ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালে স্বল্প খরচে উন্নত চিকিৎসা
বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে রাজধানীবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। সাধারণ রোগীদের অভিযোগ কমিশনলোভী চিকিৎসকদের যোগসাজশে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে রোগ নির্ণয় তথা প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে কমিশন বাণিজ্য করে। হাসপাতালে ডাক্তাররা রোগীদের সমস্যা ভাল করে শোনেন না। অস্ত্রোপচারের জন্য খেয়াল খুশি মাফিক উচ্চমূল্য হেঁকে থাকেন।
ফলে অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ছোট-বড় হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতি অধিকাংশ জনগণেরই আস্থা নেই!
তবে কম খরচে আধুনিক চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে রাজধানীতে হাতেগোনা যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে সাধারণ রোগীদের আস্থা অর্জন করছে এর মধ্যে একটি ইনসাফ বারাকাহ্ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল।
১৯৯৭ সালে ১২৯, নিউ ইস্কাটন রোডের ভাড়া বাড়িতে ইনসাফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে ছোট্ট যে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করেছিল হাঁটি হাঁটি পায়ে পায়ে দুই দশক পাড়ি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে মগবাজারের ১১, শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণির বহুতল ভবনের নিজস্ব ৮টি ফ্লোরে ৮০ শয্যার ইনসাফ বারাকাহ্ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। ইউরোলজির চিকিৎসায় সর্বাধুনিক সব যন্ত্রপাতি সেখানে রয়েছে।
বর্তমানে হাসপাতালে চার শয্যার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), তিন শয্যার হাই ডিপেনডেনসি ইউনিট (এইচডিইউ) চারটি হেমোডায়ালাইসিস মেশিন ও চারটি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার (ওটি) রয়েছে।
এ হাসপাতালটিতে সর্বাধুনিক হলমিয়াম লেজার (মূল্য ৭০ লাখ টাকা) ও থান্ডার বিট (মূল্য ২৬ লাখ টাকা) সহ বিভিন্ন মেশিনে কম খরচে কিডনি পাথর ও মূত্রনালীর টিস্যু অপসারণের পাশাপাশি জন্মগত, প্রদাহজনিত, ক্যান্সারজনিত ও গাইনি রোগীর অস্ত্রোপচার হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে রোগীদের বিশেষ ছাড় দেয়া হচ্ছে।
মহান স্বাধীনতা ও বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে হাসপাতালটিতে মাসব্যাপী বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্প চলছে। ডাক্তাররা বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা পরামর্শ দিচ্ছেন। কিডনি সম্পর্কিত ইউরিন আর/ই ও সিরাম ক্রিয়েটিনাইন পরীক্ষা বিনামূল্যে করা হচ্ছে। 
এছাড়া সিবিসি, ইসিজি, এক্সরে কেইউবি (ডিজিটাল), আলট্রাসনোগ্রাম কেইউবি (২ডি), আলট্রাসনোগ্রাম ডব্লিউ এ (২ডি) এক তৃতীয়াংশ মূল্যে করার সুযোগের পাশাপাশি শতকরা ৩০ ভাগ ছাড়ে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে।
বিনামূল্য চিকিৎসা ক্যাম্প উপলক্ষে সোমবার দুপুরে হাসপাতাল ভবনে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আলতাফ হোসেন বলেন, কম খরচে অত্যাধুনিক চিকিৎসাই এ হাসপাতালের মূল ব্রত। শুরুর দিকে রোগীদের কম খরচে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ করে দিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টার হিসেবে যাত্রা শুরু হয়।
তিনি জানান, মরহুম ড. ওমর ফারুক, অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম, অধ্যাপক মতিউর রহমান, ডা. রফিকুল আলম ও মিজানুর রহমানসহ মোট ১১ জনের উদ্যোগে সেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানটি চালু হয়। শুরুতে শতকরা ৩০ ভাগ কমিশনে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। রোগীদের সরাসরি চিকিৎসা দেয়ার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা থেকে পরবর্তীতে বারাকাহ্ কিডনি হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিউট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা হয়।
পরবর্তীতে ২০০৮ বিচারপতি মো. আবদুর রউফকে প্রধান করে বারাকা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১২ সালে ইনসাফ বারাকাহ্ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল চালু হয়। লেপারোস্কোপিক সার্জন অধ্যাপক মতিয়ার রহমান এ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ফকরুল ইসলাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
আলতাফ হোসেন জানান, সর্বাধুনিক লেজার মেশিনে কিডনির পাথর অপারেশনে অন্য যেকোনো হাসপাতালে অস্ত্রোপচার ফি ১ লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা হলেও তাদের হাসপাতালে মাত্র ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায় এ চিকিৎসা হচ্ছে। ফি কম হওয়ায় গত আড়াইমাসে প্রায় ২০টি সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালটিতে রক্তপাতহীন টিস্যু অস্ত্রোপচারে অত্যাধুনিক থান্ডার বিট মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। নিকট ভবিষ্যতে তারা কাঁচপুরে মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও চালু করবেন বলেও জানান তিনি।
এমইউ/এসএইচএস/পিআর