ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

কেমন কাটলো মফস্বল গণমাধ্যমকর্মীদের ঈদ

মোহাম্মদ সোহেল রানা | প্রকাশিত: ১১:৩০ এএম, ০৮ জুন ২০২৫

পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ির টানে রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রামে ছুটে এসেছেন বেশিরভাগ মানুষ। ঈদের ছুটিতে সবাই যখন পরিবার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন; ঠিক তখনো মফস্বল গণমাধ্যমকর্মীরা নিজ জেলায় বসবাস করেও পরিবারকেও সময় দিতে পারেন না। জেলার নানাপ্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা সবার মাঝে তুলে ধরতে বিশেষ এই দিনেও কাজ করছেন।

‘কেমন কাটলো মফস্বল গণমাধ্যমকর্মীদের ঈদ’- আজকের আয়োজনের মাধ্যমে তা তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ সোহেল রানা-

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জাতীয় পত্রিকা ঈদের ছুটিতে প্রকাশ না হলেও টেলিভিশনের সংবাদ পরিবেশের কার্যক্রম থেমে নেই। একই সঙ্গে প্রিন্ট মিডিয়ার অনলাইন ও ডিজিটাল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, রেডিও স্টেশনগুলোতে ঈদের দিনেও ২৪ ঘণ্টা সংবাদ পরিবেশন চলে। এতে অফিস কর্মীদের জন্য নির্ধারিত কর্মঘণ্টা থাকলেও মফস্বল গণমাধ্যমকর্মীদের তা নেই। তাই ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত ব্যতিক্রমী খবরসহ জেলার ঘটে যাওয়া ঘটনা সবার মাঝে তুলে ধরতে বিশেষ এই দিনেও কাজ করছেন। নিজ জেলায় বসবাস করেও পরিবারের পরিবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারছেন না। কেউবা ঈদের নামাজও পড়েছেন অন্য এলাকায়। যুগের পর যুগ ধরে এভাবেই সংবাদের খোঁজে ছুটে চলছেন মফস্বল গণমাধ্যমকর্মীরা।

শুভ্র মাহাদী
জামালপুর প্রতিনিধি, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও ডিবিসি
ঢাকায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা আলাদা আলাদা বিটে কাজ করেন এবং তাদের জন্য নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে। এছাড়া তারা বেতন বাদেও বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে মফস্বলের ক্ষেত্রে পুরো উল্টো। তারা আলাদা কোনো বিটে নয় সব ধরনের কাজ করেন। এছাড়া ঈদের সময় আসলে আমাদের কাজের চাপ বেড়ে যায়। বিশেষ করে কোরবানি ঈদে দম ফেলার সময়ও মেলে না। পশুর হাটের খবর নিয়ে চলে ব্যস্ততা। শুধু তাই নয় ঈদের আনন্দও পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করার সুযোগ হয় না। এতে পরিবারের সদস্যরা রাগ ও অভিমান করে থাকে। কয়েক বছর আগে বন্যার সময় কোরবানির ঈদ হয়। বন্যার্তদের খবর ও কোরবানির চিত্র তুলে ধরতেই ঈদের দিন কেটে গেছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সব মিলিয়ে মফস্বলের সাংবাদিকরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন। তবে সেই হিসেবে তেমন সুযোগ সুবিধা পায় না। কিছু কিছু মিডিয়া বেতন ভাতা দিলেও বেশিরভাগ মফস্বল সাংবাদিকরা এ থেকে বঞ্চিত। ঈদের সময় একদিকে যেমন পরিবারের সদস্যদের সময় দিতে পারে না অন্যদিকে নতুন জামাও অনেকেই কিনে দিতে পারে না। তবুও থেমে নেই তাদের কাজ ও দায়িত্ব পালন। তাই ঢাকায় যারা অফিস পরিচালনা করেন তাদের প্রতি জোর দাবি করছি মফস্বল সাংবাদিকদের বেতন ও ভাতা ব্যবস্থা করার। এতে কাজের প্রতি দায়িত্ব ও ভালোবাসা আরও বেড়ে যাবে।

ওসমান হারুনী
জামালপুর প্রতিনিধি, মোহনা টিভি
আসলে মফস্বল সাংবাদিকদের ঈদেও পরিবারকে সময় দেওয়া হয় না। সবার ঈদের আনন্দ তুলে ধরতেই দিন কেটে যায়। নিজের আবেগ, অনুভূতি বিসর্জন দিয়ে এভাবে বছরের পর বছর কাজ করতে হয় গণমাধ্যমকর্মীদের। তবে মফস্বলের বেশিরভাগ সাংবাদিকরা অফিস থেকে ঈদ বোনাস বা অন্য সুবিধাগুলো তেমন পায় না। তাই জোর দাবি করছি অফিস থেকে সামান্য হলেও কিছু দেওয়ার। এতে একটু হলেও মনে আলাদা প্রশান্তি মিলবে সাংবাদিকদের ও তাদের পরিবারে। একই সঙ্গে কাজের গতি আরও বাড়িয়ে তুলবে। এর ব্যতিক্রমও রয়েছে কিছু অফিস, যারা বোনাসসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপলক্ষে ভাতাও প্রদান করে।

