ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব
মার্কিন সয়াবিন চাষিরা হতাশ, উচ্ছ্বসিত ব্রাজিলের কৃষকরা
কার্গোতে সয়াবিন তোলা হচ্ছে। ছবি: এএফপি (ফাইল)
বিশ্ববাজারে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের বড় ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন চাষিরা। তাদের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন মে মাস থেকে এক বুশেল সয়াবিনও আমদানি করেনি। মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রতিশোধ নেওয়া।
চীনের এমন সিদ্ধান্তে আমেরিকার ইলিনয়ের কৃষকেরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শিগগিরই কৃষকদের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলারের ত্রাণ তহবিল ঘোষণা করতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
তবে এই বাণিজ্যিক টানাপোড়েনে একজন বড় বিজয়ী স্পষ্ট। তারা হলো ব্রাজিলের সয়াবিন উৎপাদকরা। আমেরিকার কৃষক ও চীনা ক্রেতাদের মধ্যকার বিরোধ ব্রাজিলকে বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন রপ্তানিকারক শক্তি হিসেবে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এটাই প্রথম নয় যে ব্রাজিল ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির ফলে লাভবান হলো। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর উচ্চশুল্ক আরোপের পর চীনের সয়াবিন আমদানির ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ ব্রাজিলের দখলে যায়।
রাবোব্যাংকের কৃষি বিশ্লেষক মার্সেলা মারিনি বলেন, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম বেড়ে যায় এবং ২০২৩ সালে ব্রাজিল এশিয়া ও ইউরোপে রেকর্ড ১০ কোটি টন সয়াবিন রপ্তানি করে। কৃষিখাতে বিশাল বিনিয়োগে উৎপাদন বাড়লেও সাময়িকভাবে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের হ্যাংওভার দেখা দিয়েছিল।
কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা বাণিজ্যযুদ্ধ যেন সেই সমস্যার ওষুধ হয়ে এসেছে। চীনের আমেরিকান সয়াবিন নিষেধাজ্ঞা দক্ষিণ আমেরিকায় বিক্রেতার বাজার তৈরি করেছে। ফলে অতিরিক্ত ফসল এখন রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছে।
ব্রাজিল সরকারের তথ্যমতে, ২০২৫ সালে সয়াবিন রপ্তানি ১১ কোটি টনে পৌঁছাবে, যা ট্রাম্পের ব্রাজিলীয় পণ্য—বিশেষত গরুর মাংস ও কফির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপে যে ক্ষতি হয়েছে, তা প্রায় পুরোপুরি পুষিয়ে দেবে।
তবে এই সৌভাগ্য দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে। অক্টোবরের শেষের দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এপিইসি শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বৈঠকে সয়াবিন ইস্যুটি প্রধান আলোচ্য হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীন যদি আমেরিকান সয়াবিনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, তবুও বর্তমানে ২৩ শতাংশ শুল্ক (ব্রাজিলীয় সয়াবিনের ক্ষেত্রে মাত্র ৩ শতাংশ) থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি সুবিধা সীমিত থাকবে। তবে আমেরিকায় সয়াবিনের দাম দ্রুত কমে যাওয়ায় তারা শিগগিরই ব্রাজিলীয় সয়াবিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ফিরতে পারে।
আরও পড়ুন>
চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করছেন ট্রাম্প
২০২৭ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় ৪০ হাজার কোটি ইউরো বিনিয়োগ করবে ইইউ
ব্রাজিলীয় কৃষকেরা এই সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন নন। তারা চাইলে অগ্রিম বিক্রির মাধ্যমে ঝুঁকি কমাতে পারেন, কিন্তু বেশিরভাগই অপেক্ষা করছেন, যা তাদের আত্মবিশ্বাসের ইঙ্গিত দেয়।
তাদের কৃষি মৌসুমও সুবিধাজনক। যুক্তরাষ্ট্রে ভুট্টা ও সয়াবিনের রেকর্ড ফলনের পর গুদামগুলো পূর্ণ, অন্যদিকে ব্রাজিলে এখন রোপিত সয়াবিন জানুয়ারিতে কাটবে, যখন মার্কিন ফসল ফুরিয়ে যাবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের নীতিগত ধাক্কায় আমেরিকান কৃষক ও চীনা ক্রেতা উভয়েই একে অপরের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইবে। কিন্তু চীনের বিপুল চাহিদা পূরণের বিকল্প বাজার পাওয়া কঠিন।
এদিকে ব্রাজিলের সয়াবিনে উচ্চ প্রোটিন মাত্রা, বেশি উৎপাদনশীলতা, এবং বৃহৎ কৃষিভূমি (৪৯ মিলিয়ন হেক্টর) তাদের প্রাধান্য আরও বাড়াচ্ছে। তাছাড়া, দেশটির বায়োফুয়েল শিল্পের জন্য বিশাল পরিমাণ সয়া তেল প্রয়োজন, যা অভ্যন্তরীণ চাহিদাও জোগাচ্ছে।
যেখানে যুক্তরাষ্ট্র এখনো বন্দর ও রেল অবকাঠামোয় কিছুটা এগিয়ে আছে, সেখানে ব্রাজিলে চলমান অবকাঠামো উন্নয়ন সেই ব্যবধানও দ্রুত কমিয়ে আনছে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
এমএসএম
সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক
- ১ যুক্তরাষ্ট্রের চাপ তোয়াক্কা না করেই রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের একাধিক চুক্তি
- ২ চীনের নির্যাতন থেকে বাচঁতে ভারতে ৩ ভাই, জেল খাটছে ১২ বছর
- ৩ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান মোদীর
- ৪ আফ্রিকার উপকূলে খাদ্য সংকট, ৬০ হাজার পেঙ্গুইনের মৃত্যু
- ৫ যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইসরায়েলে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের সামরিক বাজেট ঘোষণা