ফ্লাইট এক্সপার্টের কর্মকর্তাদের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই: আদালত
ফ্লাইট এক্সপার্টের তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত/ ফাইল ছবি
উড়োজাহাজের অনলাইন টিকিট বুকিং প্ল্যাটফর্ম ফ্লাইট এক্সপার্টের বিরুদ্ধে গ্রাহকের ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (৩ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
এদিন জামিন শুনানির সময় বিচারক আসামিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের তো এখানে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। যেহেতু আপনারা দীর্ঘদিন চাকরি করছেন, এ বিষয় তো জানার কথা।
এদিন বিকেলে আসামিদের আদালতে হাজির করে তাদের কারাগারে রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সাদ্দাম হোসেন। আসামিদের মধ্য সাঈদ আহমেদের পক্ষে আইনজীবী মোফাজ্জল হোসেন ফারুক এবং আসামি কে এম সাদাত হোসেন ও সাকিব হোসেনের পক্ষে মো. রবিউল ইসলাম জামিন আবেদন করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মোফাজ্জল হোসেন ফারুক বলেন, এ মামলায় আমরা ভুক্তভোগী। মূল আসামিদের পলায়নের পর আমরা জিডি করেছি। আমাদের বেতন না দিয়ে চলে গেছে। এরপরও আমাদের আসামি করা হয়েছে।
সাদাত ও সাকিবের পক্ষে আইনজীবী রবিউল ইসলাম বলেন, চার কোটি টাকার অভিযোগ তো কোম্পানির বিরুদ্ধে। আমার (আসামিদের) দোষটা কোথায়? তারাতো সেখানে চাকরি করেন। কোম্পানির (বেতনের) অতিরিক্ত কোনো টাকাইতো তারা নেননি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আবজাল হোসেন মৃধা বলেন, এ মামলার আসামি এজেন্সির হেড অব ফিন্যান্স সাকিব হোসেনের কাছেই কোম্পানির সব টাকা আসে এবং যায়। সেখান থেকে খরচ করা হয়েছে। চিফ কমার্সিয়াল অফিসার সাঈদ আহমেদ ও চিফ অপারেটিং অফিসার এ কে এম সাদাত হোসেন প্রতিষ্ঠানের অস্বাভাবিক আচরণের কথা জানতেন। এই তিনজন ও পলাতক দুই আসামিকে ভুক্তভোগীরা টাকা দিয়েছেন। এক হাজারেরও বেশি মানুষের হজ ও ওমরার ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা সাবমিট করা। এরাই জানে এক নম্বর ও দুই নম্বর আসামি কোথায় আছেন? এদের ছেড়ে দেওয়া হলে ভুক্তভোগীদের টাকা পেতে সমস্যা হবে।
পরে বিচারক জিজ্ঞেস করেন, আপনারা কত বছর ধরে এখানে কর্মরত আছেন? এসময় একজন জবাব দেন, ৮ বছর ধরে।
- আরও পড়ুন
- আস্থার সংকটে প্লেনের টিকিট ব্যবসা
- ফ্লাইট এক্সপার্টের এমডিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ৩
পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ আসামিরা সব জানতেন। সুযোগের অপেক্ষায় এরা পলায়ন করতে পারেননি। এদের কাছে হাজার হাজার কোটি টাকা আছে। জামিন পেলে ভুক্তভোগীরা টাকা পাবে না।
পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক বলেন, টাকা কার কাছে দেওয়া আছে, সেটা এজাহারে বলা আছে। আমিতো (আসামি) টাকা আত্মসাৎ করিনি। আমি যদি টাকা আত্মসাৎ না করি, তাহলে আমাকে কেন ভুক্তভোগী হতে হবে।
পরে বিচারক বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এটাতো একদিনে হয়নি। দীর্ঘদিন প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। আপনাদের তো এখানে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। যেহেতু আপনারা দীর্ঘদিন চাকরি করছেন, এ বিষয়তো জানার কথা। পরে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ফ্লাইট এক্সপার্ট। এতে ভোগান্তিতে পড়েন টিকিট বিক্রেতা এজেন্সি ও হাজারও গ্রাহক। তারা অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের জন্য অর্থ পরিশোধ করেছিলেন। ফ্লাইট এক্সপার্টের একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে মালিকপক্ষ দেশ ছেড়েছে। এতে গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের কোটি কোটি টাকা ফেরত পাওয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী বাদী বিপুল সরকার আসামিদের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৭৯ হাজার টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন।
২০১৭ সালের মার্চে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ফ্লাইট এক্সপার্ট। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশন (কক্ষ সংরক্ষণ), ট্যুর প্যাকেজ ও ভিসা প্রক্রিয়াকরণের মতো বিভিন্ন সেবা দিত তারা। বিশেষ করে কম খরচে সহজে টিকিট বুকিংয়ের সুবিধার কারণে প্ল্যাটফর্মটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ফ্লাইট এক্সপার্ট নিজেরা সরাসরি উড়োজাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে টিকিট না নিয়ে দুটি মধ্যস্থতাকারী এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করতো। এখন ওই দুটি এজেন্সি নিজেদের কেনা টিকিটগুলো রিফান্ড (ফেরত) করে অর্থ তুলে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
এমআইএন/কেএসআর/জিকেএস