ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

হাসপাতাল যখন সরকারি-১

ফ্রি মেশিনে চুরির কারখানা

সালাহ উদ্দিন জসিম | প্রকাশিত: ০৭:৫৭ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

হাসপাতালে চিকিৎসক রোগী দেখে প্রয়োজনে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। এসব পরীক্ষা করতে দরকার হয় বড় বড় মেশিন ও রাসায়নিক। একেক পরীক্ষার জন্য একেক রাসায়নিক লাগে। এগুলোকে বলা হয় রিএজেন্ট। মেশিন ও রিএজেন্ট—সবই বিদেশ থেকে আনতে হয়। উন্নত বিশ্বের নামি-দামি কোম্পানিগুলো স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে এসব রপ্তানি করে। কিন্তু মেশিনগুলো বেশ দামি হওয়ায় আমাদের মতো গরিব দেশের হাসপাতালগুলো সব কিনতে পারে না। তাই কোম্পানিগুলো একটা বুদ্ধি বের করেছে। সরকারি-বেসরকারি অনেক হাসপাতালে তারা এসব মেশিন অনুদান বা উপহার হিসেবে দেয়। কিন্তু যে কোম্পানির মেশিন, সেই কোম্পানিরই রিএজেন্ট লাগে, নইলে পরীক্ষা হবে না। তাই মেশিন ফ্রি দিয়ে বাধ্য করে রিএজেন্ট কিনতে। এভাবে তারা রিএজেন্টের ব্যবসাটা একচেটিয়া করে নেয়।

এ পর্যন্ত কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু সমস্যা পরে হলোই! অসাধু ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ক্যাডার, মধ্যস্বত্বভোগী আর হাসপাতালের স্বার্থান্বেষী লোকজন মিলে গড়ে তুলেছে দুর্নীতির এক বিশাল চক্র। অতি সঙ্গোপনে সূক্ষ্ম কারসাজির মাধ্যমে তারা লুটে চলেছে রাষ্ট্রের টাকা। দীর্ঘ অনুসন্ধানের মাধ্যমে জাগো নিউজ তুলে এনেছে এই দুর্নীতির সম্পূর্ণ এক অজানা গল্প। দুই পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব আজ—

৭ আগস্ট, বিকেল সোয়া ৫টা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট (এনআইসিভিডি) ও হাসপাতাল। দক্ষিণ ব্লকের সামনে ১ নম্বর গেটে দেখা গেলো, একটি নীল রঙের পিকআপ দাঁড়িয়ে। আলো-আঁধারে নামানো হচ্ছে মালপত্র—কিছু কার্টন, কিছু মেশিনারিজের প্যাকেট। সেগুলো সিসিইউর সামনে দিয়ে তড়িঘড়ি করে নেওয়া হচ্ছে প্যাথলজি বিভাগে।

আশপাশে লোকজন আছে, তবে পরিবেশ থমথমে। সবার চালচলন-আচরণ একটু অস্বাভাবিক। কেমন যেন সন্দেহজনক! যারা ট্রলি ঠেলে মালপত্র নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে অন্তত দুটি পরিচিত মুখ দেখে খটকা আরও বাড়লো। এদের একজন এই হাসপাতালেরই প্যাথলজি বিভাগের প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ খান এবং অন্যজন ল্যাব ইনচার্জ গনেশ চন্দ্র তরফদার। কুলি বা কোম্পানির লোক বাদ দিয়ে এই কর্মকর্তারা কেন ট্রলি ঠেলছেন, এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন সতর্ক ভঙ্গিতে?

আমরাও কাজ করতে গিয়ে সরকারি ক্রয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে এমন অসামঞ্জস্য পেয়েছি। এক রিএজেন্ট বা অ্যাক্সেসরিজ একেক হাসপাতাল একেক দামে কেনে। এটা হওয়া উচিত নয়। সব জায়গায় একই দামে হওয়া উচিত। এজন্য একটি নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের উপ-পরিচালক ডা. নাজমুন নাহার

নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়ে এই কর্মযজ্ঞ চললো সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। কিন্তু কাউকে কিছু জিজ্ঞাস করার মতো অনুকূল পরিবেশ মিললো না ওই রাতের অন্ধকারে।

