ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

ইতালিতে বাংলাদেশিদের হাতেই নির্যাতিত বাংলাদেশি, গ্রেফতার ৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:৫৪ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

ইতালির সিসিলির ভিটোরিয়ায় পৌঁছানোর পরপরই দুই বাংলাদেশি অভিবাসীকে অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে চার বাংলাদেশি নাগরিককে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এর মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন এখনো পলাতক।

কাতানিয়া পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের নির্দেশে স্থানীয় রাগুসা পুলিশ সদর দপ্তর ২৫, ৩৩, ৩৪ ও ৪৩ বছর বয়সী চার বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে কারাগারে আটক রাখার আদেশ কার্যকর করেছে। প্রসিকিউটর কার্যালয়ের অ্যান্টি-মাফিয়া অধিদপ্তর (ডিডিএ) এ বিষয়ে সার্বিক তদন্ত পরিচালনা করেছে।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে অপহরণ ও গুরুতর নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের অপরাধী হিসেবে গণ্য না করার নীতিও বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে বিচারিক কর্তৃপক্ষ।

তদন্ত অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সিসিলির ভিটোরিয়ার গ্রামাঞ্চলে এই ঘটনাটি ঘটে। ডিডিএর তত্ত্বাবধানে রাগুসা ফ্লাইং স্কোয়াডের বিদেশি অপরাধ শাখা তদন্ত পরিচালনা করে। তদন্তে তারা জানতে পেরেছেন, ইতালির বহুল পরিচিত ‘দেক্রেতো ফ্লুসি’ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশটিতে আসা দুই বাংলাদেশি যুবককে চাকরি ও চুক্তি সইয়ের আশ্বাস দিয়ে পাচারের ফাঁদে ফেলা হয়।

ইতালিতে আসার পর তাদের ভিটোরিয়ার একটি নির্জন গ্রামীণ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই বাড়িটি কার্যত একটি কারাগারে পরিণত হয়। তদন্তে বলা হয়, ভুক্তভোগীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়, হাত-পা বেঁধে আলাদা আলাদা কক্ষে আটকে রাখা হয়। এমনকি তাদের কখনো শেকল দিয়ে, লোহার রড ও ধাতব পাইপ দিয়ে মারধর করা হয়েছে। তাদের শ্বাসরোধ করার চেষ্টাও করা হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে।

তদন্তকারীদের মতে, অভিযুক্ত পাচারকারীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভুক্তভোগীদের পরিবারকে ফোন করে ভয় দেখিয়ে মুক্তির বিনিময়ে অর্থ আদায় করা।

অভিযুক্তরা সংগঠিত অপরাধ চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ভয় দেখিয়ে আরও আতঙ্ক তৈরি করেছিল বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে এই সহিংসতা অব্যাহত ছিল।

অভিযোগে আরও বলা হয়, আটক ব্যবস্থাটি এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যাতে একজন ভুক্তভোগী অন্যজনের চিৎকার শুনতে পান। নির্যাতনের সময় পরিবারের সদস্যদের ফোন করে সরাসরি সেই চিৎকার শোনানো হতো, যাতে তাদের ওপর মানসিক চাপ বাড়ে এবং দ্রুত অর্থ পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

প্রায় ২০ হাজার ইউরো মুক্তিপণ দেওয়ার পরই দুজনকে ওই স্থান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলেও তদন্তে উঠে এসেছে।

তদন্তকারীরা জানান, এই অপরাধের ধরন লিবিয়ায় অভিবাসী পাচারকারী নেটওয়ার্কগুলোর ব্যবহৃত নির্যাতন পদ্ধতির সঙ্গে মিল রয়েছে। সেখানে অভিবাসীদের অপহরণ করে নির্যাতন করা হতো এবং কখনো ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হতো। ভিটোরিয়ার ঘটনায় ইটালির ভেতরেই একই কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।

কাতানিয়ার তদন্ত বিচারকের জারি করা আদেশ অনুযায়ী তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। চতুর্থ অভিযুক্তকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস
কেএএ/