জিন্নাহকে সমর্থন জানিয়ে ‘বন্দে মাতরম’ এর বিরোধিতা করেছিলেন নেহরু: মোদী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতীয় কংগ্রেসের প্রয়াত নেতা ও ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জ
ভারতের জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম’ রচনার ১৫০ বছরপূর্তি হয়েছে। এ নিয়ে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সংসদের নিম্মকক্ষ লোকসভার অধিবেশনে বিরোধী দল কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এদিন মোদী দাবি করেন, প্রয়াত কংগ্রেস নেতা ও ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ‘বন্দে মাতরম’র বিরোধিতা করেছিলেন ও এতে তিনি পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মতবাদ সমর্থন করেছিলেন। কারণ, গানটি নাকি মুসলমানদের ‘উত্তেজিত’ করতে পারে।
তিনি বলেন, যখন ‘বন্দে মাতরম’ তার ১০০ বছর পূর্তি পালন করছিল, তখন দেশ ছিল জরুরি অবস্থার জালে। এর শতবর্ষে সংবিধানকে শ্বাসরোধ করে রাখা হয়েছিল।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এখন ১৫০ বছরে এসে ‘বন্দে মাতরম’র গৌরব পুনরুদ্ধারের ভালো সময়, যে গান আমাদের ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। তিনি বন্দে মাতরমের রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে স্মরণ করে বলেন, গানটি লেখা হয় ১৮৭৫ সালের নভেম্বরে ও খুব দ্রুতই তা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মূল স্লোগানে পরিণত হয়।
প্রধানমন্ত্রী আরও স্মরণ করিয়ে দেন, আমরা সম্প্রতি আমাদের সংবিধানের ৭৫ বছর উদযাপন করেছি। দেশ উদযাপন করেছে সরদার বল্লভভাই পটেলের ও বীরসা মুন্ডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী। আমরা গুরু তেগ বাহাদুর জি’র ৩৫০তম শাহাদাৎ দিবসও পালন করছি। আর এবার আমরা উদযাপন করছি বন্দে মাতরমের ১৫০ বছর।
‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে কয়েকদিন ধরেই কংগ্রেসকে নিশানা করছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, ১৯৩৭ সালের অধিবেশনে কংগ্রেস নাকি ‘সাম্প্রদায়িক তোষণ’ এর জন্য গানটি খর্ব করে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ গ্রহণ করে।
আজ গানটি কার্যত নতুন একটি রাজনৈতিক লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। একদিকে শাসক বিজেপি, অন্যদিকে কংগ্রেস। আর এই লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গানটির ছয়টি স্তবক, যেখানে বঙ্কিমচন্দ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবী দুর্গা, কমলা (লক্ষ্মী) ও সরস্বতীর কথা উল্লেখ করেন ও ভারতকে রূপকভাবে এসব দেবীর ‘অতুলনীয় রূপে পরিপূর্ণ’ অভিভাবক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেন।
১৯৩৭ সালে জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় অনুষ্ঠানে গানটির শুধু প্রথম দুটি স্তবক গাওয়া হবে। যুক্তি ছিল, গানে দেবীদের উল্লেখ মুসলিম সমাজের কিছু অংশে গ্রহণযোগ্য হয়নি ও তারা এটিকে ‘বর্জনমূলক’ বলে মনে করেন।
গৃহীত প্রস্তাবে লেখা ছিল, সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কমিটি সুপারিশ করছে যে জাতীয় সমাবেশগুলোতে ‘বন্দে মাতরম’ গাওয়া হলে শুধু প্রথম দুটি স্তবক গাওয়া হবে। তবে কংগ্রেস একই সঙ্গে এটিও স্বীকার করে যে যে কেউ চাইলে ‘বন্দে মাতরম’ ছাড়াও অন্য কোনো গান গাইতে পারে, কিংবা অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
বিজেপির দাবি, এসব বাদ দেওয়া কংগ্রেসের ‘বিভাজনমূলক’ নীতির প্রমাণ। গত নভেম্বরেও মোদী অভিযোগ করেছিলেন, ১৯৩৭ সালে ‘বন্দে মাতরম’ এর একটি অংশ কেটে দেওয়া হয়েছিল। গানটিকে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছিল। এই বিচ্ছেদই জাতির বিভক্তির বীজ বপন করেছিল। তাই আজকের প্রজন্মের জানা জরুরি কেন এই বিভাজন তৈরি করা হয়েছিল।
গত মাসে বিজেপির মুখপাত্র সি.আর. কেশবন বিতর্কটি নতুন করে চাঙা করেন। তিনি এক্সে পোস্ট করে নেহরুর ১৯৩৭ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে নেতাজি সুভাষ বসুকে লেখা দুটি চিঠি তুলে ধরেন।
কেসভনের দাবি, নেহরু নাকি চিঠিতে ‘বন্দে মাতরমের’ দেবী সংক্রান্ত শব্দগুলোকে দেবত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করাটা ‘হাস্যকর’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। নেহরুর মতে, এসব শব্দ দেবীদের সঙ্গে যুক্ত করে ব্যাখ্যা করাটা ‘অযৌক্তিক’। অবশ্য তিনি বলেছিলেন, গানটির প্রতিটি শব্দই সম্পূর্ণ নিরাপদ ও এতে কারও আপত্তি জানানোর কিছু নেই।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ
সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক
- ১ বাবরি মসজিদে প্রথম আঘাতকারী ব্যক্তির জীবনে কী ঘটেছিল?
- ২ কঠোর হলো অভিবাসন নীতি, ইউরোপ না ছাড়লে হতে পারে দীর্ঘ সময়ের জেল
- ৩ জিন্নাহকে সমর্থন জানিয়ে ‘বন্দে মাতরম’ এর বিরোধিতা করেছিলেন নেহরু: মোদী
- ৪ নাইজেরিয়ায় অপহৃত ১০০ শিশু উদ্ধার, এখনো নিখোঁজ ১৬৫
- ৫ ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ ২০২৬, বাংলাদেশ থেকে আবেদন করবেন যেভাবে