পরদিন সকালেই আবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। দিনভর তৎপরতার পর জানা গেলো আগের দিনের বিকেল-সন্ধ্যার রহস্যময় কর্মযজ্ঞের আদ্যোপান্ত। পিকআপভর্তি কার্টন ও প্যাকেটে নামানো হয়েছে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার আটটি মেশিন ও সরঞ্জাম। মেশিনগুলো এনআইসিভিডির প্যাথলজি বিভাগে অনুদান বা উপহার দিতে চেয়েছে এবিসি করপোরেশন, বায়োটেক সার্ভিসেস ও এসএস এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব মেশিন গ্রহণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সায় নেই। তাই একরকম ‘ব্যাকডোর’ দিয়ে মেশিনগুলো ঢোকানো হয় হাসপাতালে।

ফ্রি মেশিনে চুরির কারখানাডা. আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ খান ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট গণেশ চন্দ্র তরফদার ৭ আগস্ট সন্ধ্যার পর অননুমোদিত মেশিন হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে প্রবেশ করান। ছবি: গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত

কিন্তু কেন? এসব মূল্যবান মেশিন বিনামূল্যে কোম্পানিগুলো কেনই বা উপহার দেবে হাসপাতালে, আর সেই ফ্রি উপহার নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই বা এত রাখঢাক-লুকোচুরি কেন? এসব প্রশ্ন মাথায় নিয়ে প্রায় তিন মাস ধরে অনুসন্ধান চালায় জাগো নিউজ। বেরিয়ে আসে চমকে ওঠার মতো এক দুর্নীতির কাহিনি। অনুদান বা উপহারের মেশিনের জন্য বাজারদরের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি দামেও রিএজেন্ট কেনা হচ্ছে সরকারি হাসপাতালগুলোয়। আর এভাবে লুটে নেওয়া হচ্ছে সরকার তথা জনগণের বিপুল অর্থ।

যে মেশিন, সেই রিএজেন্ট

রোগ নির্ণয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেশিন প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মিনড্রের বাংলাদেশের পরিবেশক এবিসি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার সৌরভ জাগো নিউজকে বলেন, ‘রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রগুলোর বিশ্বব্যাপী নিয়ম হলো—যে কোম্পানির মেশিন, সেই কোম্পানির রিএজেন্টই কাজ করবে। অন্য কারও রিএজেন্ট ওই মেশিনে খাটবে না। তাই কোনো হাসপাতালে যে মেশিনই বসানো হোক, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ওই কোম্পানির রিএজেন্টই কিনতে হবে।’

আর ঠিক এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে যন্ত্র ব্যবসায়ীরা হাসপাতালগুলোর অসাধু চিকিৎসক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে গড়ে তুলেছে অতিমুনাফার এক অশুভ চক্র। যন্ত্র ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে উপহারের কথা বলে বিনামূল্যে নানান রকম যন্ত্র বসিয়ে দেন। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ওই কোম্পানির রিএজেন্টই কিনতে হয়। এই পর্যন্ত একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলেই প্রচলিত হয়ে আসছে। কিন্তু অনুসন্ধানের আরও গভীরে গিয়ে জাগো নিউজ দেখতে পায়, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অস্বাভাবিক বেশি দামে রিএজেন্ট কিনছে।

এমন বিষয় আমাদের আগে কখনো চোখে পড়েনি। আপনি যেহেতু তুলে নিয়ে এসেছেন, আমরা এখন খতিয়ে দেখবো।-স্বাস্থ্যসচিব মো. সাইদুর রহমান

গত তিন মাসে রাজধানীসহ দেশের সাতটি সরকারি হাসপাতাল, পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং যন্ত্র ও রিএজেন্ট প্রস্তুতকারী চারটি কোম্পানির হিসাব-নিকাশসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের নথি-প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়। এরপর দুজন ল্যাব স্পেশালিস্ট চিকিৎসক, দুজন বায়োকেমিস্ট ও পাঁচজন টেকনোলজিস্টের সহায়তায় সেগুলো বিশ্লেষণ করে প্রমাণ পাওয়া যায়—বাজারদরের চেয়ে অন্তত চার-পাঁচ গুণ বেশি দামে রিএজেন্ট কেনা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।

এভাবে সেই বিনামূল্যে দেওয়া যন্ত্রের দাম অল্প সময়ের মধ্যেই উসুল হয়ে যায়। তারপর শুধুই লাভ।

