ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভবিষ্যৎ কেমন?

মোহাম্মদ সোহেল রানা | প্রকাশিত: ০৫:২৮ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশে জনপ্রিয় শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে টেক্সটাইল। আধুনিক যুগে পেশার দিক থেকে এগিয়ে আছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কী? এই টেকনোলজির কাজ কী? এ ছাড়া আরও অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। তাই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ সোহেল রানা

ইঞ্জিনিয়ার ইংরেজি শব্দ, যার অর্থ প্রকৌশলী। ইঞ্জিনিয়ারিং মানে হচ্ছে প্রকৌশলের মাধ্যমে কোনো কাজ সুসম্পন্ন করাকে বোঝায়। বর্তমানে শিল্প ইন্ডাস্ট্রির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যে কারণে বাড়ছে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার গুরুত্ব।

টেক্সটাইল শব্দটি সর্বপ্রথম ওভেন বা বোনা কাপড়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। তবে বর্তমানে টেক্সটাইল শব্দটি একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ। এর মধ্যে সব ধরনের ফাইবার, যেমন- তুলা, পাট, উল, সিল্ক ও হেম্প ইত্যাদি। এ ছাড়া কিছু প্রক্রিয়া আছে; যেগুলো ছাড়া টেক্সটাইল অসম্পন্ন থেকে যায়। যেমন- উইভিং, নিটিং, ডাইং, ফিনিশিং ইত্যাদি।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগত শাখা, যেখানে টেক্সটাইল পণ্যগুলোর উন্নয়ন, উৎপাদন এবং পরিবেশ বাঁচানোর প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বর্তমানে এই টেকনোলজি ছাড়া পৃথিবীকে চিন্তা করা অসম্ভব। কেননা মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত টেক্সটাইলের ব্যবহার হয়।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যেসব বিষয় পড়ানো হয়

এতে তন্তু থেকে কাপড় বানানোর উপযোগী সুতা তৈরি কিংবা একটি ফেব্রিককে আরামদায়ক করার যেসব পদ্ধতি আছে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। অদাহ্য, তাপরোধী, রাসায়নিকরোধী কিংবা পানিরোধী ফেব্রিকের সম্ভাবনা ও ব্যবহার—এসব কিছুই পড়ানো হয়। এটি শুধু প্রকৌশল নয়, দৈনন্দিন জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় পোশাক থেকে শুরু করে বিশেষায়িত (যেমন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের জন্য জ্যাকেট কিংবা মহাকাশচারীদের স্যুট) সব কিছুই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।

নিত্যনতুন ডিজাইনের ফ্যাশন উদ্ভাবন থেকে শুরু করে যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা তৈরি পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা—এসব কিছুই এ টেকনোলজিতে পড়ানো হয়। এটি নিয়ে পড়ার মাধ্যমে টেক্সটাইল উৎপাদন প্রসেস এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। নতুন কিছু উদ্ভব করতে পারেন, যা বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ

কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে গার্মেন্টস ফিনিশিং করে বায়ার পর্যন্ত পণ্য পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত যতগুলো প্রসেসিং সম্পন্ন হয়, তা-ই হলো টেক্সটাইলের কাজ। যারা এসব কাজ সম্পন্ন করে তাদের বলা হয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ানিংকে প্রধানত চারটি বিষয়ে ভাগ করা হয়েছে—
১. ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং
২. ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং
৩. ওয়েট প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং
৪. অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং
টেক্সটাইল সেক্টরের সব কাজ এ চারটি বিষয়ের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। যা ছাড়া এ সেক্টরকে কল্পনা করা যায় না।

আরও পড়ুন

টেক্সটাইল প্রকৃতি থেকে আমাদের জীবনের বিভিন্ন দরজা খুলে দেয়। যেমন- কাপড় পরিহিত এবং বস্ত্র উৎপাদন, পাট থেকে তৈলক্ষত ও ব্যবহার, জুট থেকে রেশমি ও পুতুল নির্মাণ, তাঁবুর কাপড় ও ফ্যাশন প্রোডাক্ট উৎপাদন, মেডিকেল অ্যাপারেল উৎপাদন ইত্যাদি।

কাপড় পরিহিত এবং বস্ত্র উৎপাদন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ ছাড়া টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো পরিবেশ সংরক্ষণ।

ভবিষ্যৎ কী

বর্তমানে টেক্সটাইল সেক্টর প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মেডিকেলের উপকরণ, অটোমোবাইল, মহাকাশ, জিও টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন সেক্টরে টেক্সটাইলের ব্যবহার বাড়ছে। উন্নত দেশগুলোতে মাইক্রোচিপ থেকে শুরু করে বড় বড় ভবন, সেতু, অস্ত্রের কাঠামো, বুলেটরোধী পোশাক—এসব মিশ্র বস্তু উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ফাইবার দিয়ে তৈরি করা হয়।

আমাদের দেশে যে পরিমাণ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন, তার অর্ধেকও নেই। তাই এ টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করে যে কেউ সহজেই চাকরি পেতে পারেন। এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা সাধারণত দুই ধরনের চাকরি করে থাকেন—
এক. কারখানায় উৎপাদন
দুই. বায়িং হাউজের মার্চেন্ডাইজার।

কর্মসংস্থান কোথায়

টেক্সটাইল মিল, কারখানা, বায়িং হাউজ, মানবসম্পদ, ফ্যাশন ডিজাইনিং, বিপণন—সবখানেই টেক্সটাইল প্রকৌশলীদের জন্য চাকরির সুযোগ আছে। এ ছাড়া কেউ যদি উদ্যোক্তা হতে চান, তার জন্য আছে অপার সুযোগ। দেশে এখনো টেক্সটাইল যন্ত্রের নকশা কেউ করছেন না। যন্ত্রের জন্য বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাদের বানানো যন্ত্রে চলছে উৎপাদন। কোনো যন্ত্র নষ্ট হলে তা-ও বিদেশি কোম্পানি থেকে লোক আনতে হয়। ফলে কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া বিদেশিদের উচ্চ পারিশ্রমিকও দিতে হয়।

এখনো দেশে নিজেদের তৈরি ভালো মানের ‘ডাইস কেমিক্যাল’ নেই। এটিও বিদেশ থেকেই আমদানি করতে হয়। তাই তরুণ উদ্যোক্তারা এ খাতগুলো নিয়েও ভাবতে পারেন। এ ছাড়া দেশের বাইরেও চাকরির ভালো সুযোগ আছে। টেক্সটাইল সেক্টর একটি সাগরের মতো, সাগর সম্পর্কে যেমন আমাদের জানার অনেক বাকি, টেক্সটাইল সেক্টরও ঠিক তেমনই।

কারা পড়বেন

বর্তমানে বিশ্বে জেনারেল শিক্ষার চেয়ে কারিগরি শিক্ষা বেশি জনপ্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। টেক্সটাইল খাতে সফলতার সুযোগ যেমন বেশি; তেমনই চ্যালেঞ্জও আছে। যারা চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন; তারাই টেক্সটাইল নিয়ে পড়তে পারেন। এ টেকনোলজির একটি বড় অংশজুড়ে আছে রসায়ন। যন্ত্রপাতির জন্য প্রয়োজন পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞান। সে হিসেবে রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে ও ভাবতে যাদের ভালো লাগে; তারাই টেক্সটাইল নিয়ে পড়তে পারেন।

কোথায় পড়বেন

যদি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বা ডিপ্লোমা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হতে চান, তাহলে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ বছর মেয়াদি বিএসএসসি ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। দেশের অনেক সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ আছে। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশেও যেতে পারেন।

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন