ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের ২০০ কোটি ডলারের মানবিক সহায়তা ঘোষণা, পাবে বাংলাদেশও

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:২১ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের জন্য ২০০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশসহ মোট ১৭টি দেশ এই সহায়তা পাবে।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) এমন সময়ে এই ঘোষণা এলো, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সামগ্রিকভাবে বিদেশি সহায়তা কমাচ্ছে এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে নতুন আর্থিক বাস্তবতায় ‘খাপ খাওয়াতে, সঙ্কুচিত হতে অথবা বিলুপ্ত হতে’ আহ্বান জানাচ্ছে।

ঘোষিত এই অর্থ অতীতের অনেক তুলনায় কম হলেও ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, এটি যথেষ্ট উদার সহায়তা এবং এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক দাতা হিসেবে নিজের অবস্থান বজায় রাখছে।

এই অর্থ একটি সমন্বিত তহবিলের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। ওই তহবিল থেকে বিভিন্ন জাতিসংঘ সংস্থা ও অগ্রাধিকারভিত্তিক খাতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। জাতিসংঘ ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে চাপ দিচ্ছে, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই নতুন পদ্ধতি। তবে এই ব্যবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবিক সহায়তা খাতে কর্মরত অনেকেই। তাদের আশঙ্কা, এতে বিভিন্ন কর্মসূচি ও সেবায় বড় ধরনের কাটছাঁট হতে পারে।

আরও পড়ুন>>
যুক্তরাষ্ট্রের সব বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ করলেন ট্রাম্প
মার্কিন সহায়তা বন্ধের আদেশ, বাংলাদেশে কতটা প্রভাব পড়বে?
ইউএসএআইডি বন্ধে ক্ষতি বাংলাদেশেরও, সুযোগ নিতে পারে চীন
বিদেশি সহায়তা বন্ধ করে নিজের পায়ে ‘কুড়াল মারছে’ আমেরিকা: দ্য ইকোনমিস্ট

প্রাথমিকভাবে যেসব দেশ এই সহায়তা পাবে, সেই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ, কঙ্গো, হাইতি, সিরিয়া ও ইউক্রেনের নাম। তবে বিশ্বের অন্যতম সংকটাপন্ন দেশ আফগানিস্তান এই তালিকায় নেই। একইভাবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডও অন্তর্ভুক্ত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, গাজা নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার আওতায় আলাদা তহবিল থেকে সেখানে সহায়তা দেওয়া হবে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতিসংঘ-সমর্থিত মানবিক কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক সহায়তা সর্বোচ্চ ১৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। এর মধ্যে আট থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার ছিল স্বেচ্ছা অনুদান, বাকি অংশ জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মিত চাঁদা।

সমালোচকদের মতে, পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত দূরদর্শী নয়। এতে কোটি কোটি মানুষ অনাহার, বাস্তুচ্যুতি ও রোগের ঝুঁকিতে পড়ছে এবং বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সহায়তায় সমন্বিত নেতৃত্ব চায় যুক্তরাষ্ট্র

সোমবার জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিতরণে যুক্তরাষ্ট্র ‘আরও সমন্বিত নেতৃত্ব’ চায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় দপ্তর ও এর প্রধান টম ফ্লেচার বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে অর্থ বিতরণ নিয়ন্ত্রণ করবেন।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইকেল ওয়াল্টজ বলেন, এই সংস্কারের লক্ষ্য হলো কম করদাতার অর্থে আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ সহায়তা নিশ্চিত করা, যা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ২০০ কোটি ডলার চলতি বছরের জন্য ওসিএইচএ’র বার্ষিক সহায়তা আহ্বানের প্রাথমিক কিস্তি। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও জাপানের মতো ঐতিহ্যবাহী দাতারাও সহায়তা কমিয়ে সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে।

সহায়তার জন্য কঠিন সময়

এই অঙ্গীকার এমন এক সময়ে এলো, যখন জাতিসংঘের শরণার্থী, অভিবাসন ও খাদ্য সহায়তা সংস্থাগুলোর জন্য সময়টা কঠিন হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এরই মধ্যে বিদেশি সহায়তায় শত শত কোটি ডলার কাটছাঁট করেছে। ফলে বহু সংস্থাকে প্রকল্প কমাতে, ব্যয় সংকোচন করতে এবং হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে।

অথচ বৈশ্বিক চাহিদা বেড়েই চলেছে। সংঘাতপীড়িত সুদান ও গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বন্যা ও খরায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ, বাস্তুচ্যুত হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার। এই পরিস্থিতিতেও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও ইউএনএইচসিআরের মতো সংস্থাগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগের তুলনায় অনেক কম অর্থ পেয়েছে।

এখন টম ফ্লেচারের নেতৃত্বাধীন ওসিএইচএ যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দাতার সহায়তার প্রধান চ্যানেল হিসেবে কাজ করবে। এতে একাধিক আলাদা আহ্বানের বদলে সহায়তা বিতরণ আরও কেন্দ্রীভূত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্র: এপি, ইউএনবি
কেএএ/