ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

বিষণ্নতাজনিত রোগের ‘বোঝা’ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০২:৫৭ এএম, ০৭ এপ্রিল ২০১৭

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিষণ্নতাজনিত রোগের বোঝা বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বে মোট ৩০ কোটি মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে। গত এক দশকে (২০০৫ থেকে ২০১৫) মানসিক এ রোগে শতকরা ১৮ শতাংশ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে ‘ডিজিজ বার্ডেন’ হিসেবে বিষণ্নতার স্থান তৃতীয়। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালে ‘ডিজিজ বার্ডেন’ তালিকায় প্রথম স্থানে অবস্থান করবে বিষণ্নতা।

কোনো মানুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হলে সেটির কারণে তার ব্যক্তিজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পারিবারিক জীবন বাধাগ্রস্ত হয়; পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক বিষণ্নতাযুক্ত নাগরিকের অনুৎপাদনশীলতা ও চিকিৎসাব্যয়ের কারণে রাষ্ট্র ও সমাজে বিষণ্নতা আর্থসামাজিক প্রভাব তৈরি হয়।

ডব্লিউএইচও এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক জরিপে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭৪ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু বিষণ্নতায় ভুগছে। পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার দ্বিগুণ।

বিষণ্নতাজনিত মানসিক রোগের হার বাড়া প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দারিদ্র্য থেকে শুরু করে জীবনযাপনের নানা কারণেই বিষণ্নতা হতে পারে এবং তা ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ক্যান্সারসহ অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।

সেই সঙ্গে কর্মদক্ষতা কমিয়ে দেয়, বিকাশের ক্ষেত্রে অসহযোগিতা করে, পরীক্ষার ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং পারিবারিক সুখ-শান্তি নষ্ট করে। এমনকি প্রসবের পর মায়ের বিষণ্নতা নবজাতকের বিকাশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এমনই এক পরিস্থিতির মধ্যে শুক্রবার (০৭ এপ্রিল) বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য `আসুন, বিষণ্নতা নিয়ে কথা বলি`।

সকাল ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম দিবসের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে শতকরা ৪ দশমিক ৬ শতাংশ নারী-পুরুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত। তবে স্থানীয় জরিপ বলছে, প্রায় ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে কোনো না কোনো কারণে বিষণ্নতা রোগে ভুগছে ৭৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮ বছরের বেশি বয়স্কদের মাঝে মানসিক রোগে আক্রান্তের মোট হার শতকরা ১৬ দশমিক ১ শতাংশ। এরমধ্যে উদ্বেগাধিক্য (অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার) ৮ দশমিক ৪ ভাগ, বিষণ্নতা (ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার) ৪ দশমিক ৬ শতাংশ, গুরুতর মানসিক রোগ (সাইকোসিস) ১ দশমিক ১ শতাংশ ও মাদকাসক্তি (ড্রাগ এডিকশন) শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।

শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানসিক রোগের প্রকোপ (শিশু কিশোর) বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৮ বছরের নিচে শিশু-কিশোরের মাঝে মানসিক রোগ শতকরা ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ, মানসিক প্রতিবন্ধী ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, মৃগীরোগ ২ শতাংশ ও মাদকাসক্ত শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।

এদিকে মানসিক রোগ ও বিষণ্নতায় মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ আক্রান্ত হলেও দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। দেশের কয়েকটি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সীমিত পরিসরে মানসিক রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

হাসপাতালগুলোতে এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভর্তির জন্য মাত্র ৮১৩টি শয্যা আছে। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২২০ জন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক এবং অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টসের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামাজিক অসচেতনতার কারণে এখনও পর্যন্ত মানসিক রোগে আক্রান্ত হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসকের কাছে আসেন না। অথচ সুচিকিৎসার মাধ্যমে তাদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব। এ জন্য পারিবরিক ও সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন।’

এমএমএ/পিআর