ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

উচ্চশিক্ষার জন্য ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চীন-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া

সাজিদ হাসান | প্রকাশিত: ০৮:০৩ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

১৩ বছর বয়স থেকেই চীনের হুবেই প্রদেশের ইয়াংয়ের স্বপ্ন ছিল যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা। বোস্টনে ঘুরতে গিয়ে তিনি দেখেছিলেন, ঘাসের ওপর শুয়ে বই পড়ছে শিক্ষার্থীরা। ওটাই ছিল তার চোখে বিদেশে পড়াশোনার আসল রূপ। ২০২২ সালে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি পিএইচডি করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠেছিল, আর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতিও কঠোর করেছিল। তাই তিনি বেছে নেন সিঙ্গাপুরকে, যেখানে তাকে কাগজপত্র নিয়ে চিন্তিত হতে হয়নি, আবার পরিবারের কাছাকাছি থাকারও সুযোগ পেয়েছিলেন।

বছরের পর বছর উচ্চাকাঙ্ক্ষী এশীয় শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও কানাডার মতো ‘বিগ ফোর’ দেশগুলোতে পড়তে যাওয়ার ব্যাপক আগ্রহী। পুরো বিশ্ব থেকে এসব দেশ তরুণ মেধা আর বিপুল অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেই আকর্ষণ কিছুটা কমেছে।

এক হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে ‘বিগ ফোর’ বিশ্বের ৪০ শতাংশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে টানতে পারলেও, এখন সেই হার নেমে এসেছে প্রায় ৩৫ শতাংশে। দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ এশীয় শিক্ষার্থী নিজ অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেছে নিচ্ছেন। পশ্চিমা দেশগুলোর সাম্প্রতিক ‘কঠোর অভিবাসন নীতি’ এর একটি বড় কারণ।

অন্যদিকে, এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুনামও দ্রুত বাড়ছে, বিশেষত পূর্ব এশিয়ায়। ব্যয়ের দিক থেকেও এগুলো আকর্ষণীয়। এক ভারতীয় শিক্ষা পরামর্শক জানান, আগে শুধু ‘বিগ ফোর’র জন্য আবেদন পড়তো। এখন অনেক শিক্ষার্থী জাপান, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়া নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

করোনা মহামারি এই প্রবণতা ত্বরান্বিত করেছে। তখন অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ভাবতে শুরু করেন, কাছাকাছি কোনো দেশে পড়াশোনা করাটাই নিরাপদ। ওই ভাবনাটাই মূলত টিকে গেছে। অনেকে পশ্চিমকে এখন ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিশ্চিত মনে করছেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পূর্ব এশিয়ায় পড়তে যাওয়া এশীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। আর এই পরিস্থিতি থেকে লাভবান হওয়ার সুযোগ নিতে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন দেশ।

২০২৩ সালে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়ানোর লক্ষ্য ঠিক করেছে। জাপান গত বছর ৩ লাখেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানিয়েছে, যার ৯০ শতাংশের বেশি এসেছে এশিয়া থেকে। দেশটির লক্ষ্য ২০৩৩ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৪ লাখে উন্নীত করা।

চীনের শায়ত্বশাসিত অঞ্চল তাইওয়ান ২০৩০ সালের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থী দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে ৩ লাখ ২০ হাজারে পৌঁছাতে। হংকং-ও নতুন নিয়ম করেছে- ২০২৫ থেকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধেক শিক্ষার্থী আসতে পারবে বাইরের অঞ্চল থেকে, যেখানে ২০২৪ সালে এ হার ছিল ৪০ শতাংশ আর এর আগে মাত্র ২০ শতাংশ। এসব জায়গায় ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা, বাড়তি বৃত্তি ও পড়াশোনার পর কাজের সুযোগ পাওয়ার প্রক্রিয়াও সহজ হচ্ছে।

আবার পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কম জন্মহারও বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা শ্রম সংকট মেটাতে সহায়ক, বলছেন জাপানের হিতোৎসুবাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিরোশি ওটা। তার মতে, বিদেশি শিক্ষার্থী না পেলে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। পাশাপাশি রয়েছে কূটনৈতিক লাভ। তাইওয়ান তার ‘নিউ সাউথবাউন্ড পলিসি’র আওতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শিক্ষার্থীদের টানছে, যাতে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।

তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। হংকং, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় জায়গার সীমাবদ্ধতা আছে। ভাষাগত বাধাও চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার আকর্ষণ কিছুটা কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে যারা পড়াশোনার পর স্থানীয় চাকরি করতে চায় তাদের জন্য। আবার জনমতও বাড়তি উদ্বেগ তৈরি করছে। জাপানের একটি ডানপন্থি দল সানসেইতো চীন থেকে শিক্ষার্থী আসার সংখ্যা বাড়ায় অসন্তোষ জানিয়েছে। শুধু ২০২৩ সালেই প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার চীনা শিক্ষার্থী জাপানে গেছে, যেখানে ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল এক লাখেরও কম।

এশিয়ার বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তবে তাদের উপস্থিতি শিগগির কমতে পারে, কারণ চীনের তরুণ জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। বিপরীতে, ভারতের শিক্ষার্থীদের চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান কুয়াকুয়ারেলি সাইমন্ডস-এর পূর্বাভাস, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৭০ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রয়েছে, যা ২০৩০ সালে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৮৫ লাখে। এই বিপুল সম্ভাবনাই এখন এশীয় দেশগুলোকে আরও বেশি করে বিদেশি শিক্ষার্থী আকর্ষণে উৎসাহিত করছে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এসএএইচ