এখানেই থামেনি জাগো নিউজ। আরও অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে একদল মধ্যস্বত্বভোগী, যাদের কারণে হাসপাতালগুলো থেকে লুট হয়ে যাচ্ছে জনগণের স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারি ভর্তুকির বিপুল টাকা। যন্ত্র ও রিএজেন্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তিনজন কর্মকর্তা, গ্রহণকারী হাসপাতালের চারজন প্রতিনিধি আর দুজন মধ্যস্বত্বভোগীর সঙ্গে কথা বলে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে জাগো নিউজ নিশ্চিত হয়- সরকারি টাকা লুটপাটের এই কারসাজি চলছে পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে। এতে জড়িত হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা, রিএজেন্ট সরবরাহকারী ব্যবসায়ী, মধ্যস্বত্বভোগী ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আর এই কাজে তারা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক এক টেন্ডার কৌশলের আশ্রয় নিয়ে চলছে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে।

উপহারের ছড়াছড়ি

সারাদেশের কতটি হাসপাতালে অনুদানের মেশিন আছে, সে তথ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর—কোথাও পাওয়া যায়নি। তবে শীর্ষ কর্তারা বলছেন, সরকারি টাকায় কেনা মেশিন আছে সারাদেশে মোট ২৫ হাজার ৬৮৭টি। এর মধ্যে রিএজেন্ট প্রয়োজন হয় এমন মেশিনের সংখ্যা খুবই কম। রিএজেন্টের মেশিন বেশিরভাগই ফ্রিতে উপহার পাওয়া বলে জানান তারা। তবে বেসরকারি পর্যায়ে এসব মেশিনের তথ্য তাদের কাছে নেই।

আরও পড়ুন
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান/৬০০ কোটি টাকার হাসপাতাল এখন জুলাই আহতদের ‘আবাসিক হোটেল’
হাসপাতালগুলোতে জলাতঙ্কের টিকার সংকট, বিপাকে রোগীরা
দালাল-চোরের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ রোগী-চিকিৎসক

কয়েকটি সরকারি হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক জাগো নিউজকে জানান, উপহার বা অনুদান হিসেবে মেশিন দিতে ও নিতে হলে কয়েকটি প্রচলিত ধাপ পার হতে হয়। প্রথমে উপহারদাতা কোম্পানিকে হাসপাতালে আবেদন করতে হয়। সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট কমিটি মূল্যায়ন করে মতামত দেয়। এরপর সেই মতামতের ভিত্তিতে হাসপাতালের পরিচালক/তত্ত্বাবধায়ক সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সম্মতি দিলেই কেবল মেশিন হাসপাতালে এনে স্থাপন করানো হয়।

জাগো নিউজ অনুসন্ধানে পেয়েছে, দেশের ওই সাতটি সরকারি হাসপাতালে ৩৫টি অনুদানের মেশিন আছে। এর মধ্যে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ল্যাবে ১০টি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আটটি, জাতীয় কিডনি ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে চারটি, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর ল্যাবে একটি, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে একটি এবং ঢাকার শ্যামলীতে ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালে একটি অনুদানের মেশিন আছে।

আমাদের সব যন্ত্র কেনার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই বলেই উপহার গ্রহণ করা হয়। এর পেছনে কেউ লুটপাটের বন্দোবস্ত করলে অবশ্যই আমরা ধরবো।- স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম

এভাবে দেশের বেশিরভাগ মেডিকেল কলেজ-হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালগুলোতে কমবেশি আছে এই অনুদানের মেশিন। অনুসন্ধানকালে জাগো নিউজ দেখেছে, হাসপাতালগুলোয় ফ্রিতে মেশিন দেওয়ার জন্য কোম্পানিগুলো রীতিমতো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়।

৫ গুণ বেশিতে ক্রয়

সরকারি হাসপাতালগুলো ফ্রিতে যন্ত্র পেলেও রিএজেন্ট কেনে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারণ, যে কোম্পানির যন্ত্র, সেই কোম্পানির রিএজেন্টই কিনতে হয়। তাই এখানে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের কোনো প্রশ্নই আসে না। সরাসরি ওই কোম্পানি বা তাদের স্থানীয় ডিলারের সঙ্গে রিএজেন্ট কেনার চুক্তি করে ফেললেই চলে। কিন্তু এই সহজ-স্বাভাবিক পথে না গিয়ে হাঁটা হয় ঘুরপথে। আর এখানেই রয়েছে সবচেয়ে বড় রহস্য। এই রহস্য উন্মোচন হবে আগামীকাল দ্বিতীয় পর্বে। আজকের পর্বে আমরা দেখবো, কীভাবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে রিএজেন্ট কেনার বরাদ্দ থেকে টাকা লুটে নিচ্ছে স্বার্থান্বেষীরা।

অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রিএজেন্ট কেনার কার্যাদেশ (ওয়ার্ক অর্ডার)। আসুন, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের একটি কার্যাদেশ খতিয়ে দেখা যাক। এটি ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ সিএসবি এন্টারপ্রাইজের নামে ইস্যু করা হয়। ওই কার্যাদেশটির ‘মূল্য ও সরবরাহের শিডিউল’ অধ্যায় অনুযায়ী সিএসবির কাছ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক কোটি ৪৮ লাখ ১৮ হাজার ৭৮ টাকার কেমিক্যাল রিএজেন্ট ও সাপোর্টিভ সরঞ্জাম কিনেছে। এগুলো বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার, ইমিউনোলজি অ্যানালাইজার, সেল কাউন্টারসহ বেশ কয়েকটি মেশিনে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ সেহাব উদ্দিন জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন, ওই মেশিনগুলোর প্রায় সবই উপহার হিসেবে বিনামূল্যে পাওয়া।

মার্কিন বেকম্যান কুল্টার কোম্পানির তৈরি বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার (মডেল এইউ ৪৮০) মেশিনে রক্তের ৯ ধরনের ৫৫টি টেস্ট (পরীক্ষা) হয়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এই মেশিনে গ্লুকোজ (এফবিএস/আরবিএস), ক্রিয়েটিনিন, কোলেস্টেরল, এইচডিএল, এসজিপিটি, টিজি, ইউরিক অ্যাসিড টেস্ট করা হয়। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এ হাসপাতালের কেনাকাটার ফিরিস্তি থেকে বের করা হয় বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার মেশিনে কোন টেস্টের জন্য কী পরিমাণ রিএজেন্ট কেনা হয়েছে। এরপর বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ওই অর্থবছরে টেস্টপ্রতি রিএজেন্ট ও সরঞ্জাম কেনা বাবদ খরচ হয়েছে— ১. গ্লুকোজে ৭৪ টাকা ৯৫ পয়সা, ২. ক্রিয়েটিনিনে ১০০ টাকা ৮৩ পয়সা, ৩. কোলেস্টেরলে ১৩৬ টাকা ১৫ পয়সা, ৪. এইচডিএলে ১৬১ টাকা ৮২ পয়সা, ৫. এসজিপিটিতে ১২৮ টাকা ২১ পয়সা, ৬. টিজিতে ৯৩ টাকা ৪৬ পয়সা এবং ৭. ইউরিক অ্যাসিডে ১১৪ টাকা ৮০ পয়সা।

ওই একই কোম্পানির উপহার দেওয়া একই মেশিন আছে হৃদরোগ হাসপাতালেও। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এই হাসপাতালেরই পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী। সেখানে রিএজেন্ট সরবরাহ করে রেডিক্স ট্রেড লিমিটেড। সেখানকারও ২০২৪–২৫ অর্থবছরের একাধিক কার্যাদেশ এবং মোট টেস্টের সংখ্যা সংগ্রহ করে একইভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। দেখা যায়, এই হাসপাতালে ওই সাতটি পরীক্ষার প্রতিটিতে সরঞ্জামসহ রিএজেন্ট কেনায় খরচ হয়েছে যথাক্রমে ৪৫ টাকা ২৭ পয়সা, ৫৩ টাকা ৮৬ পয়সা, ৬১ টাকা ৬৬ পয়সা, ১৯২ টাকা ৫২ পয়সা, ৭৫ টাকা ২৬ পয়সা, ৭২ টাকা ০৬ পয়সা এবং ৮৫ টাকা ২৪ পয়সা।

