কক্সবাজারের এক অপরূপ দ্বীপ মহেশখালী
মহেশখালীর দর্শনীয়স্থান, ছবি: জান্নাত শ্রাবণী
মহেশখালী বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা দ্বীপ, যা সমুদ্রের কোলে চমৎকারভাবে অবস্থিত। কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে এই দ্বীপ। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, ১৫৫৯ সালের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পর মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সৃষ্টি হয় এই স্বপ্নসদৃশ দ্বীপ। ইতিহাসে এক সময় এই এলাকায় বৌদ্ধ সেন মহেশ্বরের প্রভাব দেখা যেত এবং তার স্মরণে দ্বীপের নামকরণ হয় মহেশখালী।

মহেশখালী উপজেলায় সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা নামে তিনটি ছোট দ্বীপও রয়েছে। এই অঞ্চল বিখ্যাত তার পান, মাছ, চিংড়ি, শুঁটকী, লবণ ও মুক্তার জন্য। সমগ্র বাংলাদেশে মহেশখালী উপজেলাকে এর উৎপাদনশীলতা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সুপরিচিত। কক্সবাজার থেকে মাত্র ৪–৫ ঘণ্টার ভ্রমণে আপনি মহেশখালীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

মহেশখালী হলো বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ। এখানে মৈনাক পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত আদিনাথ মন্দির, যা অতি প্রাচীন এবং ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে এখানে আদিনাথ মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।

দ্বীপে আছে রাখাইন পাড়া। যেখানে রাখাইন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এছাড়া দর্শনার্থীদের নজরকাড়ে স্বর্ণ মন্দির। যার স্থাপত্য ও ভাস্কর্যশিল্পের দিক থেকে অসাধারণ।

দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ মাতারবাড়ী সমুদ্র সৈকত। যে সৈকতের শান্ত ও মনোরম পরিবেশ দেয় আলাদা আনন্দ, যেখানে সূর্যাস্তের দৃশ্য এক অদ্ভুত অনুভূতি দেয়। এছাড়া রয়েছে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

এই দ্বীপের আরেটি পরিচিত স্থান হচ্ছে শুটিং ব্রিজ। ম্যানগ্রোভ বনের উপর দিয়ে নির্মিত এই সেতু পর্যটকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
চরপাড়া বীচ এবং ঝাউবাগানও পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পথে পথে চোখে পড়বে পান গাছের বাগান এবং লবণের মাঠ। মহেশখালীর পান সমগ্র বাংলাদেশে সুপরিচিত, তাই দ্বীপে আসলে একবার অবশ্যই পান চিবিয়ে দেখার পরামর্শ। দ্বীপের পাশে অবস্থিত সোনাদিয়া দ্বীপ ক্যাম্পিং প্রেমীদের জন্য স্বর্গসদৃশ। প্রকৃতির কোলে রাতের আকাশের তারাভরা দৃশ্য উপভোগ করতে এখানে ভিড় করে থাকেন।

মহেশখালী পৌঁছানো তুলনামূলক সহজ। কক্সবাজার শহর থেকে নদীপথে বা চকরিয়া উপজেলার সড়কপথ দিয়ে যাওয়া যায়। ভ্রমণের পরিকল্পনা করার সময় কোন পথে যাওয়া হবে তা আগে ঠিক করা জরুরি।

ঢাকা বা দেশের যে কোনো জেলা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছানো যায় বাস, ট্রেন বা বিমানের মাধ্যমে। যদি সরাসরি কক্সবাজারে পৌঁছানো সম্ভব না হয়, তবে প্রথমে চট্টগ্রাম আসতে হবে এবং সেখান থেকে বাস বা ট্রেনে কক্সবাজার যাত্রা করতে হবে। কক্সবাজার পৌঁছে, সহজেই ৪–৫ ঘণ্টার মধ্যে মহেশখালী দ্বীপে পৌঁছানো সম্ভব।

মহেশখালী শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং স্থানীয় জীবিকার এক অনন্য সমন্বয়। একবার এখানে এসে আপনি বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হবেন, যা আপনার হৃদয়ে চিরকাল ছাপ রেখে যাবে।
জেএস/জিকেএস