রাস্তায় ফেলে যাওয়া নবজাতককে সারারাত পাহারা দিলো একদল কুকুর
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার নবদ্বীপে রাস্তায় ফেলে যাওয়া এক নবজাতককে রাতভর পাহারা দেয় পথকুকুরের একটি দল/ ছবি: এআই দিয়ে বানানো
পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায় এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনা ঘটেছে। জেলার নবদ্বীপে ফেলে যাওয়া এক নবজাতককে রাতভর পাহারা দিয়ে রক্ষা করেছে কয়েকটি পথকুকুর। সোমবার (১ ডিসেম্বর) ভোরের দিকে রেলওয়ে কর্মীদের একটি কলোনির বাথরুমের সামনে এমন দৃশ্য দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সোমবার (১ ডিসেম্বর) ভোরে রক্তমাখা অবস্থায় সদ্যোজাত শিশুটিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেসময় আশেপাশে কোনো মানুষের অস্তিত্বও ছিল না। তবে কলোনির মানুষদের ভাষায়, একদল পথকুকুর শিশুটিকে ঘিরে নিখুঁত একটি বৃত্ত তৈরি করে সারারাত দাঁড়িয়ে ছিল। কোনো শব্দ নয়, কোনো আগ্রাসন নয়, শুধু সতর্ক পাহারা।
শিশুটিকে প্রথম দেখতে পান কলোনির বাসিন্দা শুক্লা মণ্ডল। তিনি বলেন, ঘুম ভেঙে এমন দৃশ্য দেখবো ভাবিনি। কুকুরগুলো আক্রমণাত্মক ছিল না, বরং তারা খুবই সতর্ক অবস্থায় বৃত্তাকার দাঁড়িয়ে ছিল। যেন তারা বুঝতে পারছিল যে শিশুটি বাঁচার জন্য লড়াই করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শুভাশ পাল জানান, ভোরের দিকে হঠাৎ হালকা কান্নার শব্দ শুনে তিনি ভেবেছিলেন কোনো পরিবারের অসুস্থ শিশু। ভাবতেই পারিনি বাইরে এক নবজাতক পড়ে আছে, আর কুকুরগুলো তাকে পাহারা দিচ্ছে।
আলো ফুটতেই শুক্লা মণ্ডল ধীরস্বরে ডেকে এগিয়ে গেলে কুকুরগুলো আস্তে আস্তে সরে গিয়ে পথ করে দেয়। তিনি নিজের ওড়না দিয়ে শিশুটিকে জড়িয়ে নেন ও প্রতিবেশীদের সাহায্যে তাকে মহেশগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে শিশুটিকে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চিকিৎসকদের ভাষ্য, শিশুটির দেহে কোনো আঘাত নেই। মাথায় রক্ত থাকলেও তা জন্মের সময়ের, যা প্রমাণ করে জন্মের কিছুক্ষণ পরই তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
নবদ্বীপ পুলিশ মনে করছে, স্থানীয় কেউ রাতের অন্ধকারেই শিশুটিকে রেখে গেছেন। পুলিশ ও চাইল্ড হেল্পলাইন শিশুটির দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এক রেলকর্মী বলেন, যাদের আমরা প্রতিদিন তাড়াই, তারাই সেই শিশুটির প্রাণ বাঁচালো।
অন্যদিকে, একই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে বলে জানা গেছে। নয় বছর আগে কলকাতায় চারটি কুকুর একটি নবজাতক কন্যাকে ঘিরে কাক তাড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ পাহারা দিয়েছিল, সেই স্মৃতিও আবার ফিরে এসেছে মানুষের মনে।
নবদ্বীপের এই শিশুটিকে উদ্ধারের পর সন্ধ্যায় রেল কলোনির শিশুদের ওই পথকুকুরগুলোবে বিস্কুট খাওয়াতে দেখা যায়। এক কিশোর হাত বুলিয়ে বলছিল, ওরাই তো বাচ্চাটাকে বাঁচিয়েছে।
সবশেষে শহরের মানুষরা বলছেন, এই রাতটি তারা ভুলবেন না, যে রাতে রক্ষাকর্তা হয়ে উঠেছিল পথের কুকুর, আর মানবিকতার পাঠ তারা প্রাণীদের কাছ থেকেই পেলো।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন, টাইমস অব ইন্ডিয়া
এসএএইচ