বিশ্বের শীর্ষ ১০ মোবাইল ফোন কোম্পানি
বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল ফোন/ ছবি: এক্স (আগে টুইটার) থেকে সংগৃহীত
বিশ্বের মোবাইল বাজারে প্রতিনিয়ত লড়াই চলছে বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে। সেরা ডিজাইন, আধুনিক প্রযুক্তি ও ভোক্তাদের আস্থার ওপর ভর করেই শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে কয়েকটি ব্র্যান্ড। চলুন জেনে নেওয়া যাক বর্তমান সময়ের শীর্ষ ১০ মোবাইল ব্র্যান্ড সম্পর্কে-
১. স্যামসাং (দক্ষিণ কোরিয়া)
বিশ্বের এক নম্বর মোবাইল ব্র্যান্ড স্যামসাং। ১৯৩৮ সালে যাত্রা শুরু করা দক্ষিণ কোরিয়ান এ কোম্পানি এখন ৮০টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বৈশ্বিক বাজারে এর অংশীদারিত্ব ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ার বাইরে ভিয়েতনাম, ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়াতেও রয়েছে তাদের কারখানা।
স্যামসাংয়ের কর্মীসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৬৬ হাজার। আকর্ষণীয় নকশা ও বৈচিত্র্যময় ফ্ল্যাগশিপ ফোনের কারণে একনিষ্ঠ গ্রাহকশ্রেণি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে ব্র্যান্ডটি। ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৫ কোটি ৮০ লাখ ফোন সরবরাহ করেছে স্যামসাং, যা বছরের শেষে ৩০ কোটিতে পৌঁছাতে পারে। সম্ভাব্য আয় দাঁড়াবে ২১ হাজার ৩৩০ কোটি ডলার।
২. অ্যাপল (যুক্তরাষ্ট্র)
১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মার্কিন ব্র্যান্ড অ্যাপল বিশ্ববাজারে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ অংশীদারিত্ব ধরে রেখেছে। নিরাপত্তা, গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষার জন্য ভোক্তাদের কাছে অ্যাপল অদ্বিতীয়। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় এই ব্র্যান্ডের চাহিদা সর্বাধিক।
২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাজারে এসেছে ৪ কোটি ৬৪ লাখ আইফোন, বছরের শেষে এ সংখ্যা পৌঁছাতে পারে ২২ কোটি ৫০ লাখে। সম্ভাব্য আয় ২১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
৩. শাওমি (চীন)
২০১০ সালে যাত্রা করা শাওমি এখন চীনা বাজার ছাড়াও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়। তুলনামূলক কম দামে স্টাইলিশ ও দ্রুত চার্জের সুবিধাসম্পন্ন ফোনের জন্য ব্র্যান্ডটির বাজার অংশীদারিত্ব ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৪ কোটি ২৬ লাখ ফোন সরবরাহ করেছে শাওমি। বছরের শেষে এটি পৌঁছাতে পারে ১৫ কোটি ৫০ লাখে, সম্ভাব্য আয় ৩ হাজার ৩৭৫ কোটি ডলার।
৪. ভিভো (চীন)
২০০৯ সালে আত্মপ্রকাশ করা ভিভোর বাজার অংশীদারিত্ব ৯ দশমিক ২ শতাংশ। উন্নত ক্যামেরা প্রযুক্তি ও আধুনিক নকশার কারণে তরুণ ও কনটেন্ট নির্মাতাদের মধ্যে এই কোম্পানিটির মোবাইলে বেশ জনপ্রিয়।
২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২ কোটি ৭২ লাখ ফোন বাজারে এসেছে। বছরের শেষে সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৬ কোটি ৫০ লাখে, আর আয় হতে পারে প্রায় ৬৭৫ কোটি ডলার।
৫. অপো (চীন)
স্টাইলিশ নকশা ও উন্নত ক্যামেরার জন্য খ্যাত অপো বর্তমানে বৈশ্বিক বাজারে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব ধরে রেখেছে। দ্রুত চার্জ হওয়ার সুবিধায় ব্যস্ত কর্মজীবীদের কাছেও এটি জনপ্রিয়। ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২ কোটি ৫১ লাখ ফোন বাজারে এসেছে, বছরের শেষে সংখ্যা ৫ কোটি ৫০ লাখ ছাড়াতে পারে। সম্ভাব্য আয় ৬০০ কোটি ডলারের বেশি।
৬. ওয়ানপ্লাস (চীন)
২০১৩ সালে যাত্রা করা ওয়ানপ্লাস মূলত প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য। মাঝারি দামে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ফ্ল্যাগশিপ অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় এ ফোনে। বাজারে তাদের অংশীদারিত্ব প্রায় ৩ শতাংশ। ২০২৪ সালে ৮০ লাখ ফোন বাজারে এসেছে, ২০২৫ সালে এটি পৌঁছাতে পারে ১ কোটিতে, আয় হবে ২৭০ কোটি ডলার।
৭. রিয়েলমি (চীন)
২০১৮ সালে শুরু হওয়া রিয়েলমি মূলত তরুণ গেমারদের লক্ষ্য করে তৈরি। আকর্ষণীয় নকশা ও সাশ্রয়ী দাম এটিকে জনপ্রিয় করেছে। ২০২৪ সালে বাজারে এসেছে ১ কোটি ৪০ লাখ ফোন, ২০২৫ সালে এটি বাড়তে পারে ১ কোটি ৫০ লাখে। আয় হবে ২০০ কোটি ডলারের বেশি।
৮. মটোরোলা (যুক্তরাষ্ট্র)
১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মার্কিন ব্র্যান্ড মটোরোলা এখনো বৈশ্বিক বাজারে ৪ শতাংশ শেয়ার ধরে রেখেছে। ভাঁজ করা যায় এমন ফোন ও সঠিক দামের অ্যান্ড্রয়েড অভিজ্ঞতার কারণে গ্রাহকেরা পছন্দ করেন। ২০২৪ সালে ১ কোটি ফোন সরবরাহ করেছে, যা ২০২৫ সালে ১ কোটি ২০ লাখ ছাড়াতে পারে। আয় হবে ১৫০ কোটি ডলারের বেশি।
৯. গুগল (যুক্তরাষ্ট্র)
গুগলের পিক্সেল সিরিজ বাজারে প্রায় ২ শতাংশ শেয়ার দখল করে আছে। উন্নত ক্যামেরা, সহজ অ্যান্ড্রয়েড অভিজ্ঞতা এবং এআই-ভিত্তিক অ্যাপস ব্যবহারের সুবিধা এটিকে আলাদা করেছে। ২০২৪ সালে ৬০ লাখ ফোন সরবরাহ করেছে, ২০২৫ সালে এটি পৌঁছাতে পারে ৮০ লাখে। আয় হতে পারে ১২৭ কোটি ডলার।
১০. অনার (চীন)
২০১৩ সালে হুয়াওয়ের সাব-ব্র্যান্ড হিসেবে যাত্রা শুরু করা অনার এখন স্বাধীন কোম্পানি। সাশ্রয়ী দামে আধুনিক সব সুবিধা দেওয়ার কারণে বাজারে এর অংশীদারিত্ব প্রায় ৩ শতাংশ। ২০২৪ সালে ৭০ লাখ ফোন বাজারে এসেছে, ২০২৫ সালে এই সংখ্যা ছাড়াতে পারে ৯০ লাখ ও সম্ভাব্য আয় হতে পারে ১০০ কোটি ডলারের বেশি।
সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ব্র্যান্ডগুলিই বিশ্ব মোবাইল বাজারে শীর্ষস্থানে আধিপত্য বজায় রেখেছে। তবে প্রতিটি ব্র্যান্ডই নিজস্ব উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও লক্ষ্যভিত্তিক গ্রাহকগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করে এগোচ্ছে।
তথ্যসূত্র: গ্লোবালব্র্যান্ডসম্যাগাজিন ডটকম
এসএএইচ