এবার তুলনামূলক বিশ্লেষণের জন্য সংগ্রহ করা হয় বেসরকারি খাতের ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ধানমন্ডির গ্রিনভিউ হাসপাতালের ওই একই বছরের সংশ্লিষ্ট নথিপত্র। একইভাবে হিসাব-নিকাশ করে প্রায় আকাশ-পাতাল পার্থক্য পাওয়া যায়। গ্লুকোজ পরীক্ষার জন্য সরঞ্জামসহ (ওয়াশ সল্যুশন, স্যাম্পল কাপ, কন্ট্রোল, ক্যালিব্রেটর) রিএজেন্ট কেনায় খরচ টেস্টপ্রতি ইবনে সিনায় হয়েছে মাত্র ১১ টাকা ৫৪ পয়সা আর ধানমন্ডির গ্রিনভিউ ক্লিনিকে হয়েছে ১৮ টাকা ৯০ পয়সা। ক্রিয়েটিনিনের জন্য ইবনে সিনায় মাত্র ১৩ টাকা ২৪ পয়সা আর গ্রিনভিউ ক্লিনিকে ২২ টাকা ০৩ পয়সা; কোলেস্টেরলে ইবনে সিনায় ২০ টাকা ৬১ পয়সা, গ্রিনভিউয়ে ৩১ টাকা ৭১ পয়সা। এইচডিএলে ইবনে সিনায় ৯২ টাকা ৮৮ আর গ্রিনভিউয়ে ৩৯ টাকা ২১ পয়সা; এসজিপিটিতে ইবনে সিনায় ২৩ টাকা ২০ পয়সা, গ্রিনভিউয়ে ১৬ টাকা ৯৫ পয়সা; টিজিতে ইবনে সিনায় ৩৪ টাকা ১৫ পয়সা, গ্রিনভিউয়ে ৩৫ টাকা ৩১ পয়সা এবং ইউরিক অ্যাসিডে ব্যয় ইবনে সিনায় ২১ টাকা ৬০ পয়সা আর গ্রিনভিউ ক্লিনিকে ২৮ টাকা ২৮ পয়সা।

ফ্রি মেশিনে চুরির কারখানা

ঢাকার জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নথিপত্র ঘেঁটেও রিএজেন্ট ক্রয়ে প্রায় একই রকমের হিসাব পাওয়া যায়।

আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওই একই মেশিনটি—অর্থাৎ মার্কিন বেকম্যান কুল্টার কোম্পানির বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজারের (মডেল এইউ ৪৮০) এ দেশি ডিলার ওএমসির কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালের হয়ে প্রস্তাবপত্র (কোটেশন) চাওয়া হয় জাগো নিউজের পক্ষ থেকে। পরে ওএমসি যে কোটেশন দেয়, তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গ্লুকোজের টেস্টপ্রতি সরঞ্জামসহ রিএজেন্ট ব্যয় দাঁড়ায় মাত্র ১১ টাকা ৩৮ পয়সা, ক্রিয়েটিনিন ১০ টাকা ২৫ পয়সা, কোলেস্টেরল ১৫ টাকা ৫৪ পয়সা, এইচডিএল ৯০ টাকা ৪৯ পয়সা, এসজিপিটি ২২ টাকা ১৮ পয়সা, টিজি ২৪ টাকা ৪৯ পয়সা এবং ইউরিক অ্যাসিড ২৪ টাকা ৫৬ পয়সা। দরদামের মাধ্যমে এগুলো আরও সস্তায় কেনা সম্ভব—সেটাও আলাপচারিতায় বোঝা যায়।

এক টেস্টেই সাড়ে ৪ কোটি লুট

আরেকটি মেশিনের নাম ইমিউনোলজি অ্যানালাইজার। মার্কিন বেকম্যান কুল্টার কোম্পানির এ মেশিনের বাজারদর মডেলভেদে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। এর দেশীয় ডিলার ওএমসি (অরিয়েন্টাল মার্কেটিং করপোরেশন)। এ মেশিনে ১০ ধরনের ৪২টি টেস্ট হয়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে উপহারে পাওয়া এ মেশিনে টি৩, টি৪, এফটি৩, এফটি৪, টিএসএইচ, ভিটামিন ডি ও টেস্টোস্টেরন টেস্ট হয়। হাসপাতালের ২০২৪–২৫ অর্থবছরের একটি কার্যাদেশ, রিএজেন্টের ক্রয়মূল্য, টেস্টের সংখ্যা ইত্যাদি সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় বিশ্লেষণ করেছে জাগো নিউজ। এতে দেখা যায়— টি৩, টি৪, এফটি৩ ও এফটি৪-এর প্রতি টেস্টে সরঞ্জামসহ রিএজেন্ট কেনায় খরচ পড়েছে ৮৫৩ টাকা ১৭ পয়সা করে। টিএসএইচ পরীক্ষায় ১ হাজার ২২৯ টাকা ৪৪ পয়সা, ভিটামিন ডি পরীক্ষায় তিন হাজার ২ টাকা ৯৯ পয়সা এবং টেস্টোস্টেরন পরীক্ষায় ৮৯৬ টাকা ৩৮ পয়সা।

