আল-জাজিরার এক্সপ্লেইনার
জাপানের ‘আয়রন লেডি’ তাকাইচি, কে এই প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী
সানায়ে তাকাইচি/ ছবি: এএফপি
জাপানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রধানমন্ত্রী হলেন সানায়ে তাকাইচি। সংসদীয় নেতৃত্ব নির্বাচনে জয়লাভের পর মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) তিনি সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, যা তার ক্ষমতা গ্রহণের আনুষ্ঠানিক ধাপ হিসেবে বিবেচিত।
৬৪ বছর বয়সী তাকাইচি ১৯৯০-এর দশকে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সদস্য হিসেবে।
জাপানের কেন্দ্রীয় প্রদেশ নারা-তে জন্ম নেওয়া তাকাইচি কোবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
তার শৈশব ও পারিবারিক পটভূমি তুলনামূলকভাবে সাধারণ, যা তাকে এলডিপির ঐতিহ্যবাহী অভিজাত রাজনীতিকদের থেকে আলাদা করে তোলে।
তাকাইচি ছিলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও রাজনৈতিক শিষ্য। তিনি আবে ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা—দুজনের মন্ত্রিসভাতেই গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তাকাইচি রাজনৈতিকভাবে রক্ষণশীল—ব্রিটেনের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হওয়ায় গণমাধ্যমে তাকে জাপানের আয়রন লেডি বলা হয়।
তিনি তার নীতিতে ‘আবেনোমিকস’-এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পক্ষে, যেখানে রাজস্ব সম্প্রসারণ, অর্থনীতিতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি এবং কাঠামোগত সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয়।
সামাজিক বিষয়ে তাকাইচির অবস্থান আরও কঠোর—তিনি সমলিঙ্গ বিবাহের বিরোধী,
অভিবাসন নীতিতে কঠোর অবস্থান নেন এবং মনে করেন রাজপরিবারের উত্তরাধিকার পুরুষদের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
বিদেশনীতি ও নিরাপত্তা প্রশ্নে তাকাইচি ‘চীন-বিরোধী কঠোর অবস্থান’-এর জন্য পরিচিত এবং তাইওয়ান ইস্যুতেও দৃঢ় অবস্থান নেন। তিনি একাধিকবার তাইপেই সফর করেছেন, যা বেইজিংয়ের অসন্তোষের কারণ হয়েছে।
তিনি ইয়াসুকুনি মন্দিরও পরিদর্শন করেছেন—যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের স্মরণ করা হয়—এটি জাপান ও প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বিতর্কিত ইস্যু।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির জয়ে জাপান আরও ডানপন্থি ও রক্ষণশীল নীতির পথে এগোবে। তবে জাপানের রক্ষণশীলতা পশ্চিমাদের ধারণা থেকে কিছুটা ভিন্ন।
স্টিফেন নাগি জাপানের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আল জাজিরাকে বলেন—জাপানে রক্ষণশীল মানে নিরাপত্তায় দৃঢ়, চীনের বিষয়ে কঠোর, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখা। একই সঙ্গে এটি এমন এক সরকারব্যবস্থা, যা সামাজিক কল্যাণকেও গুরুত্ব দেয়।
তাকাইচির পথ সহজ নয়। তিনি হবেন জাপানের পাঁচ বছরে চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী এবং তুলনামূলক দুর্বল অবস্থান থেকে নেতৃত্ব শুরু করছেন।
বর্তমানে এলডিপি সংসদের দুই কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে এবং চরম ডানপন্থী সানসেইতো পার্টি-র সঙ্গে তাদের পুরোনো জোটও ভেঙে গেছে। পরে এলডিপি জাপান ইনোভেশন পার্টি-র সঙ্গে নতুন জোট গঠন করে প্রয়োজনীয় আসনসংখ্যা নিশ্চিত করে তাকাইচির জয় নিশ্চিত করে।
তাকাইচিকে এখন একসঙ্গে সামলাতে হবে—দেশের জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব এবং চীন ও উত্তর কোরিয়া নিয়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ।
এর পাশাপাশি দলটি এখনও বড় দুর্নীতি কেলেঙ্কারির প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচিকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে তাকে তার কিছু কঠোর অবস্থান নরম করতে হবে, নইলে সংসদে আস্থা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
সূত্র: আল-জাজিরা
এমএসএম