ভারত
লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ৪
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজ্যের মর্যাদা ও সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে লাদাখের বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন/ ছবি: এনডিটিভি
রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ চলছে ভারতের লাদাখে। এরই মধ্যে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে চারজন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। খবর এনডিটিভির।
চলমান রাজ্যের দাবির আন্দোলনে এটিই প্রথম সহিংসতা। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে শত শত বিক্ষোভকারী রাস্তায় নামার পর এই সংঘর্ষের সূচনা হয়। এর আগে আন্দোলনকারীরা অনশন কর্মসূচি পালন করেছিলেন ও এদিন রাজ্যের দাবিতে পূর্ণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন।
এই সহিংসতা এমন এক সময় ঘটলো, যখন লেহ এপেক্স বডি ও সরকারের মধ্যে আসন্ন আলোচনার প্রস্তুতি চলছিল। কেন্দ্রীয় সরকার আগামী ৬ অক্টোবর লাদাখের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে, যেখানে জনগণের দাবিগুলো নিয়ে আবারো আলোচনা হওয়ার কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া। কর্মকর্তারা জানান, বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজ্যের মর্যাদা ও সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং তারা বিজেপির কার্যালয়সহ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে, যার মধ্যে পুলিশের একটি গাড়িও ছিল। শেষমেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ।
এদিকে, গত দুই সপ্তাহ ধরে জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুক রাজ্যের দাবিতে অনশন করছেন। তিনি লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনার দাবি তুলেছেন।
গত তিন বছরে লাদাখে ক্রমেই অসন্তোষ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে সরাসরি প্রশাসনের বিরুদ্ধে বাসিন্দারা বারবার রাজ্যের মর্যাদা এবং জমি, সংস্কৃতি ও সম্পদ রক্ষায় সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবি জানিয়ে আসছেন।
২০১৯ সালের আগস্টে জম্মু-কাশ্মীর ভেঙে লাদাখকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা হয়, ধারা ৩৭০ বিলোপের পর। সে সময় লেহ’র সোনম ওয়াংচুকসহ অনেকেই এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তবে এক বছরের মধ্যেই প্রশাসনিক শূন্যতা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অধীনে সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসন শুরু হলে সেই শূন্যতা আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
এই অসন্তোষ থেকেই জন্ম নেয় ব্যাপক বিক্ষোভ ও অনশন আন্দোলনের। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বৌদ্ধ-অধ্যুষিত লেহ ও মুসলিম-অধ্যুষিত কারগিলের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনগুলো একত্রিত হয়ে লেহ এপেক্স বডি ও কারগিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স নামে যৌথ প্ল্যাটফর্ম গঠন করে।
প্রতিবাদে সাড়া দিয়ে কেন্দ্র লাদাখের দাবিগুলো পর্যালোচনার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে। তবে একের পর এক বৈঠকেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। চলতি বছরের মার্চে লাদাখি প্রতিনিধিরা দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু বৈঠক ব্যর্থ হয়। স্থানীয় নেতাদের দাবি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের মূল দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন।
একজন নেতা এনডিটিভিকে বলেন, বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছিলেন যে লাদাখকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বানিয়ে তিনি ভুল করেছেন। তিনি রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলের দাবিও নাকচ করে দেন।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