মাচাদোকে শান্তি পুরস্কার দেওয়ায় নোবেল ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে অ্যাসাঞ্জের ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের
ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুইডেনে নোবেল ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। অভিযোগে নোবেল ফাউন্ডেশনের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তিনি বলেন, এই পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে তহবিলের ‘চরম অপব্যবহার’ করা হয়েছে এবং এটি সুইডিশ আইনের আওতায় ‘যুদ্ধাপরাধকে সহায়তা’ করার শামিল।
অ্যাসাঞ্জ বলেন, চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের অর্থ হিসেবে মাচাদোর কাছে স্থানান্তরিত হওয়ার কথা থাকা ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১১ লাখ ৮০ হাজার ডলার) স্থগিত রাখার আবেদনও তিনি করেছেন।
চলতি বছরের অক্টোবরে নোবেল কমিটি ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও একনায়কতন্ত্র থেকে শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্রে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য মারিয়া করিনা মাচাদোকে শান্তি পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দায়ের করা অ্যাসাঞ্জের অভিযোগপত্রে নোবেল ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট ৩০ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তহবিল আত্মসাৎ, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে সহায়তা এবং আগ্রাসী অপরাধে অর্থায়নের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগে অ্যাসাঞ্জ বলেন, মাচাদোকে পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে ‘শান্তির একটি উপকরণকে যুদ্ধে ব্যবহারের উপকরণে’ পরিণত করা হয়েছে। তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে সামরিক চাপ প্রয়োগের যে নীতি অনুসরণ করছে, মাচাদো তা উসকে দিয়েছেন ও সমর্থন করেছেন, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা দেওয়ার সমান।
বিতর্কিত নির্বাচন
নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মাচাদোর নির্বাচন শুরু থেকেই বিতর্কের জন্ম দেয়। গাজায় চলমান ইসরায়েলের ‘গণহত্যামূলক যুদ্ধ’র সময় ইসরায়েলের প্রতি তার প্রকাশ্য সমর্থন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। অক্টোবরে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পরপরই তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপও করেন।
তিনি ক্ষমতায় এলে ভেনেজুয়েলার ইসরায়েলি দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের অঙ্গীকার করেছেন। একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে মাদুরোবিরোধী অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং তার প্রশাসনের ডানপন্থি কট্টর গোষ্ঠীর সঙ্গে অবস্থান নিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা দাবি করে আসছেন, মাদুরোর সঙ্গে অপরাধী মাদকচক্রের যোগসূত্র রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। যদিও ওয়াশিংটনের গোয়েন্দা মহলে এই দাবির বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের হুমকিও দিয়েছে।
গত সেপ্টেম্বর থেকে ট্রাম্প ক্যারিবীয় সাগর ও লাতিন আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে কথিত মাদক পাচারকারী জাহাজ লক্ষ্য করে ২০টির বেশি সামরিক হামলার নির্দেশ দেন। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ১০৪ জন নিহত হয়েছে।
এ ছাড়া ভেনেজুয়েলায় সম্ভাব্য সামরিক আগ্রাসনের আশঙ্কায় লাতিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও বিমান বাহিনীর বড় ধরনের মোতায়েন চলছে।
অ্যাসাঞ্জ বলেন, ট্রাম্পের সামরিক অভিযানের প্রতি মাচাদোর সমর্থন নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্যতার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। তার ভাষায়, এতে আলফ্রেড নোবেলের উইলে নির্ধারিত শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ১৮৯৫ সালে আলফ্রেড নোবেলের করা উইলে স্পষ্টভাবে বলা আছে- যিনি ‘জাতিগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব’ প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি অবদান রাখবেন ও মানবজাতির সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধন করবেন, তাকেই শান্তি পুরস্কার দেওয়া হবে।
উইকিলিকসের পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়েছে, এই অর্থ ‘আগ্রাসন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধে সহায়তা’ করতে ব্যবহৃত হওয়ার বাস্তব ঝুঁকি রয়েছে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার নরওয়ের অসলোতে একটি নির্বাচন কমিটির মাধ্যমে প্রদান করা হলেও অ্যাসাঞ্জের দাবি, আর্থিক দায়ভার বহন করে স্টকহোমভিত্তিক নোবেল ফাউন্ডেশন, তাই তাদেরই জবাবদিহি করতে হবে। সুইডিশ পুলিশ নিশ্চিত করেছে, তারা এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছে।
২০০৬ সালে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা করেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা গোয়েন্দা বিশ্লেষক চেলসি ম্যানিংয়ের ফাঁস করা গোপন নথি প্রকাশের মাধ্যমে তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেন।
২০১২ সালে সুইডেনে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে প্রত্যর্পণ এড়াতে তিনি লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নেন এবং সাত বছর সেখানে অবস্থান করেন। পরে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়।
২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনের উচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন বেলমার্শ কারাগারে বন্দি ছিলেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে সামরিক গোপন তথ্য সংগ্রহের ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত করে প্রত্যর্পণের চেষ্টা চালায়।
শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তির আওতায় গুপ্তচরবৃত্তি আইনের একটি অভিযোগে দোষ স্বীকারের পর ২০২৪ সালে তিনি মুক্তি পান এবং নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান।
সূত্র: আল-জাজিরা
এসএএইচ
সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক
- ১ মাচাদোকে শান্তি পুরস্কার দেওয়ায় নোবেল ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে অ্যাসাঞ্জের ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের
- ২ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না ভারত
- ৩ ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে প্রস্তুত রাশিয়া: পুতিন
- ৪ উত্তেজনার মধ্যেই বাংলাদেশ সীমান্ত পরিদর্শনে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারা
- ৫ ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না : ট্রাম্প