ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

যুক্তরাষ্ট্রের নক্স কলেজে ৩ কোটির বৃত্তি পেলেন সাদ

আনিসুল ইসলাম নাঈম | প্রকাশিত: ০৫:৪২ পিএম, ২১ জুন ২০২৫

সাদ আল আমিনের জন্ম শরীয়তপুরে হলেও বেড়ে ওঠা রাজধানীতে। তিনি তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা যাত্রাবাড়ী থেকে বিজ্ঞান বিভাগে দাখিল ও আলিম পাস করেন। এরপর বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান। সাদ নানা বাধার পর সাফল্যের দেখা পেয়েছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নক্স কলেজ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকার বৃত্তি পেয়েছেন। স্নাতক প্রোগ্রামে পড়বেন ‘ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া’ বিভাগে। তার যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার গল্প ও নতুনদের বৃত্তি পেতে করণীয় সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলুন—
সাদ আল আমিন: আমার জন্ম শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে হলেও বেড়ে ওঠা ঢাকার প্রাণকেন্দ্র যাত্রাবাড়ীতে। একান্ত নীরব কিন্তু স্বপ্নপিয়াসী একটি শিশু ছিলাম আমি। আমাদের পরিবার ছিল একেবারে সাধারণ মধ্যবিত্ত—যেখানে বড় কোনো বিলাস ছিল না, ছিল কেবল মমতা, শিক্ষা আর স্বপ্নের প্রতি ভালোবাসা। বাবা ছিলেন আমার জীবনের প্রথম অনুপ্রেরণা—তিনি নিজে ঢাকা শহরে পড়ালেখা করে পরিবার গড়েছেন। আমি ধীরে ধীরে ভেতরে অন্যরকম এক টান অনুভব করি; চিত্র, শব্দ, দৃশ্য, গল্প—এসব নিয়ে কাজ করার প্রবল আকর্ষণ। ছোট একটা ফোনে ভিডিও বানানো, ইউটিউবে শেখা, কাগজে সিনেমার স্টোরিবোর্ড আঁকা—এসবই ছিল আমার একান্ত নিঃশব্দ শৈশবের গল্প।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জাগো নিউজ: আপনার পড়াশোনা সম্পর্কে বলুন—
সাদ আল আমিন: আমার শিক্ষাজীবনের শুরু তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার যাত্রাবাড়ী শাখায়। সেখান থেকেই দাখিল ও আলিম—দুই স্তরেই বিজ্ঞান বিভাগে পড়েছি। আমি পেরেছি বিজ্ঞান ও সৃজনশীলতা—দুটি ধারাকে একসাথে বহন করতে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির সময়টাই আমার জন্য একটা মোড় ঘোরানো সময়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, সময় হাতে—তখন থেকেই ইউটিউব, অনলাইন কোর্স, আর নিজস্ব প্রজেক্টে কাজ করতে করতে নিজের দক্ষতা বাড়াতে শুরু করি। ডিজাইন, এডিটিং, ভিডিওগ্রাফি—সবকিছুই শেখা হয়েছে হাতেকলমে, ইন্টারনেট আর আত্মবিশ্বাসের সাহচর্যে।

জাগো নিউজ: পড়াশোনা অবস্থায় কী ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে পারদর্শী ছিলেন?
সাদ আল আমিন: আমি বরাবরই পড়াশোনার বাইরে একধরনের শিক্ষা খুঁজেছি—যেটা মানুষ, সমাজ, অনুভূতি আর গল্পের কাছ থেকে পাওয়া যায়। ক্লাস এইটে প্রথম শর্ট ফিল্ম বানাই। সেটা অবশ্য খুব সাদামাটা ছিল কিন্তু তাতেই যেন একটা আগুন জ্বলে ওঠে। এরপর একে একে নিজের মৌলিক গান তৈরি করি, ভিডিও সম্পাদনা শিখি, ডিজাইন নিয়ে কাজ করি। আমার লেখা ও সংগীত—দুটোই যেন আমার হৃদয়ের কথা বলে। পাশাপাশি নিজের নেতৃত্বে গড়ে তুলি ‘মুক্তির ঘণ্টা’—একটি সামাজিক উদ্যোগ যা, তরুণদের উন্নয়ন ও সচেতনতামূলক কাজ নিয়ে কাজ করে। এ সংগঠনের মাধ্যমেই শিখেছি কীভাবে সমাজকে ছুঁতে হয়, মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জাগো নিউজ: আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার স্বপ্ন দেখলেন কখন থেকে?
সাদ আল আমিন: আলিম প্রথম বর্ষে পড়াকালেই আমার মনে প্রশ্ন জাগে—আমার পথ কি শুধুই প্রতিষ্ঠিত কোনো এক ছকে বাঁধা থাকবে? নাকি আমি নিজেই একটি নতুন ছক তৈরি করতে পারি? যখন দেখলাম, আমার আশেপাশের বন্ধুরা ভিন্ন ভিন্ন রাস্তায় পা বাড়াচ্ছে, আমি নিজেও ভাবলাম—আমার স্বপ্নটা যদি একটু বড় হয়? যদি আমি এমন জায়গায় পড়াশোনা করতে পারি; যেখানে আমার সৃজনশীলতাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়? সেই থেকেই শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার স্বপ্ন দেখা। তখনই বুঝে যাই—এ স্বপ্ন সহজ হবে না কিন্তু অসম্ভবও নয়।