অথচ বেসরকারি ইবনে সিনা হাসপাতালের নথি বিশ্লেষণে দেখা গেল— টি৩, টি৪, এফটি৩, এফটি৪ পরীক্ষাপ্রতি রিএজেন্ট কেনায় ব্যয় মাত্র ২০৯ টাকা ৪৩ পয়সা করে। আর টিএসএইচ পরীক্ষায় ব্যয় মাত্র ১৮৬ টাকা ৪৩ পয়সা।

আমরা তো চাই ব্যবসা করতে, লুটপাট নয়। তৃতীয় পক্ষ ঢুকে এখানে লুটপাট করে। আমরা সরাসরি ব্যবসা করার সুযোগই পাই না। অনেক ঝামেলা করা হয়।- বায়োটেক সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমজান আলী

রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি না, হলে কত মাত্রার—সে তথ্যও জানা যায় ওই একই মেশিনে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে। এর নাম ট্রপোনিন টেস্ট। এই মেশিন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালেও একটি উপহার দিয়েছে ওএমসি। কিন্তু এই হাসপাতালে আগে থেকেই তৃতীয় পক্ষ হিসেবে রিএজেন্ট বিক্রির ব্যবসা করে আসছে জে ডিলাক্স চ্যানেল লিমিটেড। আগের মতোই এখানকার রিএজেন্ট কেনার একটি ওয়ার্ক অর্ডারসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতি ট্রপোনিন টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় রিএজেন্ট (সরঞ্জামসহ) কেনায় খরচ পড়েছে ৬৫২ টাকা ৩১ পয়সা। হৃদরোগ হাসপাতালে দৈনিক ট্রপোনিন টেস্ট হয় ৩০০ থেকে ৪০০। কম করে ধরলেও মাসে টেস্ট হয় ৯ হাজার, বছরে ১ লাখ ৮ হাজার। আর এই পরিমাণ টেস্টের জন্য রিএজেন্ট কেনার খরচ হয় কমবেশি সাড়ে ৭ কোটি টাকা।

একইভাবে হিসাবপত্র নিয়ে ও সেগুলো বিশ্লেষণ করে জাগো নিউজ দেখতে পায়, বেসরকারি ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিটি ট্রপোনিন টেস্টের জন্য সরঞ্জামসহ রিএজেন্ট কেনায় খরচ ২৭২ টাকা ৬২ পয়সা। সে হিসাবে হৃদরোগ হাসপাতালের সমান— ১ লাখ ৮ হাজারটি টেস্টের জন্য খরচ হয় কমবেশি তিন কোটি টাকা। অর্থাৎ, একটি মেশিনের মাত্র একটি পরীক্ষাতেই বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে সরকারি হাসপাতালে রিএজেন্ট কেনায় অতিরিক্ত খরচ করা হচ্ছে বছরে অন্তত সাড়ে চার কোটি টাকা।

হৃদরোগ হাসপাতালে ট্রপোনিনের পাশাপাশি টি৪, টিএসএইচ, এন্টি-প্রো-বিএনপি পরীক্ষাও করা হয়। এগুলোর জন্যও রিএজেন্ট কেনার খরচ বেসরকারির তুলনায় অনেক বেশি পাওয়া যায় তথ্য বিশ্লেষণে।

আবার রোগী মাত্রই যে পরীক্ষাটি অহরহ করানো হয়, তার নাম সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট)। এই পরীক্ষার মেশিনের নাম সেল কাউন্টার। বেকম্যান কুল্টার, সিসম্যাক্স, মাইন্ডরে-সহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের এই মেশিন জেলা পর্যায়ের ১১৭টি সরকারি হাসপাতালের প্রায় সবকটিতেই থাকার কথা। কয়টিতে আছে, তা জানাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তবে জানা যায়, কিছু মেশিন কেনা, আর বেশিরভাগই অনুদানের। এই পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় রিএজেন্ট কেনায়ও পুকুরচুরির তথ্য মিলেছে।

