ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

শিশু হাসপাতালের সেবার মানে অভিযোগ না থাকলেও রয়েছে চোরের উপদ্রব

অভিজিত রায় (কৌশিক) | প্রকাশিত: ০৪:৫৭ পিএম, ০৮ আগস্ট ২০২৫

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিতে দূর-দূরান্ত থেকে আসে রোগী। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত শিশুদের চিকিৎসার মান নিয়ে অভিযোগ নেই। ভোগান্তি নিয়েও তেমন অভিযোগ নেই রোগীর স্বজনদের। তবে এই হাসপাতালে চোরের উপদ্রব রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সরেজমিনে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র চোখে পড়ে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সূর্য ওঠার পর থেকেই হাসপাতালে বাড়তে থাকে রোগী ও স্বজনদের আনাগোনা। টিকিট কাউন্টারের সামনে দেখা যায় রোগীর স্বজনদের ভিড়। কাউকে কাউকে আবার ওয়েটিং রুমে বসে থাকতেও দেখা গেছে। হাসপাতালে কর্মরত নার্স, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনার ও সিকিউরিটি গার্ডদেরও নিজ নিজ দ্বায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।

ময়মনসিংহ থেকে সাড়ে ৪ বছরের শিশু রাহিতকে নিয়ে শিশু হাসপাতালে এসেছেন মো. আলম। রাহিতের কিডনি-জনিত সমস্যা রয়েছে। জাগো নিউজকে আলম বলেন, বাচ্চার কিডনির সমস্যা হয়েছে। আজ নিয়ে ৪ দিন হাসপাতালে আছি। চিকিৎসা নিতে এসে কোনো ধরনের ঝামেলা বা ভোগান্তি হয়নি। ঠিকঠাক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি।

শিশু হাসপাতালের সেবার মানে অভিযোগ না থাকলেও রয়েছে চোরের উপদ্রব

তিনি বলেন, থাকার জায়গার একটু সমস্যা আছে। ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় ঘুমিয়ে রাত কাটাতে হয়। কিন্তু এখানে চোর আছে। গত রাতেও এখান থেকে ২টা মোবাইল ফোন চুরি হয়েছে।

যদিও হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের মোবাইল ফোন চুরির ঘটনা নতুন কিছু নয়। অনেকেই জানান, মাঝে মধ্যেই মোবাইল ফোন, মানিব্যাগসহ বিভিন্ন কিছু চোরে নিয়ে যায়। এতে বিভিন্ন সময়ে সমস্যায় পড়তে হয় রোগীর স্বজনদের।

টাঙ্গাইল থেকে মোহাম্মদপুরে মায়ের বাসায় ঘুরতে এসেছেন সুবর্ণা আক্তার। এখানে আসার পর তার ২ বছর এক মাস বয়সী ছেলে সাফায়েত হোসেন সাইফ ডায়রিয়া-জনিত সমস্যায় পড়েছে।

জাগো নিউজকে সুবর্ণা আক্তার বলেন, বাচ্চার পেটের সমস্যা হয়েছে, সকালেই ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছি। আসার পর ডাক্তার দেখিয়েছি, বলেছেন ভর্তি করতে। ভর্তি করলে তারপর চিকিৎসা শুরু হবে। তবে হাসপাতালে আসা, ডাক্তার দেখানো পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। সবকিছু ঠিক আছে। ডাক্তারও ভালোভাবে রোগী দেখেছেন।

রাজধানীর রায়েরবাগ থেকে ২১ মাস বয়সী শিশুকন্যা আফরিনকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন আলমগীর হোসেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, হাসপাতালে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। যে সেবা পেয়েছি সরকারি হাসপাতাল হিসেবে ভালোই পেয়েছি। যখন যা লাগছে আমাকে বলছে এনে দিচ্ছি, আবার তাদের কাছে যা আছে (ওষুধ) যখন যা লাগছে তারা সময়মতো সেগুলো দিচ্ছে। এখানে আসার পর থেকে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি। রোগীর অবস্থাও উন্নতির দিকে।

সাভার থেকে সাড়ে ৭ মাস বয়সী মেহেরিনকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন তার বাবা জাহিদ। তিনি বলেন, আজ তিনদিন হলো বাচ্চার জ্বর। তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছি। এসে কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। তবে নার্সদের আচরণে নিজের অসন্তোষের কথা জানান জাহিদ।

জয়পুরহাট থেকে ২ বছর ৩ মাস বয়সী মুনিমকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মা সাথী। শিশুটির মলদ্বারে সমস্যা থাকায় ধাপে ধাপ তিনবার অপারেশন করা লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এক বছর আগে প্রথম ধাপে অপারেশন করা হয়। এখন দ্বিতীয় ধাপে অপারেশনের জন্য শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন তার মা।

হাসপাতালে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কি না জানতে চাইলে জাগো নিউজকে সাথী বলেন, আমরা এখান থেকেই প্রথম অপারেশন করেছি। এরপর আবার আসলাম, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।

শিশু হাসপাতালের সেবার মানে অভিযোগ না থাকলেও রয়েছে চোরের উপদ্রব

চোরের উপদ্রবের বিষয়ে জানতে চাইলে শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মাহমুদুল হক চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, সারাদিন এখানে রোগীর ভিড় থাকে, অধিকাংশই গ্রাম থেকে আসেন। কাছে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র তারা ঠিকঠাকভাবে রাখেন না। অসচেতনতার কারণে মূলত চুরি হয়।

তিনি বলেন, প্রতিমাসেই এমন দু-একটা ঘটনা ঘটেই। এছাড়া কিছু অসাধু মানুষ তো আছেই। তারা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন কাজের নামে টাকা নেয়। ওরা তো প্রতারক। ওরা ওদের মতো কনভিন্স করে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়।

এদের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না জানতে চাইলে মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের হাসপাতালে আনসারের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করে, তারা সবসময় পাহারায় থাকেন। যদিও আগের থেকে অনেকটা কমে গেছে, তারপরও মাসে দু-একটা এমন ঘটনা ঘটে। আউটডোরে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী ভর্তির জন্য আসে। রোগীর স্বজনরা যদি সাবধান থাকেন তাহলে আর এগুলো হয় না। তারপরও আমরা আমাদের টিমের মাধ্যমে সবসময় সতর্ক অবস্থানে থাকি।

কেআর/কেএসআর/এএসএম