‘এক মুজিব লোকান্তরে, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে’- আদালত চত্বরে পলক
আরও এক হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো জুনাইদ আহমেদ পলককে, ছবি: জাগো নিউজ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে মামলায় সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে আজ আদালতে তোলা হয়। আরও এক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তাকে। আদালত প্রাঙ্গণে পলক বলেন, এক মুজিব লোকান্তরে, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে।
বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে সাবেক দুই মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ ও আতিকুল ইসলাম এবং জুনাইদ আহমেদ পলককে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাদের সিএমএম হাজতখানায় রাখা হয়। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে তিনজনের হাতে হাতকড়া, গায়ে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরিয়ে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে এজলাসে ওঠানো হয়। এজলাসে ওঠানোর আগে পলক এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এক মুজিব লোকান্তরে, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে। এরপর এজলাসের দিকে হাঁটতে থাকেন তিনি।
এরপর সকাল ১০টার দিকে বিচারক এজলাসে ওঠেন। পলকের মামলার শুনানির সময় জিআরওকে বিচারক বলেন, ঘটনা কত তারিখের, কত নম্বর আসামি। কেন এই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। এসময় রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবী বলেন, এই মামলায় তদন্তে প্রাপ্ত আসামি পলক।
এরপরে পলকের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মো. আকতারুজ্জামান গ্রেফতার দেখানোর শুনানিতে বলেন, গত বছরের ১৯ জুলাই ট্রাক ড্রাইভার মো. হোসেন হত্যা মামলার ঘটনায় জড়িত মর্মে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো একান্ত প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:
- আরও এক হত্যা মামলায় গ্রেফতার পলক
- সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র কিরণ রিমান্ডে, আতিকুল নতুন মামলায় গ্রেফতার
- সাবেক আইজিপি মামুন ট্রাইব্যুনালে
রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন পলককে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানোর পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, এই মামলায় আসামির নাম তদন্তে এসেছে। গত বছরের ১৯ জুলাই সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমানোর জন্য আন্দোলনকারীদের হত্যা করেছে আসামিরা। আন্দোলনকারীদের হত্যা করে মোহাম্মদপুরে গণকবর দিয়েছে। ঘটনার আরও বিস্তারিত জানার জন্য এই মামলায় তাকে গ্রেফতারের প্রার্থনা করছি। শুনানি শেষে আদালত তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো আবেদন মঞ্জুর করেন।
এরপর উত্তরা পূর্ব থানার উপপরিদর্শক মো. নাজমুল সাকীব আসামি কিরণের সাতদিনের রিমান্ড এবং আতিকুলকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন আসামি কিরণের সাতদিনের রিমান্ড এবং আতিকুলকে গ্রেফতার দেখানোর পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, আসামিরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করেছে। ঘটনা আরও বিস্তারিত জানার জন্য আসামি কিরণের সাতদিনের রিমান্ড ও আতিকুলকে গ্রেফতার দেখানোর প্রার্থনা করছি।
অন্যদিকে, আসামিদের পক্ষের আইনজীবী মোরশেদ আলম শাহীন রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে জেলহাজতে আটক রয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিন চাচ্ছি। শুনানি শেষে আদালত কিরণের তিনদিনের রিমান্ড এবং আতিকুলকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
পলকের মামলা সূত্রে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই মালবাহী ট্রাক গাবতলীতে পার্কিং করে ভাড়া বাসায় যাচ্ছিলেন ড্রাইভার মো. হোসেন। দুপুর আড়াইটার দিকে চাঁদ উদ্যানের হোসেন মার্কেটের এলাকায় পৌঁছালে আসামিদের ছোড়া গুলি বুকের বাম পাশ ছিদ্র করে ঢুকে যায়। পরদিন রাত ৩টায় ছেলের মরদেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন তার স্বজনরা। এ ঘটনায় নিহতের মা রীনা বেগম গত ৩১ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলাটি করেন।
কিরণ ও আতিকের মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৮ জুলাই ইশতিয়াক মাহমুদ নামের এক ব্যবসায়ীসহ অন্যরা কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময় তাপসসহ অন্য আসামিরা ব্যাপক দাঙ্গা–হাঙ্গামা সৃষ্টি করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা, মারধর ও গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় ইশতিয়াকের পেটে গুলি লাগে। এ ঘটনায় গত বছরের ২৯ অক্টোবর ইশতিয়াক মাহমুদ বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
এমআইএন/এসএনআর/জেআইএম