বিজ্ঞাপন

সাইমুম সাব্বির শোভন
জামালপুর প্রতিনিধি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি
আমার বাবাও সাংবাদিক ছিলেন, তাই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি ঈদে তিনি আমাদের সময় দিতে পারতেন না। অনেক ঈদ গেছে একসঙ্গে নামাজও পড়া হয়নি। ঘুরাঘুরি বা ঈদ আনন্দ বাবাকে ছাড়াই করতে হয়েছে। তবে বাবার সাংবাদিকতার কাজ করা দেখতে দেখতে একটা সময় নিজের অজান্তেই এই পেশার প্রতি নেশা জন্ম নেয়। বাবা মারা যাওয়ার পর পুরোপুরিভাবে এই পেশায় যুক্ত হই। মফস্বল সংবাদকর্মীদের কোনো সময়ই কাজ থেমে থাকে না, ২৪ ঘণ্টাই খবরের পেছনে ছুটতে হয়। তাই বাবার মতো আমিও ঈদের দিনেও পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এমনো ঈদ গেছে বন্যার কারণে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেছি। তবে জেলার সমস্যার চিত্র ও অসহায় মানুষের কথা এবং অন্যদের ঈদের আনন্দ তুলে ধরার মাঝেই সুখ খোঁজে পাই।

সাগর ফরাজী
জামালপুর প্রতিনিধি, বাংলানিউজ, যমুনা টিভি
দীর্ঘ আট বছর রাজধানীসহ এর অদুরে সাভারে সাংবাদিকতা করেছি। তখন এই দুই ঈদে বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করা অনেকটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল। কখনো কখনো দুই ঈদের একটিতেও গ্রামে আসা হয়নি। তবে প্রায় দুই বছর ধরে জামালপুরে চলে আসার পর কিছুটা সুযোগ হয়েছে পরিবারের কাছে থাকার। কিন্তু মফস্বলে কাজ করে এখনো ঈদে পরিবারে সময় দেওয়াটা কষ্ট হয়ে যায়। সত্যি বলতে আমাদের ছুটি নেই। নেই ডিউটির সময় বাঁধা। ডে ইভেন্ট ও স্টোরির পেছনে ছুটতে ছুটতে কখন যে ঈদের সময়গুলো চলে যায় বোঝা যায় না।

এটি নিয়ে অবশ্য পরিবারের আক্ষেপ নেই। পরিবারের লোকজন আগে একেবারেই দেখতে পেতো না, এখন তো তাও আশপাশে থাকি। এতেই পরিবার খুশি। সংবাদের পেছনে ছুটে চলা আমি বা আমার জন্য পরিবার এইটুকু ত্যাগ করে আমি এতেই খুশি। তাই আমাদের ঈদ বা আনন্দ কাজের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে, সেটাকেই আমরা খোঁজার চেষ্টায় রাতদিন ২৪ ঘণ্টা।

বিজ্ঞাপন

শফিকুল ইসলাম
ক্যামেরাপার্সন, জামালপুর
স্বাভাবিক দিনের মতোই কাজের মাধ্যমেই কাটে ঈদ। অন্যদের ঈদের আনন্দ ক্যামেরা বন্দি করতেই বেলা শেষ হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে অন্যদের হাসি আনন্দ ও দুঃখের চিত্র তুলে ধরতে ক্যামেরা নিয়ে ছুটে চলছি জেলাজুড়ে। তবে এত কষ্ট করলেও সেভাবে মূল্যায়ন মিলে না। মফস্বল পর্যায়ে হাতেগোনা কয়েকটা মিডিয়ার ছাড়া বেশিরভাগই ক্যামেরাপার্সন নিয়োগপ্রাপ্ত নয়। তাই জেলা প্রতিনিধির থেকে বেতন ভাতার মাধ্যমেই চলতে হয়। তবে যা দেয় তাও সীমিত। ঈদের সময় আসলে একদিকে যেমন কাজের চাপ বাড়ে তেমনি কপালে ভাঁজ বাড়ে।

ঈদে পাওয়া বোনাস দিয়ে পরিবারের চাহিদা মোটেও পূরণ করতে পারি না। কখনো ঈদের জামা ছাড়াই ঈদ করতে হয়। নিজ ক্যামেরায় জেলার অনেকের কথা ওঠে আসলেও নিজের কথাগুলো লুকাইত থেকে যায়। তাই ক্যামেরাপার্সনদের নিয়োগ, বেতন ও অন্য সুযোগ- সুবিধার দাবি করছি।

কেএসকে/জেআইএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন