ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের নিয়মিত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন গাজা শান্তিচুক্তিকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিচ্ছে: কাতার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:০৮ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নিয়মিত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন গাজা শান্তিচুক্তিকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন জসিম আল-থানি। তিনি বলেছেন, এসব লঙ্ঘনের কারণে মধ্যস্থতাকারীরা কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়ছেন ও গাজা যুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টা ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠকের পর এই মন্তব্য করেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী। সপ্তম যুক্তরাষ্ট্র-কাতার কৌশলগত সংলাপ শেষে তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে বিলম্ব ও প্রতিদিনের লঙ্ঘন পুরো প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করছে এবং মধ্যস্থতাকারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন জসিম আল-থানি/ ছবি: এএফপি

গাজা যুদ্ধ বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করা কাতার স্পষ্ট করে জানায়, গাজায় মানবিক সহায়তা কোনো শর্ত ছাড়াই প্রবেশ করতে হবে ও চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ অবিলম্বে শুরু করা জরুরি।

এই আলোচনা এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং গাজায় মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল অন্তত ৭৩৮ বার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৯৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন ও আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৭৫ জন।

আল-জাজিরার যুক্তরাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান সংবাদদাতা অ্যালান ফিশার জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের আলোচনায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রাধান্য পায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন বন্ধে চাপ বাড়ানো, যার বেশিরভাগই ইসরায়েলি বাহিনীর মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে।

এছাড়া আলোচনায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের বিষয়ও উঠে আসে। প্রস্তাবিত এই বাহিনীতে ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্কের সেনা সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা রয়েছে। তবে তুরস্কের সম্পৃক্ততায় ইসরায়েল আপত্তি জানিয়েছে। পাশাপাশি গাজায় ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট নিয়েও আলোচনা হয়, যেখানে কাতার যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আরও বেশি সহায়তা প্রবেশের আহ্বান জানায়।

হামাস নেতাকে হত্যা, উত্তেজনা চরমে

গত সপ্তাহের শেষে ইসরায়েল গাজা সিটিতে হামাসের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার রায়েদ সাদকে হত্যার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, এই হামলা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে কি না, তা তার প্রশাসন খতিয়ে দেখছে।

একই সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে জানান, হোয়াইট হাউজ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে কঠোর বার্তা পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়, ট্রাম্প যে চুক্তি করিয়েছেন, তা যেন নষ্ট না করা হয়।

শীতের দুর্যোগে গাজায় মানবিক বিপর্যয়

গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শীতকালীন ঝড়ের মধ্যে লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি অস্থায়ী তাঁবু বা ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ইসরায়েল স্থানান্তরযোগ্য ঘরসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ঢুকতে না দেওয়ায় সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, বরাদ্দকৃত ত্রাণবাহী ট্রাকের মাত্র ৩৯ শতাংশ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে। ইসরায়েল পুষ্টিকর খাদ্য ঢুকতে বাধা দিচ্ছে, অথচ অপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের প্রবেশ অনুমতি দিচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি দুই সপ্তাহ বয়সী শিশু মোহাম্মদ খলিল আবু আল খাইর তীব্র ঠান্ডাজনিত হাইপোথার্মিয়ায় মারা গেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রায় ৩০ হাজার শিশু ঝড়ের কারণে তাদের আশ্রয়স্থল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে। ইসরায়েল এখনো তাঁবু ও কম্বলসহ জরুরি শীতকালীন সরঞ্জাম গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না।

চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা

হামাসের গাজা প্রধান খালিল আল হাইয়া বলেছেন, ইসরায়েলের ধারাবাহিক লঙ্ঘন পুরো চুক্তির কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে ফেলছে। তিনি ট্রাম্পকে ইসরায়েলের ওপর চাপ দিয়ে চুক্তি মানতে বাধ্য করার আহ্বান জানান।

অন্যদিকে, নেতানিয়াহু রায়েদ সাদ হত্যার পক্ষে সাফাই গেয়ে দাবি করেন, হামাস অস্ত্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করে চুক্তি ভঙ্গ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে হওয়া যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার ও আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের কথা রয়েছে। তবে এসব বিষয় প্রথম ধাপের তুলনায় অনেক বেশি জটিল বলে মনে করা হচ্ছে।

নেতানিয়াহু জানান, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ প্রায় শেষের দিকে ও গাজায় নিহত শেষ ইসরায়েলি বন্দি মাস্টার সার্জেন্ট র‍্যান গিভিলির মরদেহ ফেরত আনতে চেষ্টা চলছে।

এদিকে, ইসরায়েল শত শত ফিলিস্তিনি বন্দির মরদেহ ফিরিয়ে দিয়েছে, যেগুলোর অনেকটিতেই নির্যাতন, অঙ্গচ্ছেদ ও হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের বর্ণনা ও হস্তান্তর করা মরদেহের অবস্থা ইসরায়েলি নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে।

সূত্র: আল-জাজিরা

এসএএইচ