যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলা দ্বন্দ্ব
ট্রাম্পের সঙ্গে কথা চালিয়ে যান: মাদুরোকে এরদোয়ান
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান/ ফাইল ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তজেনা কমাতে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যেতে বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) টেলিফোনে কথা বলার সময় মাদুরোকে এই আহ্বান জানান তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবিয়ান সাগরে বিশাল সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে। এ অঞ্চলে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে লক্ষ্যবস্তু করা নৌকায় ২০টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী, যাতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু নৌকাগুলো সত্যিই মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল কি না, ওয়াশিংটন এ পর্যন্ত কোনো তার কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রকাশিত তুর্কি প্রেসিডেন্টের দপ্তরের বার্তায় বলা হয়, এরদোয়ান মাদুরোকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে সংলাপের চ্যানেল খোলা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, উত্তেজনা দ্রুত কমে আসবে।
এরদোয়ান আরও জানান, আঙ্কারা অঞ্চলটির পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ও তুরস্ক বিশ্বাস করে, সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই সম্ভব।
ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এরদোয়ান দেশের ওপর নেমে আসা বিভিন্ন হুমকি, বিশেষ করে মার্কিন সামরিক মোতায়েন ও শান্তি-নিরাপত্তা ব্যাহতকারী নানা পদক্ষেপ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আলোচনায় মাদুরো এরদোয়ানকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এই হুমকিগুলো অবৈধ, অপ্রতুল, অপ্রয়োজনীয় ও অস্বাভাবিক বলেছেন মাদুরো।
আলোচনায় উঠে আসে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত থাকার বিষয়টিও। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা ‘বন্ধ’ বিবেচনা করা উচিত, যার পর থেকেই দেশটিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত রয়েছে।
এর আগে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) মাদুরো জানান, অঞ্চলে মার্কিন সামরিক জোরালো উপস্থিতির সময় তিনি ১০ দিন আগে ট্রাম্পের সঙ্গে ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ ফোনালাপ করেছেন। ট্রাম্পও কথোপকথনের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও কী কথা হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এ সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন মাসব্যাপী উত্তেজনার পর শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকও করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন ধরে মাদুরোর বিরুদ্ধে ড্রাগ কার্টেল পরিচালনার অভিযোগ করে আসছেন, যদিও ভেনেজুয়েলা তা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত মাসে ক্যারিবিয়ান সাগরে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করে, তার সঙ্গে যুক্ত করা হয় আরও একটি যুদ্ধজাহাজের বহর।
তুরস্ক ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে ঘনিষ্ঠ মিত্রতা রয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মাদুরোর প্রতি সমর্থন জানাতে এরদোয়ান শেষবার কারাকাস সফর করেন। সে সময় ওয়াশিংটনসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগে মাদুরোর পুনর্নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি।
বিভিন্ন মার্কিন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমে ধারণা দেওয়া হয়েছে যে মাদুরোকে যদি ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়, তাহলে তিনি তুরস্কে আশ্রয় নিতে পারেন।
গত সপ্তাহে মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এক্সে ব্যঙ্গ করে লেখেন, শুনেছি এই সময় তুরস্ক আর ইরান খুবই মনোরম। তিনি ইঙ্গিত করে যে মাদুরোর পালানোর পথ নাকি সেদিকেই।
সূত্র: এএফপি
এসএএইচ