গুলশানে চাঁদাবাজি
আদালতে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের তোপের মুখে বৈষম্যবিরোধী ৪ নেতা
আদালতে বৈষম্যবিরোধী সেই ৪ নেতার দিকে তেড়ে যান বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা/ছবি: জাগো নিউজ
রাজধানীর গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেই চার নেতার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এদিন আদালতে তোলার সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়েন চার নেতা।
রোববার (২৭ জুলাই) বিকেলে আসামিদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা তাদের দিকে তেড়ে যান। আইনজীবীরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে নানান রকম স্লোগান দিতে থাকেন। একই সঙ্গে আসামিদের লক্ষ্য করে ‘জুলাই ব্যবসার দিন শেষ’; ‘জুতা মারো তালেতালে-চাঁদাবাজের দুই গালে’; ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ স্লোগান দেন।
গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে করা মামলায় আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে তোলা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমান তাদের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামিদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিষ্কৃত তিন ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) বহিষ্কৃত এক নেতা রয়েছেন। তারা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদাব, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ।
এদিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন।
শুনানিতে তিনি বলেন, আসামিরা তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। এনসিপি নামে নতুন সংগঠন আমাদের ছোট ভাইরা করেছে। এদের মধ্যে কিছু লোক চাঁদাবাজি করে সেই চাঁদাবাজির দায় বিএনপির ওপর চাপাচ্ছে। আর এরা বলে ‘চাঁদা তোলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে’। এদের রিমান্ডে দিলে এনসিপির ভাবমূর্তি ফিরে আসবে। শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। হাজার হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে বৈষম্যহীন স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, এরা ন্যাশনাল চিলড্রেন পার্টি করেছে। আগে এদের খাওয়ার টাকা ছিল না, এখন পাজেরো নিয়ে ঘোরে। এই চাঁদাবাজির মূল হোতাদের চিহ্নিত করার জন্য আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।’
এরপর বিচারক আসামিদের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। পরে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় আসামিদের আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়া হয়। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ফের স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে শনিবার (২৬ জুলাই) চাঁদাবাজির সময় রাতে ওই বাসা থেকে আসামিদের আটক করা হয়। আটকের পর গতকালই সংগঠন দুটি থেকে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন পাঁচ যুবক। তিনি পলাতক থাকায় তার স্বামীর কাছে এ চাঁদা দাবি করা হয়। কয়েকদিন আগে তারা ওই বাসায় গিয়ে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসেন। গতকাল রাত ৮টার দিকে তারা আবার ওই বাসায় যান স্বর্ণালংকার আনতে। সেসময় বাড়ির লোকজন পুলিশকে খবর দিলে রিয়াদসহ সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় শাম্মি আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর গুলশান থানায় ছয়জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৭ জুলাই আসামি আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বাদীর গুলশান-২ এর বাসায় হুমকি-ধমকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার চাঁদা দাবি করেন। অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে আওয়ামী লীগের ও স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার করানোর হুমকি দেন। ভয়ে তাদের ১০ লাখ টাকা দেন। পরে ১৯ জুলাই পুনরায় বাকি ৪০ লাখ টাকা জন্য আসেন। সেদিনও হুমকি দিয়ে চলে যান। এরপর গত ২৬ জুলাই চাঁদা নিতে এলে গুলশান থানা পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে। তবে কাজী গৌরব অপু পালিয়ে যান।
এমআইএন/ইএ/এমএস