ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

যে কথায় আশ্বস্ত হয়েছিল মানুষ

দুনিয়াজুড়ে ইতিহাস গড়া নির্বাচনি প্রচারণা

খান আরাফাত আলী | প্রকাশিত: ০৬:৪৩ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

নির্বাচনি রাজনীতিতে প্রচারণার থিম বা স্লোগান কেবল একটি বাক্য নয়; এটি প্রার্থীর পরিচয়, রাজনৈতিক দর্শন এবং ভোটারের আবেগকে এক সুতোয় বেঁধে দেয়। একটি সফল নির্বাচনি প্রচারণার থিমে সাধারণত তিনটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়—সরলতা, আবেগী আবেদন এবং সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে গভীর সংযোগ।

বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে আলোচিত, প্রভাবশালী বা কার্যকর হিসেবে বিবেচিত এমন ১০টি প্রচারণা থিম নিচে তুলে ধরা হলো—

‘Yes We Can’ (হ্যাঁ, আমরা পারি), ‘Change’ (পরিবর্তন) এবং Hope (আশা)
বারাক ওবামা, যুক্তরাষ্ট্র (২০০৮)
ওবামার এই থিমটি পরিবর্তন, আশাবাদ ও অংশগ্রহণের প্রতীক হয়ে ওঠে। তরুণ ভোটার ও সংখ্যালঘুদের ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করে এবং আধুনিক রাজনৈতিক ব্র্যান্ডিংয়ের একটি মানদণ্ড স্থাপন করে।

‘Make America Great Again’ (আমেরিকাকে আবার মহান করো)
ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্র (২০১৬)
নস্টালজিয়া ও জাতীয়তাবাদের মিশ্রণে গড়া এই থিমটি অত্যন্ত মেরুকরণমূলক হলেও রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল এবং ভোটারদের আবেগকে সরাসরি স্পর্শ করে।

‘It’s the Economy, Stupid’ (এটা অর্থনীতির বিষয়, বোকা)
বিল ক্লিনটন, যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯২)
সরল কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর থিম। এটি নির্বাচনের মূল ইস্যুকে স্পষ্টভাবে সামনে আনে এবং প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে। যদিও ‘It’s the Economy, Stupid’ কোনো প্রকাশ্য জনসভার স্লোগান ছিল না। এটি ছিল দলীয় কর্মীদের জন্য ক্লিনটনের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার জেমস কারভিলের একটি অভ্যন্তরীণ নোট। পরবর্তীতে এটি মিডিয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পায় এবং রাজনৈতিক থিম হিসেবে গণ্য হয়।

‘Labour Isn’t Working’ (লেবারে কাজ করছে না)
কনজারভেটিভ পার্টি, যুক্তরাজ্য (১৯৭৯)
মার্গারেট থ্যাচারের উত্থানে এই থিমটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি পোস্টার ও বাক্যের মাধ্যমে পুরো সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরা হয়।

‘Aab Ki Baar, Modi Sarkar’ (এবার, মোদী সরকার)
নরেন্দ্র মোদী, ভারত (২০১৪)
ব্যক্তিত্বকেন্দ্রিক নেতৃত্ব ও পরিবর্তনের প্রত্যাশাকে একত্র করে এই থিমটি ভারতের নির্বাচনি রাজনীতিতে নতুন ধারা সৃষ্টি করে।

‘Strong and Stable Leadership’ (শক্তিশালী ও স্থিতিশীল নেতৃত্ব)
থেরেসা মে, যুক্তরাজ্য (২০১৭)
ব্রেক্সিট-পরবর্তী অনিশ্চয়তার সময়ে নেতৃত্বের দৃঢ়তার বার্তা দিতে এই থিমটি ব্যবহার করা হয়, যদিও পরে এটি ব্যঙ্গের বিষয়ও হয়ে ওঠে।

‘Brasil Acima de Tudo, Deus Acima de Todos’ (সবকিছুর ঊর্ধ্বে ব্রাজিল, সবার ঊর্ধ্বে ঈশ্বর)
জেইর বলসোনারো, ব্রাজিল (২০১৮)
রাজনৈতিকভাবে এটি একটি জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় আবেগনির্ভর স্লোগান, যেখানে রাষ্ট্র ও জাতীয় স্বার্থকে সর্বাগ্রে এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জেইর বলসোনারোর নির্বাচনি ক্যাম্পেইনের এই থিম ব্রাজিলে রক্ষণশীল ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।

‘En Marche!’ (এগিয়ে চলো)
এমানুয়েল মাক্রোঁ, ফ্রান্স (২০১৭)
রাজনৈতিক অর্থে এটি পরিবর্তন, গতি ও অগ্রগতির আহ্বান বোঝায়। এমানুয়েল মাক্রোঁ ২০১৭ সালের নির্বাচনে এই নামেই তার রাজনৈতিক আন্দোলন ও ক্যাম্পেইন চালান। স্লোগানটি পুরোনো দলীয় রাজনীতির বাইরে এসে নতুনভাবে দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

‘New Labour, New Britain’ (নতুন লেবার, নতুন যুক্তরাজ্য)
টনি ব্লেয়ার, যুক্তরাজ্য (১৯৯৭)
রাজনৈতিকভাবে এটি টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে লেবার পার্টির রিব্র্যান্ডিং স্লোগান ছিল। এর মাধ্যমে দলটিকে পুরোনো বামপন্থি ভাবমূর্তি থেকে বের করে মধ্যপন্থি, আধুনিক ও শাসনযোগ্য দল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যা ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে তাদের বড় জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

‘A Better Life for All’ (সবার জন্য আরও ভালো জীবন)
নেলসন ম্যান্ডেলা, দক্ষিণ আফ্রিকা (১৯৯৪)
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই স্লোগানটি ঐক্য, সমবায় ও যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে পরিবর্তন আনার আহ্বান বোঝায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ–পরবর্তী প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে নেলসন ম্যান্ডেলা ও আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) এই বার্তাটি ব্যবহার করে জাতীয় ঐক্য ও নতুন সূচনার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।

কেএএ/