ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স রিপোর্ট

৪৬ হাজার নমুনায় বহু অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১১:৪৫ এএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএমইউ) গত এক বছরে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের মাধ্যমে ৪৬ হাজার ২৭৯টি রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করেছে। এতে দেখা গেছে, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, সেফট্রিয়াক্সন, জেনটামাইসিন, মেরোপেনেম, টিগেসাইসিলিনসহ বহু অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি রোগীদের দেহে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়েছে। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিকের এই অকার্যকারিতা চিকিৎসা জটিলতা বাড়াচ্ছে, সংক্রমণ দীর্ঘায়িত করছে এবং মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিএমইউতে বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) রিপোর্ট ২০২৪–২৫ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। এ বছর সচেতনতা সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ছিল- ‌‘এখনই পদক্ষেপ নিন, আমাদের বর্তমানকে রক্ষা করুন, আমাদের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করুন।’

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। সভাপতিত্ব করেন মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার। ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে মানবজাতি আবার এমন সংকটে পড়তে পারে, যেখানে ওষুধ থাকবে, কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সেগুলো আর কাজ করবে না।’

রিপোর্টটি উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহেদা আনোয়ার। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৪৬ হাজার ২৭৯টি নমুনার মধ্যে ২৪ শতাংশ ছিল কালচারে পজিটিভ। প্রস্রাবের নমুনায় সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে E. coli, আর রক্তের নমুনায় Salmonella Typhi সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে। স্যালমোনেলা টাইফিতে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন রেজিস্ট্যান্স সর্বাধিক, যদিও ক্লোরামফেনিকল ও ট্রাইমেথোপ্রিম-সালফামেথক্সাজলের প্রতি রেজিস্ট্যান্স তুলনামূলক কম।

E. coli-তে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও অ্যামোক্সিসিলিনের রেজিস্ট্যান্স বেশি হলেও মেরোপেনেম ও টিগেসাইসিলিন এখনো কার্যকর। তবে ক্লেবসিয়েলা ও অ্যাসিনেটোব্যাক্টার প্রজাতিতে সেফট্রিয়াক্সন, জেনটামাইসিন এবং কার্বাপেনেমের প্রতি রেজিস্ট্যান্স উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। Acinetobacter-এ প্রায় সব প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকই কম কার্যকর- এমনকি মেরোপেনেম ও টিগেসাইসিলিনেও রেজিস্ট্যান্স বাড়ছে।

ফাঙ্গাল সংক্রমণেও রেজিস্ট্যান্সের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আইসিইউ রোগীদের ক্যান্ডিডেমিয়ায় Candida tropicalis এবং Candida albicans বেশি পাওয়া যায়, যেখানে ফ্লুকোনাজল রেজিস্ট্যান্স লক্ষণীয়।

উপস্থিত বক্তব্যে বিএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম বলেন, ‘এএমআর মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নেতৃত্ব নিতে হবে। যেসব সমস্যার সমাধান নেই, তারও সমাধানের পথ খুঁজে বের করা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব।’ প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, এখনই উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার বলেন, অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, অসম্পূর্ণ ডোজ ও livestock–এ অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে জীবাণুগুলো ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। ‘হাত ধোয়া, টিকাদান, পরিচ্ছন্নতা-এসবই এএমআর প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে,’ তিনি উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন। রিপোর্ট প্রস্তুত ও তথ্য সংগ্রহে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক, এমডি রেসিডেন্ট ও ল্যাব টেকনোলজিস্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অনুষ্ঠানে এএমআর–বিষয়ক পোস্টার প্রেজেন্টেশনে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।

বিএমইউর এই বিস্তৃত রিপোর্টে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধির যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য নতুন সতর্কবার্তা-এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে চিকিৎসা আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

এসইউজে/এমআরএম/জেআইএম