কপ-৩০
জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রশ্নে অনৈক্য, সফলতা সামান্য
জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০ অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রাজিলের বেলেম শহরে/ ফাইল ছবি : এএফপি
জাতিসংঘের কপ-৩০ প্রধান জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করার রোডম্যাপ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছেন বিশ্বনেতারা। জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলো এ রোডম্যাপের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছে যার মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এ বছর জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০ অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রাজিলের বেলেম শহরে। সম্মেলনের শেষ ঘোষণাপত্রে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের কোনো রোডম্যাপ রাখা হয়নি। এমন পদক্ষেপ খালি চুক্তি এবং নৈতিক ব্যর্থতা বলে ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে।
যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসসহ ৯০টির বেশি দেশ ফসিল ফুয়েল ফেসআউটের একটি রোডম্যাপ চাইলেও ব্রিকসভুক্ত দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর বিরোধিতার কারণে এ প্রস্তাব ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে আমাজন জঙ্গলের মাঝে কপ-৩০ অনুষ্ঠিত হলেও বন উজাড় বন্ধের কোনো রোডম্যাপ চূড়ান্ত চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
তবে এত বড় ব্যর্থতার মধ্যেও সফলতার কিছু দিক হচ্ছে, প্রথমবারের মতো কপ চুক্তিতে তথ্যের সঠিকতা ও সুরক্ষা রক্ষার প্রতিশ্রুতি এসেছে। এটি জলবায়ু বিজ্ঞান রক্ষা, ভুয়া তথ্য দমন এবং বিজ্ঞাপন/বিগ টেকের ভুল তথ্য ছড়ানো বন্ধের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া ব্রাজিল ট্রপিক্যাল ফরেস্ট ফরএভার ফ্যাসিলিটি নামে কয়েক বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এক্ষেত্রে ব্রাজিলের বন অক্ষত রাখা হলে এ অর্থ প্রদান করা হবে। পাশাপাশি এ তহবিলে জার্মানি ১ বিলিয়ন ইউরো এবং নরওয়ে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ইউরো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আরেকটি সফলতা হচ্ছে, ধনী দেশগুলো জলবায়ু অভিযোজন তহবিল তিনগুণ বাড়াতে সম্মত হয়েছে। তবে ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল গঠনের লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমা ৫ বছর পিছিয়ে ২০৩৫ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবার কপ-৩০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনকে একটা প্রতারণা বলে অভিহিত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতির কারণে জলবায়ু সম্মেলন ঘিরে রাজনৈতিক ও আর্থিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
তবে বায়ুদূষণ কমানো ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি ধরে রেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। জোটটি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১.৫°C লক্ষ্য বজায় রেখেছে এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। পাশাপাশি দেশীয় উদ্যোগ ও বিদেশি সবুজ জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে।
পরিবেশ থিংকট্যাঙ্ক ক্লাইমেট অ্যানালিটিক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কপ-২৮ এ করা প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়িত হলে আগামী ১০ বছরে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হার এক-তৃতীয়াংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে অর্ধেকে নামানো যেত। তাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা এই শতকে ২°C–এর নিচে রাখা সম্ভব হতো।
সূত্র : ইউরো নিউজ
কেএম