প্রকাশ্যে এলেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট, ফেসবুক লাইভে ‘বিস্ফোরক মন্তব্য’
মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা/ ফাইল ছবি: এএফপি
দেশ ছেড়ে পালানোর গুঞ্জনের মধ্যেই প্রকাশ্যে এলেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট, ফেসবুক লাইভে এসে করলেন ‘বিস্ফোরক মন্তব্য’। প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা জানিয়েছেন, তার ওপর প্রাণঘাতী হামলার চেষ্টা এবং অভ্যুত্থানের আশঙ্কার কারণে তিনি বর্তমানে একটি “নিরাপদ স্থানে’ রয়েছেন।
ফেসবুক লাইভে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, একদল সেনা কর্মকর্তা ও রাজনীতিক আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল।
৫১ বছর বয়সী রাজোয়েলিনা তার অবস্থান প্রকাশ না করলেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তিনি ফরাসি সামরিক প্লেনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে তার পদত্যাগের দাবিতে মাদাগাস্কারে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে।
আরও পড়ুন>>
জেন জি আন্দোলনে আরও এক দেশে সরকার পতন
জেন-জি বিক্ষোভের মুখে এবার দেশ ছেড়ে পালালেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট
মাদাগাস্কারে সরকারবিরোধী জেন-জি বিক্ষোভে অংশ নিলেন সেনা সদস্যরা
মাদাগাস্কারে প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বললো জেন জিরা
জেন জিদের এই আন্দোলন প্রশমনে রাজোয়েলিনা পুরো মন্ত্রিসভা ভেঙে দিলেও তাতে কোনো ফল হয়নি। গত বুধবারের পর থেকে তিনি জনসমক্ষে দেখা দেননি। সপ্তাহান্তে প্রেসিডেন্ট কার্যালয় জানায়, রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা চলছে। সোমবার তার ভাষণ কয়েক দফা বিলম্বিত হয়, কারণ সেনারা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দখলের হুমকি দিয়েছিল।
অবশেষে তিনি ভাষণে বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আমাকে হত্যার ও অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলছে। জীবন রক্ষার্থে আমাকে নিরাপদ স্থানে যেতে বাধ্য হতে হয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো দেশের বর্তমান সংবিধান মেনে চলা।
এদিকে, শক্তিশালী সেনা ইউনিট ক্যাপসাট, যারা ২০০৯ সালে রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় বসাতে ভূমিকা রেখেছিল, তারা এবার তার বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে এবং নিজেদের দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বময় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে। কিছু সেনা সদস্য রাজধানী অ্যান্টানানারিভোর বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
সোমবার সেনা কমান্ডারদের বৈঠকের পর নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল ডেমোস্থেনে পিকুলাস বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী যৌথভাবে দেশজুড়ে শৃঙ্খলা রক্ষা করছে। সন্ধ্যায় তিনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে সংকট সমাধানের আহ্বান জানান।
বিরোধী দল টিআইএমের এক শীর্ষ নেতা বিবিসিকে জানান, বর্তমানে মাদাগাস্কার কার্যত সেনা নিয়ন্ত্রণে। দলটি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ‘দায়িত্ব পরিত্যাগের’ অভিযোগে অভিশংসন প্রস্তাব আনবে বলেও ঘোষণা করেছে।
রাজোয়েলিনার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন উপদেষ্টা এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী মরিশাসে পালিয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান এনৎসে এবং ব্যবসায়ী মামিনিয়ান রাভাতোমাঙ্গা।
প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও মাদাগাস্কার বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য বলছে, মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মানুষের বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে।
দেশটিতে প্রথমে পানি ও বিদ্যুৎ সংকট ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হলেও পরে তা বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আন্দোলনের প্রথম দিকের কয়েক দিনে অন্তত ২২ জন নিহত এবং এক শতাধিক আহত হয়। সরকার অবশ্য এই সংখ্যা অস্বীকার করেছে।
১৯৬০ সালে স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি বারবার রাজনৈতিক অস্থিরতায় কেঁপে উঠেছে। ২০০৯ সালের গণবিক্ষোভেই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানাকে পদত্যাগে বাধ্য করে রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় বসানো হয়। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩৪ বছর, যা তাকে আফ্রিকার সবচেয়ে কমবয়সী নেতা করে তোলে।
ব্যবসায়ী ও ডিজে হিসেবে খ্যাত রাজোয়েলিনা পরে রাজনীতিতে আসেন। কিন্তু দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে তার জনপ্রিয়তা দ্রুত কমে যায়, আর এবার সেই বিরোধিতাই তার ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
সূত্র: বিবিসি
কেএএ/