ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

বিশ্ব অটিজম দিবস

তারাও আমাদের মতো মানুষ

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:৪২ পিএম, ০২ এপ্রিল ২০২৫

সানজানা রহমান যুথী:

আজ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। প্রতিবছর ২ এপ্রিল দিনটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়, যার সূচনা ২০০৮ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে। অটিজম আক্রান্ত শিশু ও ব্যক্তিদের প্রতি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এ বিশেষ দিনের প্রচলন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যমতে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ অর্থাৎ ১৭৫ মিলিয়ন মানুষ অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে (ASD) আক্রান্ত। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, পৃথিবীতে প্রতি ১০০ জনে একজন অটিস্টিক।

অটিজম কি?
অনেকেই অটিজমকে মানসিক রোগ বা পাগলামি মনে করেন, কিন্তু এটি একদমই ভুল ধারণা। অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়; এটি মস্তিষ্কের বিকাশজনিত একটি বিশেষ অবস্থা, যা সাধারণত শিশুর জন্মের ১৮ মাস থেকে ৩ বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়। অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়—

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

>> তারা বারবার একই কাজ করতে ভালোবাসে।
>> অন্যের ডাকে সাড়া না দেওয়ার প্রবণতা থাকে।
>> নির্দিষ্ট পছন্দের খাবার ছাড়া অন্য কিছু খেতে চায় না।
>> একা থাকতে পছন্দ করে এবং সামাজিক মেলামেশায় অনীহা দেখায়।
>> কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক কিছু বলে ফেলে।
>> অনেক সময় শব্দ বা বাক্য বারবার বলতে থাকে।

কেন হয় অটিজম?
অটিজম হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ আজও পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে গবেষণায় বলা হয়, এটি মূলত জিনগত ও পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে। পিতা-মাতার জিনগত সমস্যার পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় কিছু বিশেষ বিষয় অটিজমের কারণ হতে পারে, যেমন—

বিজ্ঞাপন

>> গর্ভকালীন মানসিক চাপ
>> সংক্রমণ বা ভাইরাসজনিত সমস্যা
>> অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার
>> দূষিত পরিবেশ ও রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ

অটিজম কি নিরাময়যোগ্য?
এখন পর্যন্ত অটিজমের কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই। তবে সঠিক থেরাপি, কাউন্সেলিং ও বিশেষ শিক্ষার মাধ্যমে অটিস্টিক ব্যক্তিদের ৯০-৯৫% পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবনের ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অটিজমে আক্রান্ত কিছু শিশু অত্যন্ত মেধাবী হয়। গণিত, সংগীত, চিত্রকলা বা বিজ্ঞান—কোনো না কোনো ক্ষেত্রে তারা অসাধারণ দক্ষতা দেখাতে পারে। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ও চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগের মতো অনেক প্রতিভাবান মানুষও ছিলেন অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারের অধিকারী।

আমাদের সমাজ ও অটিজম
দুঃখজনকভাবে আমাদের সমাজে এখনো অটিজম সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতা নেই। অনেকেই অটিস্টিক শিশুদের 'পাগল' বা 'অভিশপ্ত' বলে কটাক্ষ করে। এমনকি তাদের মায়েদের 'অপয়া' বলে দোষারোপ করা হয়। সামাজিক অবহেলা ও অবজ্ঞার কারণে অনেক অভিভাবক নিজেদের সন্তানের অটিজম লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হন। ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হয় শিশুরা।

বিজ্ঞাপন

অটিস্টিক শিশুদের প্রতি ভুল আচরণ করলে তাদের সমস্যাগুলো আরও প্রকট হয়ে ওঠে। বিশেষ করে সমবয়সী শিশুরা যখন মিশতে চায় না বা দূরে সরিয়ে রাখে, তখন তারা আরও বেশি একা হয়ে পড়ে। অথচ একটু সহযোগিতা ও সহানুভূতিশীল আচরণ তাদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সচেতনতার আলো ছড়িয়ে দেওয়া হোক
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে নীল রঙকে প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা বোঝায় প্রশান্তি, বোঝাপড়া ও গ্রহণযোগ্যতা। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো এদিন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করে। কিন্তু শুধু ২ এপ্রিল দিনটিকে ঘিরেই সচেতনতা সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। আমাদের প্রতিদিনের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে।

অটিস্টিক শিশু বা ব্যক্তিরা সমাজের বোঝা নয়; তারা আমাদেরই অংশ। তাদের প্রতি দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিলে, তারা নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাবে। আসুন, সবাই মিলে অটিস্টিক শিশুদের পাশে দাঁড়াই এবং সমাজকে আরও সহমর্মিতাপূর্ণ করে তুলি। কারণ তারাও আমাদের মতো মানুষ, তারাও ভালোবাসা ও সম্মানের অধিকারী।

বিজ্ঞাপন

জেএস/জেআইএম

বিজ্ঞাপন