চাকরি ও ক্যারিয়ারের মধ্যে পার্থক্য কী?
মুহাম্মাদ রাহাতুল ইসলাম
শিক্ষার্থী কিংবা ফ্রেশারদের কাছে চাকরি আর ক্যারিয়ার মানে একই। কিন্তু বাস্তবে উভয়ের মধ্যে আছে ভীষণ তফাৎ। জীবনের শুরুতে যখন কেউ প্রথমবার কোনো কর্পোরেট অফিসে প্রবেশ করেন অথবা কাজ শুরু করেন, তখন তারা প্রায়ই ‘চাকরি’ আর ‘ক্যারিয়ার’ শব্দ দুটিকে সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করেন। তাদের কাছে একটি চাকরি পাওয়া মানেই যেন ভবিষ্যতের দরজা খুলে যাওয়া।
তবে দুটি শব্দের তাৎপর্য এবং প্রভাব নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়, এর মধ্যকার পার্থক্য কেবল শাব্দিক নয় বরং জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার দিক থেকেও সুদূরপ্রসারী। সহজ কথায়, চাকরি হলো স্বল্পমেয়াদী কাজ বা নির্দিষ্ট পদ, যা মূলত বেতন বা মজুরি উপার্জনের জন্য করা হয়। অন্যদিকে ক্যারিয়ার হলো দীর্ঘমেয়াদী পেশাগত পথ, যা একাধিক চাকরি, অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার সমন্বয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলে।
পার্থক্যটি জানা সবার জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি নিজের কাজ ও ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। চাকরি এবং ক্যারিয়ারের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো:
১. চাকরি মূলত স্বল্পমেয়াদী হয়। যেখানে ফোকাস থাকে আজকের কাজ সুন্দরভাবে শেষ করা এবং মাস শেষে বেতন পাওয়া। ক্যারিয়ার একটি দীর্ঘমেয়াদী পথ বা যাত্রা। যেখানে ফোকাস থাকে ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান; সেখানে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা।
২. চাকরির প্রধান লক্ষ্য হলো টাকা উপার্জন করে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানো। ক্যারিয়ারের প্রধান লক্ষ্য হলো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা অর্জন করে ক্রমান্বয়ে উন্নতি লাভ করা। টাকা এখানে একটি ফল মাত্র। ব্যক্তির ফোকাস থাকে কীভাবে একই সেক্টরে আরও ভালোভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়।
আরও পড়ুন
বিদেশে উচ্চশিক্ষায় কভার লেটারের গুরুত্ব
বিদেশে পড়তে যাওয়ার পর যেসব বিষয় জানা জরুরি
৩. চাকরির অগ্রগতি সীমিত বা নির্দিষ্ট একটি পদোন্নতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। এক চাকরি থেকে আরেক চাকরি সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে পারে। যার মধ্যে কোনো ধারাবাহিকতা না-ও থাকতে পারে। যেমন- কেউ মার্কেটিং থেকে কন্টেন্ট রাইটিংয়ে চলে যেতে পারেন। ক্যারিয়ারে প্রতিটি চাকরি একটি পরিকল্পিত ধাপ। এটি একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে উচ্চতর পদে বা বিশেষজ্ঞ হওয়ার অবস্থানে পৌঁছানোর ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
৪. চাকরিতে সাধারণত ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণ বা দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয় না। যতটা প্রয়োজন; ততটাই করা হয়। ক্যারিয়ারের জন্য প্রচুর ব্যক্তিগত বিনিয়োগ যেমন- উচ্চতর ডিগ্রি, প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। যা একজন ব্যক্তিকে একই সেক্টরে আরও উচ্চতায় নিয়ে যায়।
৫. চাকরিতে মানসিকতা থাকে—‘আমাকে যা যা করতে বলা হয়েছে; তা ভালোভাবে করে দিলেই হলো’। অর্থাৎ ন্যূনতম চাহিদা পূরণের দিকে ঝোঁক থাকে। ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে মানসিকতা থাকে—‘আমি কীভাবে ক্ষেত্রটিতে একজন বিশেষজ্ঞ হতে পারি?’ অর্থাৎ কোম্পানির প্রত্যাশা যা-ই থাকুক, একই কাজ আরও ভালোভাবে পেশাদারিত্বের সাথে করার এবং শেখার আগ্রহ থাকে।
শিক্ষার্থী বা ফ্রেশার হিসেবে ব্যক্তির উচিত—একটি চাকরি খোঁজার চেয়ে শক্তিশালী ক্যারিয়ার পথ তৈরি করার দিকে মনোযোগ দেওয়া। শুরুতেই শুধু বেতনের দিকে না তাকিয়ে দেখুন কাজটি আপনাকে ভবিষ্যতে কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ারের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে কি না? এখান থেকে নতুন কী দক্ষতা শিখতে পারবেন? প্রতিটি সিদ্ধান্তই যেন দীর্ঘমেয়াদী পেশাগত লক্ষ্যকে সমর্থন করে, সে বিষয় মাথায় রাখা। চাকরি হলো সাময়িক প্রয়োজন কিন্তু ক্যারিয়ার হলো জীবনব্যাপী অর্জন।
লেখক: কলামিস্ট ও সেচ্ছাসেবী।
এসইউ/এএসএম