বেসরকারি ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নথি বলছে— সিসম্যাক্স ব্র্যান্ডের মেশিনে সিবিসি টেস্টপ্রতি রিএজেন্ট কেনার খরচ পড়েছে ৪৫ টাকা ৭৫ পয়সা।

আবার সিসম্যাক্স-এর দেশীয় ডিলার বায়োটেক সার্ভিসেস থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের হয়ে জাগো নিউজের নেওয়া কোটেশন অনুযায়ী, সিবিসি টেস্টপ্রতি রিএজেন্টের দাম ৫৫ টাকা চাওয়া হয়েছে, দরদাম করে যা আরও কমানো সম্ভব।

অথচ সরকারি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অনুদানে পাওয়া ওই একই ব্র্যান্ডের মেশিনে সিবিসির টেস্টপ্রতি রিএজেন্টের ক্রয়মূল্য পড়েছে ২০১ টাকা ৯৬ পয়সা—বেসরকারির চেয়ে চারগুণ বেশি ব্যয়।

একই চিত্র পাওয়া যায় হৃদরোগ হাসপাতালেও। এখানকার হিসাব বলছে, বেকম্যান কুল্টার কোম্পানির সেল কাউন্টার মেশিনে সিবিসি টেস্টপ্রতি রিএজেন্টের ক্রয়মূল্য পড়েছে ২২৪ টাকা ০৫ পয়সা।

‘এই চুরি থামলে স্বাস্থ্যসেবা বাড়বে’

সরকারি হাসপাতালগুলোর মাধ্যমে জনগণকে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দেয় সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে সারাদেশের হাসপাতালগুলোর পরিচালন ব্যয় বাবদ মোট ১১ হাজার ৫০০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এর মধ্যে চিকিৎসা ও শল্যচিকিৎসার সরঞ্জামাদি (এমএসআর) এবং কেমিক্যাল রিএজেন্ট কেনা বাবদ দেওয়া হয় দুই হাজার ৮৫১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। জাগো নিউজের অনুসন্ধানে এ অর্থের বেশিরভাগই যে লোপাট হয়েছে, তা পরিষ্কার বোঝা যায়। অত্যন্ত জটিল ও সূক্ষ্ম কৌশলে করা এ লুটপাটের তথ্য অগোচরেই রয়ে যায় সবার।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের উপ-পরিচালক (পরিচালক পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ডা. নাজমুন নাহার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরাও কাজ করতে গিয়ে সরকারি ক্রয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে এমন অসামঞ্জস্য পেয়েছি। এক রিএজেন্ট বা অ্যাক্সেসরিজ একেক হাসপাতাল একেক দামে কেনে। এটা হওয়া উচিত নয়। সব জায়গায় একই দামে হওয়া উচিত। এজন্য একটি নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘সরকার যে টাকা বরাদ্দ ও ভর্তুকি দেয়, অনিয়ম বা দুর্নীতি রোধ করা গেলে সেই টাকায় জনগণের স্বাস্থ্যসেবার আওতা আরও বাড়ানো যাবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা প্রয়োজন।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসচিব মো. সাইদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমন বিষয় আমাদের আগে কখনো চোখে পড়েনি। আপনি যেহেতু তুলে নিয়ে এসেছেন, আমরা এখন খতিয়ে দেখবো।’

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের সব যন্ত্র কেনার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই বলেই উপহার গ্রহণ করা হয়। এর পেছনে কেউ লুটপাটের বন্দোবস্ত করলে অবশ্যই আমরা ধরবো।’

এক প্রশ্নের জবাবে বায়োটেক সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমজান আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা তো চাই ব্যবসা করতে, লুটপাট নয়। তৃতীয় পক্ষ ঢুকে এখানে লুটপাট করে। আমরা সরাসরি ব্যবসা করার সুযোগই পাই না। অনেক ঝামেলা করা হয়।’

দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল: প্রশাসন-ভেন্ডর মিলেমিশে লুটপাট

বি: দ্র: প্রতিবেদনটি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ফেলোশিপ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে তৈরি।

এসইউজে/এএসএ/এএসএম