করোনায় বিপর্যস্ত স্পেন, একদিনে ১৫৫ জনের মৃত্যু
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত ইউরোপের দেশ স্পেন। মহামারি এ ভাইরাস ঠেকাতে নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি পুরো স্পেনে জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির সরকার। কিন্তু থামছে না বিপর্যয়, প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।
দেশটিতে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯১ জনে।
রোববার (১৫ মার্চ) পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭৫৩ জন। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৫১৭ জন রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইউরোপে করোনাভাইরাসে দ্বিতীয় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ স্পেন। দেশটিতে করোনার প্রকোপ যেন বাড়তে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে লোকজনের চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এদিকে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে স্পেন সরকার। এই জরুরি অবস্থা ১৫ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। খাবারের দোকান, ওষুধ, কর্মক্ষেত্র, হাসপাতাল বা জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। সবাইকে বাড়িতেই অবস্থানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাস প্রতিরোধে গত সোমবার থেকে পুরো স্পেনে রেডজোনের আওতাভুক্ত ঘোষণা করার পর থেকেই গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে দেশটির চার কোটি ৬৭ লাখ মানুষ। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত স্পেনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মিউজিয়াম, থিয়েটার, সিনেমা, স্টেডিয়াম, কনসার্টসহ জনসমাগমের স্থানসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে দেশটির ব্যস্ততম শহরগুলো পরিণত হয়েছে জনশূন্য নগরীতে। কোথাও কেউ নেই, এ যেন জনমানবহীন এক ভুতুড়ে আতঙ্কের নগরী।
স্পেনের বার্সেলোনায় বসবাস করেন প্রবাসী বাংলাদেশি লায়েবুর রহমান খান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে সবার মাঝে। আমরা এখানে বন্দী জীবনযাপন করছি। রাস্তা-ঘাট ফাঁকা জনশূন্য। এখানকার প্রায় সব কিছু বন্ধ। বাইরে যাওয়া যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাইকিং করে বাইরে যেতে নিষেধ করছে। এক ভয়ংকর পরিস্থিতিতে আছি।

রাজধানী মাদ্রিদে বসবাসরাত ওলিউর রহমান বলেন, এখনকার বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এখানে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, গির্জা, বিনোদন কেন্দ্রসহ সব কিছু বন্ধ রয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে যাওয়া যাচ্ছে না, অযথা বাইরে গেলেই জরিমানা করা হচ্ছে। এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা খুব আতঙ্কিত। যথাযত নিয়মগুলো মেনে চললে আশা রাখি আমরা খুব শিগগিরই এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসবো।
স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে করোনার প্রকোপে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অন্যান্য শহরের চেয়ে বেশি। সেখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যাবসায়ী রমিজ উদ্দিন বলেন, ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা। গত শনিবার স্পেনে ১৮ ঘণ্টায় আরও দেড় হাজার মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস আক্রান্তের খবরে সবাই আতঙ্কিত। শহরের ব্যস্ততম সড়কপথগুলো ফাঁকা, শপিংমল হাটবাজার পর্যটন কেন্দ্র জনশূন্য। সবাই বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে গেলেও জরিমানা করা হচ্ছে। এক ভীতিকর পরিস্থিতিতে আছি সবাই।

স্পেনের সব শহরের প্রবেশদ্বারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এক শহর থেকে অন্য শহরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। কেউ এ নিয়ম বা আইন অমান্য করলে তাকে শাস্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রভাবে থমকে আছে গোটা স্পেন। অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে, এমন আশঙ্কা করছে দেশটির অর্থনীতিবিদরা।
স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের মিশন উপ-প্রধান এম হারুন আল রাশিদ বলেন, এই মুহূর্তে সবাইকে স্প্যান সরকারের আইন মানতে হবে ও নিজ বাসায় অবস্থান করে দেশকে সুরক্ষা করতে হবে। আপনার সচেতনতা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। নিজে ও অন্যের সুরক্ষায় সর্তকতা অবলম্বন করুন। আপাতত বাংলাদেশ ভ্রমণে বিরত থাকুন।
এমএসএইচ
সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক
- ১ বাবরি মসজিদের কাজ শুরু, এবার লাখো কণ্ঠে কোরআন পাঠের উদ্যোগ হুমায়ুনের
- ২ ১১ মাসে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত এক লাখ কোটি ডলার
- ৩ নেপালেও ‘বালিশ কাণ্ড’: বৃহত্তম দুর্নীতি মামলায় আসামি সাবেক মন্ত্রীসহ ৫৫ জন
- ৪ সামরিক শক্তিতে কম্বোডিয়া নাকি থাইল্যান্ড এগিয়ে?
- ৫ হায়দরাবাদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে রাস্তা করা নিয়ে বিতর্ক