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রের নক্স কলেজে পড়ার সুযোগ পাওয়ার গল্প শুনতে চাই—
সাদ আল আমিন: যাত্রাটা সহজ ছিল না কিন্তু প্রতিটি ধাপ ছিল অভিজ্ঞতায় পূর্ণ। প্রথমে নিজের সব কাজ গুছিয়ে রাখি—ভিডিও প্রজেক্ট, গান, সামাজিক কাজ, নেতৃত্বগুণ, ফটোগ্রাফি—যা-ই করেছিলাম; তার সবটা মিলিয়ে একধরনের ‘ইউনিক প্রোফাইল’ তৈরির চেষ্টা করি। এরপর ‘কলেজ এসে’ লিখি—সেটা যেন আমার জীবনের গল্পের সংক্ষিপ্ত আত্মকথা। এসে’র পাশাপাশি পোর্টফোলিও, রিকমেন্ডেশন লেটার আর ফিন্যান্সিয়াল এইড ফর্ম জমা দিই। এরপর ইন্টারভিউ হয়। সেখানেও আমি নিজের কথা, নিজের ভাবনা খোলাখুলি বলি। এরপর গত বছরের নভেম্বরে অফার লেটার পাই আর চলতি বছরের এপ্রিলে হাতে পাই ভিসা। তখন মনে হয়েছিল, যেন আমার জীবনের প্রথম বিজয় পতাকা ওড়ানো হলো।

বিজ্ঞাপন

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রের নক্স কলেজে বৃত্তি পেয়ে কেমন লেগেছে?
সাদ আল আমিন: শুধু ‘ভালো লেগেছে’ বললে সেটা অনেক কম বলা হবে। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির একটি। আমি এমন শিক্ষার্থী—যে কখনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দেইনি। যাকে অনেকে শুধু ‘মাদ্রাসার ছেলে’ বলে চেনেন। সেই আমাকে আজ আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরেছে এ স্কলারশিপ। এটি আমার গল্প, আমার সাহস, আমার সংগ্রাম—সবকিছুর প্রতি এক ধরনের স্বীকৃতি।

জাগো নিউজ: বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য আবেদন করার পদ্ধতি কী?
সাদ আল আমিন: প্রথম ধাপে আপনি যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে চান; সেগুলোর ওয়েবসাইট ভালোভাবে ঘেঁটে দেখতে হবে—তাদের ডেডলাইন, যোগ্যতা ও স্কলারশিপের ধরন। এরপর টোফেল বা আইইএলটিএস বা ডুলিঙ্গো স্কোর, স্যাট (যদি প্রয়োজন হয়), অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, পার্সোনাল স্টেটমেন্ট, রিকমেন্ডেশন লেটার ইত্যাদি গুছিয়ে নিতে হবে। অনেক সময় সিএসএস প্রোফাইলের মতো ফিন্যান্সিয়াল ডকুমেন্টও লাগে। আবার কিছু কিছু ইউনিভার্সিটি আলাদাভাবে স্কলারশিপ ফর্ম চায় না—তারা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেই বিবেচনা করে। সঠিক প্রস্তুতি, সময়জ্ঞান আর আত্মবিশ্বাস—তিনটাই সবচেয়ে জরুরি।

জাগো নিউজ: আবেদনের ক্ষেত্রে কী কী কাগজপত্র লাগবে?
সাদ আল আমিন: বৈধ পাসপোর্ট, অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, ভাষা দক্ষতার প্রমাণ টোফেল বা আইইএলটিএস বা ডুলিঙ্গো স্কোর, স্যাট স্কোর (যদি চায়), পার্সোনাল স্টেটমেন্ট বা এসে, ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট, পোর্টফোলিও এবং সহশিক্ষা কার্যক্রমের প্রমাণপত্র (যদি থাকে)। আবেদনের ক্ষেত্রে এই কাগজপত্রগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

জাগো নিউজ: এই বৃত্তিতে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে?
সাদ আল আমিন: কলেজ থেকে বছরে ৫৮ হাজার ডলার করে ৪ বছরে সর্বমোট ২৩২ হাজার ডলার স্কলারশিপ দেবে। একত্রে যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ কোটি। এ ছাড়া স্কলারশিপের আওতায় টিউশন ফি প্রায় পুরোটাই কভার করা হয়। শিক্ষার্থীরা চাইলে ক্যাম্পাসে অন-ক্যাম্পাস জব করতে পারেন। পাশাপাশি কারিকুলার প্র্যাক্টিক্যাল ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে কাজ শেখার সুযোগও আছে। গ্র্যাজুয়েশনের পর অপশনাল প্র্যাক্টিক্যাল ট্রেনিংয়ের (ওপিটি) মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজের অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগও থাকবে। এ সুযোগ শুধু আজকের জন্য নয়—আমার ভবিষ্যৎ পথ তৈরির জন্য বিরাট পাথেয়।

জাগো নিউজ: যারা যুক্তরাষ্ট্রে বৃত্তি নিয়ে পড়তে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
সাদ আল আমিন: নিজেকে খুঁজে বের করুন—আপনার গল্পটা কী? আপনি কে? কাকে প্রতিনিধিত্ব করেন? আপনার কমিউনিটির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কী? শুধু নম্বর নয়—আপনার স্বপ্ন, চিন্তা আর প্রভাবই আপনাকে আলাদা করবে। সবাইকে অনুকরণ না করে নিজের ভেতরের স্বর খুঁজে বের করুন। বিশ্বাস রাখুন—আপনার পথ আপনি নিজেই তৈরি করতে পারবেন। একটি গল্প লিখুন—যেটা কেউ আগে লেখেননি। কারণ সত্যি বলতে—আপনার মতো আর কেউ নেই।

এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন