ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

ভারতে যার দাপটে কাঁপছে মোদী সরকার, কে এই সোনম ওয়াংচুক?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৭:১৪ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভারতে যার দাপটে কাঁপছে মোদী সরকার, সেই সোনম ওয়াংচুক আসলে কে? গত কয়েকদিন থেকে তাকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র। লাদাখে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতায় জড়িত অভিযোগে ওয়াংচুককে এরই মধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাখা হয়েছে লাদাখ থেকে হাজার কিলোমিটার দূরের যোধপুর কারাগারে।

কে এই সোনম ওয়াংচুক?

সোনম ওয়াংচুক লাদাখের প্রখ্যাত উদ্ভাবক ও সমাজসেবী। ২০০৯ সালে আমির খান অভিনীত জনপ্রিয় সিনেমা ‘৩ ইডিয়টস’-এর প্রধান চরিত্র ‘ফুংসুখ ওয়াংডু’ তার অনুপ্রেরণাতেই সৃষ্টি।

লাদাখ পুলিশ গত শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় নিরাপত্তা আইনে ওয়াংচুককে গ্রেফতার করেছে। এই ঘটনার দুই দিন আগে লাদাখে রাজ্যের মর্যাদার দাবিতে আন্দোলন-সহিংসতায় চারজন নিহত ও ৮০ জনের বেশি আহত হন। নিরাপত্তার অজুহাতে লেহ শহরে বন্ধ করে দেওয়া হয় মোবাইল ইন্টারনেট।

আরও পড়ুন>>

বিক্ষোভ-সহিংসতায় উত্তাল লাদাখ, কারফিউ জারি

আমির খানের ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমার বাস্তব ফুংসুখ ওয়াংড়ু গ্রেফতার

নেপালের পর ভারতেও জেন জি বিক্ষোভ, চ্যালেঞ্জের মুখে মোদী সরকার

এর আগেই ওয়াংচুকের এনজিওর (এইচআইএএল) বিদেশি তহবিল লাইসেন্স প্রত্যাহার করে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, তহবিল অপব্যবহার এবং অঘোষিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ওয়াংচুক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সরকার তাকে চুপ করানোর জন্য বানোয়াট অভিযোগে মামলা করেছে। বর্তমানে সিবিআই ও আয়কর কর্তৃপক্ষ তার সংস্থাগুলোর আর্থিক কার্যক্রম তদন্ত করছে।

জীবনী ও শিক্ষা

ওয়াংচুক ১৯৬৬ সালে লাদাখে জন্মগ্রহণ করেন। নয় বছর বয়সে প্রথম স্কুলে ভর্তি হন। কারণ তার এলাকায় কোনো স্কুলই ছিল না। সেসময় ওয়াংচুকের মা তাকে স্থানীয় ভাষায় মৌলিক শিক্ষা দেন। ১৯৭৫ সালে বাবা জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের নির্বাচনে জয়লাভ করলে ওয়াংচুক শ্রীনগরে চলে যান। তবে সেখানে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বাধা তার শিক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পরে নয় বছর বয়সে দিল্লিতে বিশেশ কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

১৯৮৭ সালে তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (তৎকালীন আরইসি) শ্রীনগর থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বি.টেক শেষ করেন। পরবর্তীতে ফ্রান্সের গ্রেনোবলের ক্রাটেরে স্কুল অব আর্কিটেকচারে মাটির স্থাপত্যে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন।

শিক্ষা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে কর্মজীবন

১৯৮৮ সালে সহপাঠীদের সঙ্গে মিলে লাদাখের শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের জন্য ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অব লাদাখ’ (এসইসিএমওএল) প্রতিষ্ঠা করেন সোনম ওয়াংচুক। ১৯৯৪ সালে ‘অপারেশন নিউ হোপ’ চালু করা হয়, যেখানে সরকার, সমাজ ও নাগরিক সংস্থা মিলিত হয়ে স্থানীয় স্কুলগুলো সংস্কার করে। এসইসিএমওএল ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ সৌরশক্তি চালিত, সেখানে রান্নাবান্না, তাপ বা আলো- কোনোকিছুর জন্যই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হয়নি।

তিনি লদাখের একমাত্র প্রিন্ট ম্যাগাজিন ‘লাদাগস মেলং’-এর সম্পাদক ছিলেন ১৯৯৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। এছাড়া তিনি ‘লাদাখ ২০২৫ নীতিপত্রে শিক্ষাগত ও পর্যটন নীতি প্রণয়নে সহায়তা করেছেন। ২০১৩ সালে তিনি ‘আইস স্টুপা’ প্রযুক্তি চালু করেন। এর সাহায্যে শীতকালে পানি জমা রেখে বসন্তের সময় ছাড়া হয়, যা লাদাখে পানির সংকট কমাতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে।

পরবর্তীতে তিনি ‘হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অব অল্টারনেটিভস লাদাখ’(এইচআইএএল) প্রতিষ্ঠা করেন এবং স্থানীয় পরিবার চালিত কমিউনিটি পর্যটন প্রকল্প ‘ফার্মস্টেস লাদাখ’ চালু করেন।

প্রকৌশলী থেকে রাজনীতিক

ওয়াংচুকের প্রকৌশল শিক্ষাই তার উদ্ভাবন এবং সমাজসেবার ভিত্তি স্থাপন করেছে। তবে তার রাজনৈতিক সচেতনতা লদাখের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে মিশে গেছে। ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর তিনি জনসাধারণের স্বার্থে সরব হন এবং সম্পদ শোষণ বন্ধ ও ষষ্ঠ সূচি সংরক্ষণ দাবি করেন। একাধিক অনশন আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি জলবায়ু সচেতনতা ও রাজনৈতিক কার্যক্রম একসঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
কেএএ/