন’ নাটকের নির্দেশনা দেন। ১৯৯৯ সালে জাতীয় শিশু-কিশোর নাট্য উৎসবে ‘সুযোগ চাই মানুষ হবো’ নাটকে নির্দেশনা দেন। ২০১২ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জাতীয় নাট্য উৎসবে আজিজুল ইসলামের লেখা ‘একটাই চাওয়া’ নাটকের নির্দেশনা দেন। ২০১৩ সালে স্বপ্ন ও দ্রোহের জাতীয় নাট্য উৎসবে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের লেখা ‘বৈচাপাগল’ নাটকের নির্দেশনা দেন। ২০১৪ সালে সাহিত্য নির্ভর জাতীয় নাট্য উৎসবে সালাহ উদ্দিন মাহমুদরে নাট্যরূপে পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘কবর’ নাটকের প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ২০০৪ সাল থেকে মাদারীপুর লিগাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের নাট্যদলের সঙ্গে বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নে পথ নাটকে মেকাপ আর্টিস্ট ও অভিনেতা হিসেবে কাজ করেন। যা এখনো চলমান। এমনকি বিভিন্ন নাটকের মঞ্চকলা ও অঙ্গসজ্জা বিষয়ক কাজ করেন।

মঞ্চ নাটকের পাশাপাশি তিনি কয়েকটি টিভি নাটকেও অভিনয় করেন। এটিএন বাংলা নাট্যযুদ্ধে নিজের লেখা ‘তাহারা’ নাটকে অভিনয় করেন তিনি। নাটকটি পরিচালনা করেন শামীম আল জাবের। এতে মেন্টরের দায়িত্ব পালন করেন নাট্যকার ও নির্মাতা রুলীন রহমান। পরে তিনি রুলীন রহমান পরিচালিত একাধিক নাটকে অভিনয় করেন। তার মধ্যে ধারাবাহিক নাটক ‘ভালোবাসা কারে কয়’, খণ্ড নাটক ‘নিকষ’ এবং টেলিফিল্ম ‘জবানবন্দী’ উল্লেখযোগ্য। তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমির নাটক বিভাগের প্রধান এবং প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। 

নাট্যাঙ্গনের প্রিয়মুখ আ জ ম কামাল

আরও পড়ুন
বিসিকের উদ্যোগে ‘টাকার রং কালো’র সফল মঞ্চায়ন

জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের পরিচিত মুখ তিনি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। গ্রাম থিয়েটারের বিস্তৃতিকল্পে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বর্তমানে ‘মাদারীপুর থিয়েটার’ নামে নাট্যদলের হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা। ১৯৯৩ সালে উদীচী মাদারীপুর জেলা সংসদের পক্ষ থেকে ‘শ্রেষ্ঠ মেকাপ আর্টিস্ট’ সনদপত্র পান। ২০১০ সালে প্রথমা রঙ্গমঞ্চ কালকিনি নাট্যাঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখায় সম্মাননা দেওয়া হয়। ২০১১ সালে শুভাকাশ ইশারা মাদারীপুর থেকে সম্মাননা পান। ২০১৩ সালে জেলাভিত্তিক ‘শিল্পকলা পদক’ লাভ করেন। এ ছাড়া আবৃত্তি ও উপস্থাপনা সংগঠন মাত্রা তাকে সম্মাননা দেয়।

নাট্যাঙ্গনের প্রিয়মুখ আ জ ম কামাল

মাদারীপুরের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য তিনি। তারা ৪ ভাই, ৩ বোন। বড় ভাই আ জ ম জালালকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার স্ত্রী একজন চাকরিজীবী। বড় মেয়ে বুশরাতুল জান্নাহ অন্তরা আবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত, ছোট মেয়ে হুমায়রা বিনতে কামাল রুশমিয়া অভিনয় করতে পছন্দ করেন। পরিবারের সবাই বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তিনি মাদারীপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আস্থা এবং ভরসার প্রতীক হয়ে ওঠেন। নাট্যকর্মীদের বিপদে-আপদে তিনি সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করেন।

সাহিত্য অঙ্গনেও তার পদচারণা রয়েছে। তিনি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে নাট্যকলার ওপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করে থাকেন। নাট্যদল গঠনে প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎসাহিত করেন। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের এই প্রিয় ব্যক্তিত্বকে ৭০তম জন্মদিনে অশেষ শ্রদ্ধা ও ফুলেল শুভেচ্ছা। তার জন্মদিন উপলক্ষে মাদারীপুরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন শুভেচ্ছা জানিয়েছে।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন