ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

অভুক্ত অবস্থায় দিন পার করছে গাজার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:১২ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২৫

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে বলেছে, গাজার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ অভুক্ত অবস্থায় দিন পার করছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সেখানে অপুষ্টির হার বেড়েই চলেছে এবং ৯০ হাজার নারী ও শিশুর জরুরি চিকিৎসা দরকার। খবর বিবিসির।

গাজায় চলতি সপ্তাহে অনাহারের সতর্কতা আরও জোরদার হয়েছে। শুক্রবার অপুষ্টিতে ভোগা ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে অপুষ্টিতে এখন পর্যন্ত ১২২ জন মারা গেছে।

গাজার সব সরবরাহ প্রবেশ পথের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসরায়েল বলছে, সাহায্য নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তারা অপুষ্টির জন্য হামাসকে দায়ী করেছে। ইসরায়েলের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা শুক্রবার বলেছেন, বিমান থেকে সাহায্য বিতরণের অনুমতি আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দেওয়া হতে পারে। এভাবে সাহায্য দেওয়াকে যথেষ্ট নয় বলে সাহায্য সংস্থাগুলো আগেই সতর্ক করেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান এবার এভাবে সাহায্য দিতে পারে। জর্ডানের এক কর্মকর্তা অবশ্য বিবিসিকে বলেছেন, তারা এখনো ইসরায়েলের কাছ থেকে অনুমতি পায়নি।

এই উদ্যোগ এমন সময় নেওয়া হলো যখন গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাড়ছে।
শুক্রবার জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য অবিলম্বে সব বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহবান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে যুদ্ধ ও মানবিক বিপর্যয় অবসানের আহবান জানিয়েছে।

তারা বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বেসামরিক জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়াটা অগ্রহণযোগ্য।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকের মধ্যে যে পরিমাণ মত ভিন্নতা, উদাসীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে-সহানুভূতি, সত্যতা ও মানবিকতার অভাব- তার মাত্রা তিনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন না।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সমাবেশে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, গত ২৭ মে থেকে খাদ্য পাওয়ার জন্য চেষ্টা করার সময় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের নেতৃত্ব খাদ্য বিতরণের বিকল্প হিসেবে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ খাদ্য বিতরণ করতে শুরু করে, তখন থেকে এসব ঘটছে।

জিএইচএফ এর সাথে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিষয়ক ঠিকাদার অ্যান্থনি আগুইলার বিবিসিকে বলেন, তিনি প্রশ্নহীনভাবেই যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হতে দেখেছেন। তিনি জানান, তিনি দেখেছেন যে আইডিএফ ও যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা কর্মকর্তারা গোলাবারুদ, মর্টার ব্যবহার করছে এবং খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ট্যাংক থেকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি বর্ষণ করছে।

অবসরপ্রাপ্ত এই সৈনিক বলেন, আমার পুরো ক্যারিয়ারে এমন মাত্রার নিষ্ঠুরতা দেখিনি। আইডিএফ ও মার্কিন ঠিকাদারদের হাতে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে ও অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ দেখেছি।

জিএইচএফ দাবি করছে যে, এসব অভিযোগ একজন ক্ষুব্ধ সাবেক ঠিকাদারের কাছ থেকে এসেছে, যাকে অসদাচরণের অভিযোগে এক মাস আগে বাদ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কাতার আলোচনা থেকে তাদের দল প্রত্যাহার করে নেওয়ায় নতুন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনা এখনো অনিশ্চিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, হামাস সত্যিকার অর্থে সমঝোতা চায়নি। তিনি বলেন, আমি মনে করি তারা মরতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে হামাস।

হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, মধ্যস্থতাকারীরা জানিয়েছেন যে, আলোচনা একেবারে ভেঙ্গে পড়েনি এবং ইসরায়েলি দল আগামী সপ্তাহে দোহায় ফিরবে।

গাজার বেশিরভাগ মানুষ কয়েকবার করে ঘরবাড়ি হারিয়েছে এবং ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফ্রান্স বলেছে, তারা সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিবে। এরপর যুক্তরাজ্যের এক তৃতীয়াংশ এমপি দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে একই পথ অনুসরণের আহবান জানিয়েছে।

তবে স্যার কিয়ের স্টারমার শিগগিরই এ ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। এটা হতে পারে বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ, যার চূড়ান্ত ফল হবে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান।

টিটিএন