৩৫টি সাপ উদ্ধারের রোমাঞ্চকর গল্প জানালেন সহিদুল

সাজেদুর আবেদীন শান্ত
বন্য প্রাণী ও সাপ উদ্ধারে কাজ করছেন সহিদুল ইসলাম। ছোটবেলা থেকেই সাপসহ অন্য বন্য প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা-ভালো লাগা কাজ করে তার। তিনি মনে করেন, পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর নিজ নিজ পরিবেশে বাঁচার অধিকার আছে। যেকোনো প্রাণীর প্রাণ রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। তাই তিনি প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করতে আগ্রহী হন।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের স্নেক এক্সপার্ট ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক বোরহান বিশ্বাস রুম্মনের সহযোগিতায় ও অনুপ্রেরণায় সাপ উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলা থেকে স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কঞ্জারভেশন সেন্টার থেকে সাপ উদ্ধারেরর ওপর প্রশিক্ষণ নেন।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
সহিদুল ইসলাম গত আট মাসে প্রায় ৩০-৩৫টি সাপ উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছেন। তার উদ্ধার ও অবমুক্ত করা সাপগুলোর মধ্যে রয়েছে- জল ঢোড়া, হেলে, গুইসাপ, সিন্ধু কালাচ, কৃষ্ণ কালাচ, খৈয়া গোখরো, বেত আচড়া, দুধরাজ, দাড়াশ, শাখামুটি ও রেড কোরাল কুকরি।
জীবনে প্রথম বিষধর সাপ ধরতে গিয়ে সহিদুলের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ। শোয়ার ঘরের খাটের নিচে মারাত্মক বিষধর সিন্ধু কালাচ সাপটি উদ্ধার করার সময় অনভিজ্ঞতার কারণে দুবার ছোবল দেয়। সৌভাগ্যবশত পায়ে গামবুট থাকায় বেঁচে যান সহিদুল। সহিদুল জানান, এটি তার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৮ ফেব্রুয়ারি একটা মজার ঘটনা ঘটে বিরল প্রজাতির রেড কোরাল কুকরি সাপ ধরতে গিয়ে। এটি খুবই বিরল প্রজাতির একটি সাপ, যা পৃথিবীতে মাত্র ২০ থেকে ২২ বার দেখা গেছে।’
তিনি বলেন, ‘পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার একটি বাজারের কাছে একটি নির্মাণাধীন ভবনে এক্সাভেটর দিয়ে মাটি কাটছিলেন নির্মাণ শ্রমিকরা। হঠাৎ বেরিয়ে আসে কয়েকটি সাপ। ভেতরে আরও সাপ থাকতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে তারা দ্রুত আমাকে খবর দেন। আমি গিয়ে সেখান থেকে আটটি সাপ উদ্ধার করি। যার মধ্যে একটি ছিল রেড কোরাল কুকরি।’
বিজ্ঞাপন
বোদা উপজেলার যে জায়গায় রেড কোরাল কুকরি সাপটি পাওয়া গেছে, সেটি বেশ প্রত্যন্ত একটি গ্রাম। এক্সাভেটরের আঘাতে পেটের কাছে কেটে সাপটির নাড়িভুড়ি বের হয়ে গিয়েছিল। সাপটির প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টারে হস্তান্তর করা হয়েছে। সাপটি এখন চিকিৎসাধীন। সুস্থ হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারে পাঠানো হবে।
সহিদুল জানান, সাপ ধরতে গিয়ে মজার থেকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বেশি। অনেকে তাকে ‘সাপুড়িয়া’ বলে তুচ্ছ্তাচ্ছিল্য করেন। বিভিন্ন ভাবে অসহযোগিতা করেন।
তিনি ২০০৪ সালে নতুন হাট সফিউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০০৬ সালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পাথররাজ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৫ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসএস শেষ করেন।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে সহিদুল একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। পাশাপাশি চাকরিবিষয়ক কোচিং সেন্টারে পার্ট টাইম শিক্ষকতা করেন। তিনি ২০০৮ সালে বিয়ে করেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে ও স্ত্রী জান্নাতুন ফেরদৌসকে নিয়ে তার সংসার।
সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ইকোলজি সিস্টেম ঠিক রাখতে জীববৈচিত্র্যের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। বাস্তুসংস্থান ও খাদ্যশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও সরকারকে সচেতনতামূলক বিভিন্ন প্রোগ্রাম করতে হবে। জনগণকে সচেতন করা ও সাপসহ বন্য প্রাণী রক্ষায় আমি কাজ করে যেতে চাই।’
বিজ্ঞাপন
লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী।
এসইউ/জিকেএস
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন