ভাইভা বোর্ড নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার উপায়

এম এম উজ্জ্বল
চাকরি যেন সোনার হরিণ। পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য মরিয়া ডিগ্রিধারীরা। অনেকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বারবার ভাইভা দিয়েও নির্বাচিত হন না। ভাইভা থেকে চাকরির দূরত্ব মাত্র বিশ কিংবা ত্রিশ মিনিট হলেও চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ভাইভা বোর্ডের কঠিন প্রশ্নে নাস্তানাবুদ হয়ে অনেকে বিধ্বস্ত অবস্থায় বের হয়ে আসেন।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
ভাইভায় সফল হতে ভাইভা বোর্ডকে আপনার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। অবাস্তব হলেও সত্য, ভাইভায় সফল ব্যক্তিরা অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছেন। প্রশ্ন হতে পারে, ভাইভা বোর্ডকে কীভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনা যায়? চলুন জেনে নেওয়া যাক—
পদের আদ্যোপান্ত জানুন
আপনি যে পদের জন্য ভাইভায় বসতে যাবেন, তা বিস্তারিতভাবে গবেষণা করে যাবেন। ওই পদে কী কী কাজ করতে হবে? কাজের চ্যালেঞ্জগুলো কী? সম্ভাবনাসমূহ কীভাবে কাজে লাগিয়ে সফলতা অর্জন করা যাবে ইত্যাদি। এসব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। প্রয়োজনে একই পদে যারা কাজ করছেন—এমন অভিজ্ঞতাদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জ্ঞান রাখুন
যে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার জন্য ভাইভায় অংশগ্রহণ করছেন; সে ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে যাবেন। আপনি ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে আগ্রহী হলে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিস্তারিত তথ্য জানতে হবে। যেমন- দেশের ইকোনোমিক অবস্থা, কমার্শিয়াল ব্যাংকের সংখ্যা, ব্যাংক সম্পর্কে গ্রাহকের আস্থা, ইন্ডাস্ট্রি লিডার, মার্কেট গ্রোথ, ব্যাংকিং পলিসি, রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন, ব্যাংকের আয়-ব্যয়, ব্যাংকিং রেইটসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ জ্ঞান থাকতে হবে।
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা
ভাইভা বোর্ডে ঢোকার আগে অবশ্যই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যেমন- প্রতিষ্ঠানের ভিশন, মিশন, যে পণ্য বা সেবা নিয়ে কাজ করে, বার্ষিক রিটার্ন, গ্রোথ, ক্যাশফ্লো, প্রফিট মার্জিন, ইন্ডাস্ট্রিতে অবস্থান ইত্যাদি জানা আবশ্যক। প্রতিষ্ঠান নিয়ে আপনার সৃজনশীল ভাবনা, অগ্রগতি প্ল্যান ইত্যাদি সাজিয়ে রাখুন। যা জানতে চাওয়ামাত্রই সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতে পারেন।
বিজ্ঞাপন
বোর্ডের মনোভাব বোঝা
ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করুন। তারা প্রতিষ্ঠানে কোন পদের কিংবা কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা, তা আগে থেকেই জানার চেষ্টা করুন। তারা আপনাকে কোন আঙ্গিকে যাচাই করতে চাচ্ছেন, তা অনুধাবন করুন এবং সে অনুযায়ী উত্তর দিন।
কৌশলী উত্তর দিন
লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন আগে থেকে নির্ধারণ করা থাকলেও সাধারণত ভাইভা বোর্ডের প্রশ্ন পূর্ব নির্ধারিত থাকে না। বোর্ড সদস্যরা নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রার্থীর জ্ঞানের গভীরতা, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, বিশ্লেষণ ক্ষমতা কিংবা সমস্যা সমাধানে তৎপরতা যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকেন। যদি ওইসব প্রশ্নের উত্তর এমন কিছু শব্দ বা ক্লুর মাধ্যমে দিতে পারেন, যা থেকে ওই প্রশ্ন সম্পর্কিত আরও গভীরে প্রবেশ করা যায়। তবে আপনার ক্লু থেকেও প্রশ্ন হতে পারে। তাই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় কৌশল অবলম্বন করুন।
বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিন
প্রশ্নকর্তার প্রশ্নে গতানুগতিক উত্তর না দিয়ে উপস্থিত বুদ্ধি ব্যবহার করে বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিন। যেমন- আপনাকে কেন এই পদের জন্য নির্বাচিত করবো? এমন প্রশ্নের জবাবে, আমি এই পদের জন্য যোগ্য না বলে বলতে পারেন ওই পদের জন্য নির্বাচিত হলে আপনি কী কী কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের গ্রোথ নিশ্চিত করবেন। বিশ্বাসযোগ্য কোনো হাইপোথিসিস উপস্থাপন করতে পারেন।
বিজ্ঞাপন
চোখ ও শরীর ঠিক রাখুন
সঠিক আই কন্ট্যাক্ট ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আপনাকে স্মার্টভাবে উপস্থাপন করবে। প্রশ্নকর্তার চোখে চোখ রেখে প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিন। অযাচিতভাবে অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না। মুদ্রাদোষ পরিহার করুন। আপনার নড়াচড়া, কথা বলা, বসা এবং অন্যান্য অঙ্গভঙ্গি যেন মার্জিত হয়; সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
প্রাণবন্ত থাকুন
রানি এলিজাবেথের উক্তি, ‘গুড ফেস ইজ দ্য বেস্ট লেটার অব রিকোমেন্ডেশন’। এটি অবচেতন ভাবেই মানুষকে প্রভাবিত করে। তাই ভাইভা বোর্ডে সব সময় হাসি-খুশি, প্রফুল্ল থাকুন। কোনো প্রশ্নের উত্তরে দ্বিধাগ্রস্ত হবেন না। কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে বলে দিন, ‘সরি, উত্তরটি আমার জানা নেই’।
আত্মবিশ্বাসী হোন
ভাইভা বোর্ডে আত্মবিশ্বাস এগিয়ে রাখবে। আত্মবিশ্বাস নিজের ভেতরের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করবে। যে পদের জন্য আপনি ভাইভা দিচ্ছেন; সেটির জন্য আপনি যোগ্য। তা বোর্ড সদস্যদের কনভিন্স করতে হলে আত্মবিশ্বাসের সাথে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
বিজ্ঞাপন
বিনয়ী তবে ব্যক্তিত্বহীন নয়
ভাইভা বোর্ডে কোনো ক্রমেই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা যাবে না। বিনয়ের সাথে প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের জবাব দিন। কোনো কোনো বিষয়ে দ্বিমত থাকতেই পারে। সে ক্ষেত্রে যুক্তি উপস্থাপন করুন। তবে ব্যক্তিত্বহীন হওয়া যাবে না।
হাল ছাড়বেন না
ভাইভা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা করতে থাকুন। যদি মনে হয় পারছেন না, তবুও হাল ছাড়া যাবে না। কারণ অনেক সময় নেতিবাচক প্রশ্ন বা সিচুয়েশনের মাধ্যমে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতা যাচাই করা হতে পারে। তাই ভাইভা বোর্ড থেকে বের হওয়ার আগপর্যন্ত যথাসম্ভব চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।
লেখক: সহকারী ব্যবস্থাপক, বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড।
বিজ্ঞাপন
এসইউ/জেআইএম
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন