ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

রেকর্ড ৯০১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা ব্যয় বিল পাস করালো যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:৫৯ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রচণ্ড বিরোধিতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ রেকর্ড ৯০১ বিলিয়ন বা ৯০ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বার্ষিক প্রতিরক্ষা ব্যয় অনুমোদন করে একটি বিল পাস করেছে। স্থানীয় সময় বুধবারের (১০ ডিসেম্বর) ভোটে ৩১২ জন আইনপ্রণেতা বিলের পক্ষে ও ১১২ জন এর বিরোধিতা করেন। বিলটি এখন সিনেটে পাঠানো হয়েছে ও আগামী সপ্তাহেই পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০২৬ অর্থবছরের জন্য অনুমোদিত এ ৯০১ বিলিয়ন ডলার প্রতিরক্ষা বাজেট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মে মাসে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তার চেয়ে ৮ বিলিয়ন ডলার বেশি।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ৩ হাজার ৮৬ পৃষ্ঠার এই বিস্তৃত বিলটিতে চীন ও রাশিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলায় প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইন’ বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রায় ৪ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি এবং সামরিক ঘাঁটির বাসস্থানের উন্নয়নসহ একাধিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে ইউরোপের প্রতিরক্ষায় ওয়াশিংটনের অঙ্গীকার আরও সুদৃঢ় করতে আইনপ্রণেতারা কয়েকটি ধারা যুক্ত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে- আগামী দুই বছরের প্রতিটিতে ইউক্রেনকে ৪০০ মিলিয়ন বা ৪০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা। আরেকটি ধারা অনুযায়ী, ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রকে ইউরোপে ন্যূনতম ৭৬ হাজার সেনা ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম রাখা বাধ্যতামূলক।

তবে এ বছরের বিল থেকে ট্রাম্প সমালোচিত কয়েকটি কর্মসূচি বাদ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বৈচিত্র্য, সমতা, অন্তর্ভুক্তি এবং জলবায়ুকেন্দ্রিক বিভিন্ন উদ্যোগের ১৬০ কোটি ডলারের তহবিল।

বিলটি এখন সিনেটে যাবে ও আইনপ্রণেতারা ছুটিতে যাওয়ার আগে এটি পাস করার পরিকল্পনা করেছেন। পরে বিলটি হোয়াইট হাউজে পৌঁছালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এটি আইনে সই করবেন।

স্বচ্ছতা নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হেগসেথের ওপর চাপ বাড়লো

‘জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইন’ বা এনডিএএ হলো- যুক্তরাষ্ট্রের অতি বিরল আইনগুলোর একটি, যা সাধারণত দ্বিদলীয় সমর্থন পেয়ে থাকে। ১৯৬১ সালে কার্যকর হওয়ার পর থেকে প্রতি বছরই এ বিল কংগ্রেসে পাস হয়েছে। তবে এ বছরের প্রক্রিয়া ছিল তুলনামূলক জটিল, কারণ রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে সামরিক বাহিনী পরিচালনা নিয়ে ক্রমবর্ধমান টানাপোড়েন রয়েছে।

ভোটের আগে উভয় দলের সদস্যরা তাদের সহকর্মীদের আহ্বান জানান যে বিলের কিছু ধারা নিয়ে আপত্তি থাকলেও জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই আইনটিকে সমর্থন জানাতে হবে। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি মাইক হান্না জানান, ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ভিন্নমত’ থাকলেও বিলটি ‘খুব সহজেই পাস হয়েছে’।

বিলের ভেতরে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ক্যারিবীয় সাগর ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে কথিত মাদকবাহী নৌযানে চালানো প্রাণঘাতী হামলাগুলোর ব্যাপারে প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রতি বেশি স্বচ্ছতার দাবি জানায়।

হান্না জানান, একটি ‘খুবই লক্ষণীয়’ ধারায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ এসব হামলার বিস্তারিত তথ্য না দিলে তার ভ্রমণ তহবিলের ২৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে হামলার ‘আনএডিটেড’ ভিডিও ও হামলার নির্দেশাবলি আইনপ্রণেতাদের দেখার সুযোগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা।

হান্না বলেন, এটি প্রতিনিধি পরিষদের একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ, যা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে যেন তিনি এসব হামলার পূর্ণ বিবরণ দেন।

ট্রাম্প প্রশাসন সেপ্টেম্বরে প্রথম হামলা চালানোর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২২টি পরিচিত হামলায় অন্তত ৮৬ জন নিহত হয়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করছেন, এগুলো ছিল প্রয়োজনীয় মাদকবিরোধী অভিযান; তবে এসব হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব আইনের দৃষ্টিতেও ব্যাপকভাবে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত।

এদিকে কট্টর রক্ষণশীল কিছু আইনপ্রণেতা অভিযোগ করেছেন, বিলটি যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশে অঙ্গীকার, বিশেষ করে ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি কমাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি। হাউজ আর্মড সার্ভিসেস কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান মাইক রজার্স এ সমালোচনার জবাবে বলেন, আমাদের প্রয়োজন একটি প্রস্তুত, সক্ষম এবং প্রাণঘাতী ‘যুদ্ধ বাহিনী’।

রজার্স আরও বলেন, বিশেষ করে চীন থেকে যে ধরনের হুমকি আসছে, তা গত ৪০ বছরে দেখা যায়নি। এখনকার পরিস্থিতি আরও জটিল ও চ্যালেঞ্জিং।

কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট অ্যাডাম স্মিথ বলেন, বিলটি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতা সীমিত করতে যথেষ্ট না হলেও এটি ‘সঠিক পথে একটি পদক্ষেপ’, কারণ এটি কংগ্রেসের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে। স্মিথের ভাষায়, আমার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে পরিচালিত পেন্টাগন কংগ্রেসের কাছে বা আইনের কাছে কোনোভাবেই জবাবদিহি করছে না।

সূত্র: আল-জাজিরা

এসএএইচ