রামাল্লা ও গাজায় পৌঁছেছে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বহনকারী বাস
সোমবার (১৩ অক্টোবর) অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা ও বেইতুনিয়ার মধ্যে অবস্থিত ওফার সামরিক কারাগারে ইসরায়েলি বাহিনীর কর্মকাণ্ড দেখছেন কতিপয় ফিলিস্তিনি যুবক/ ছবি: এএফপি
হামাস পরিচালিত ‘প্রিজনার্স অফিস’ জানিয়েছে, সোমবার (১৩ অক্টোবর) বাসে করে মুক্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের একটি বড় দল পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহর ও গাজা উপত্যকায় পৌঁছেছে।
দুই পক্ষের যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে, হামাস গাজায় আটক থাকা সব জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েলও ১ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি বন্দি ও আটক ব্যক্তিকে মুক্ত করেছে।
প্রিজনার্স অফিস জানায়, রামাল্লায় পৌঁছানো বন্দিদের বাসগুলো পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলকৃত ওফার কারাগার থেকে যাত্রা শুরু করে। অন্তত একটি বাস গাজা উপত্যকাতেও প্রবেশ করেছে।
সোমবার হামাস গাজায় আটক থাকা বাকি ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকেও মুক্তি দেয়। দুই বছরের বিধ্বংসী যুদ্ধের পর এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় গাজায় স্বস্তির বাতাস বইছে।
চুক্তির অংশ হিসেবে নিহত ২৮ জন জিম্মির মরদেহও ফেরত দেওয়া হবে বলে জানা গেছে, যদিও ঠিক কবে তাদের হস্তান্তর করা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েলে, টেলআভিভের এক স্কোয়ারে জড়ো হওয়া জিম্মিদের পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে, যখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলো জানায় যে মুক্ত জিম্মিরা এখন রেড ক্রসের তত্ত্বাবধানে। দেশজুড়ে হাজার হাজার ইসরায়েলি বড় পর্দায় সেই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন।
পরে ইসরায়েল সরকার জিম্মিদের ঘরে ফেরার প্রথম ছবিগুলো প্রকাশ করে। প্রকাশিত ছবির মধ্যে একটি ছিল গালি ও জিভ বারম্যান নামের যমজ ভাইবোনের পুনর্মিলনের মুহূর্তের, যেখানে তাদের মুখে অবিশ্বাসের অভিব্যক্তি স্পষ্ট। আগে মুক্ত হওয়া কিছু জিম্মি জানান, ২৮ বছর বয়সী এই যমজদের গাজায় আলাদাভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।
প্রকাশিত প্রাথমিক ছবিগুলোতে দেখা যায়, এবার মুক্ত হওয়া ব্যক্তিরা জানুয়ারিতে মুক্ত হওয়া কিছু জিম্মির তুলনায় অপেক্ষাকৃত সুস্থ ও কম ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কারাগার থেকে শত শত বন্দি মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন। তবে ওফার কারাগারের কাছে জমায়েত জনতার ওপর ইসরায়েলি পতাকাবাহী সাঁজোয়া যান থেকে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়া হয়। মাথার ওপর ড্রোন উড়তে থাকায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় অপেক্ষমাণ ভিড়।
এ ঘটনার আগে এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল একটি লিফলেট, যাতে সতর্ক করা হয়েছিল, যারা ‘সন্ত্রাসী সংগঠনকে’ সমর্থন করবে, তাদের গ্রেফতার করা হবে। ঘটনাস্থলে থাকা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) সাংবাদিকরা ওই লিফলেটের কপি পান, তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
যদিও গাজার ভবিষ্যৎ এবং হামাসের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বড় প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে, তবুও এই বন্দি ও জিম্মি বিনিময় বিশ্বের কাছে এক আশাব্যঞ্জক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি হয়তো ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘটিত সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসানের সম্ভাবনা তৈরি করছে।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় গাজার বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিতে থাকা মানুষদের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠানোর পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র: আরব নিউজ
এসএএইচ